দারিদ্র্য বিমোচনে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প

লেখক : ড. মো. হুমায়ুন কবীর ডেপুটি রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

সরকারের অগ্রাধিকারে থাকা একটি প্রকল্প হলো ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতারোহণের একেবারে সর্বাগ্রেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গ্রহণ করা হয়েছিল এ প্রকল্পটি। শেখ হাসিনার সরকারের মূল লক্ষ্য হলো দারিদ্র্য বিমোচন করা। সে লক্ষ্যে তিনি ধীর পদক্ষেপে এগিয়েও চলেছেন নিরন্তর। যার ফলে বর্তমান বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচনে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। সর্বশেষ হিসেবে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৭.১১ শতাংশে এবং মাথাপিছু আয় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পূর্বের হিসাব থেকে এক ডলার কমে এখন ১৪৬৫ মার্কিন ডলার (কিছুদিন আগে প্রকাশিত হয়েছিল ১৪৬৬ ডলার)। আর এ কারণেই এবছরের বিশ্ব দারিদ্র্য বিমোচন দিবসের থিম কান্ট্রি ছিল বাংলাদেশ। সে জন্য বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম এসে দিবসটি বাংলাদেশে পালন করে গেছেন এবং তিনি তাঁর নিজের চোখে বাংলাদেশের উন্নয়নের যাদু-কৌশল দেখে মুগ্ধ হয়ে ফিরে গেছেন। আর এও বলেছেন যে, অল্প মাথাপিছু আয়ে কীভাবে সফল দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শিক্ষা বিশ্বের অন্যান্য দেশ গ্রহণ করতে পারে। এসব সফলতার পিছনে সরকার কর্তৃক গৃহীত একটি বাড়ি একটি খামার কর্মসূচির অনেক অবদান রয়েছে। সেই সফল ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পটির বিগত দিনের সফলতার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সামনের দিনে দারিদ্র্য বিমোচনে আরো কার্যকর পদক্ষেপ রাখার জন্য ২০২০ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছেন। সম্প্রতি ৮ হাজার ১০ কোটি ২৭ লাখ টাকার এ প্রকল্পটি তার তৃতীয় মেয়াদের জন্য একনেকে অনুমোদন লাভ করেছে। আগের অনুমোদিত প্রকল্পের মেয়াদান্তে তা সব প্রতিষ্ঠিত ‘পল্লী সঞ্চয়ী ব্যাংকের’ সঙ্গে মার্জ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। আর এ প্রকল্পটির উন্নয়ন ধারা যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য সরকারের তরফ থেকে আগেই তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক নামে একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স নিয়ে দেশের ১০০টি উপজেলায় ব্যাংকটির ১০০টি শাখা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেছেন। অবশিষ্ট ৩৮৫টি উপজেলায় শাখা খোলার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সেজন্য প্রকল্প শেষ হলেই রীতি অনুযায়ী প্রকল্পের সকল অ্যাসেট-লায়াবিলিটি সে ব্যাংকেই স্থানান্তরিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা আরো চারবছর অর্থাত্ ২০২০ সাল পর্যন্ত বর্ধিত হওয়ায় তখনই সেগুলো ব্যাংকে স্থানান্তরিত হবে। দেশের ৬৪টি জেলার ৪৯০টি উপজেলার ৪ হাজার ৫৫০টি ইউনিয়নে ৪০ হাজার ৯৫০টি ওয়ার্ডে প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে। এ প্রকল্পটির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে একটু সহজ হচ্ছে, কারণ এটি একটি সমন্বিত খামার উন্নয়ন প্রকল্প। এর মাধ্যমে একটি বাড়িতে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়ে থাকে। নির্বাচিত একটি বাড়ির জমিতে বিভিন্ন শাক-সবজি, ধানসহ অন্যান্য ফসল, পুকুরে মাছ, গোয়ালে গরু, ঘরে ছাগল, হাঁস-মুরগি, বাড়ির চারপাশে বনজ, ফলদ, ঔষধি গাছপালা রোপণ ইত্যাদি প্রত্যেকটি সেক্টরে সহযোগিতা দেওয়া হয়ে থাকে। সেখানে এগুলোর পাশাপাশি বাড়িতে ছেলেমেয়েদের জন্য লেখাপড়া, বাড়িতে বেকার পুরুষদের জন্য ছোট-খাটো ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে এবং মহিলাদের জন্য তাদের উপযোগী কাজ যেমন সেলাই, বাঁশ-বেতের কাজসহ অন্যান্য আরো অনেক ধরনের আয় বর্ধনমূলক কাজে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক সময় এসব প্রকল্পের সুষ্ঠু তদারকির অভাবে মাঠ পর্যায়ে কিছুটা বিশৃঙ্খলা কিংবা অনিয়ম-দুর্নীতি দেখা দিত শোনা যায়। এগুলো আবার কোনো একটি ভালো কাজের সুনামের জন্য সুফল বয়ে আনে না। আমরা জানি, এ প্রকল্পের সম্পূর্ণ অর্থায়ন হলো সরকারের নিজস্ব তহবিলের। কাজেই সরকারের রাজস্বের অর্থ যেন কোনো অবস্থাতেই মিসইউজ না হয় সেদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। এখন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনে নেতা-কর্মীদের হতদরিদ্রের তালিকা করতে বলেছেন। এসব প্রকল্প সঠিকভাবে কাজ করতে পারলে আগামীতে আর দেশে দরিদ্র মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমরা এর সাফল্য কামনায় আগামীর সেই প্রত্যাশাতেই রইলাম।