দেশি উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বড় বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে বিদেশি অনেক কোম্পানি। জমি, গ্যাস ও বিদ্যুতের নিশ্চয়তার কারণে অর্থনৈতিক অঞ্চলের দিকে ঝুঁকছে এসব প্রতিষ্ঠান।
বিনিয়োগে আগ্রহী বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান ইথান কোম্পানি, চীনের জিঝিয়াং জিনদুন হোল্ডিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড, সিঙ্গাপুরের ইন্টার-এশিয়া গ্রুপ পিটিই লিমিটেড এবং যুক্তরাজ্যের এনআরবি ইনভেস্টরস গ্রুপ লিমিটেড। দেশীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিনিয়োগের নতুন প্রস্তাব দিয়েছে সামিট করপোরেশন লিমিটেড, রানার গ্রুপ, বিএসআরএম গ্রুপ এবং ওমেরা ফুয়েলস লিমিটেড। এ ছাড়া আটটি শিল্প গ্রুপ অর্থনৈতিক স্তরে অবকাঠামো উন্নয়নে এরই মধ্যে প্রি-কোয়ালিফিকেশন বা প্রাক-যোগ্যতা লাইসেন্স সংগ্রহ করেছে। এগুলো হলো_ এ কে খান গ্রুপ, আবদুল মোনেম লিমিটেড, আমান গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, বে গ্রুপ, মাইশা ও ইউনাইটেড এবং বসুন্ধরা গ্রুপ।
অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান সমকালকে বলেন, ছয় শতাংশের বৃত্ত ভেঙে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাত শতাংশ ছাড়িয়েছে। চীন এবং বিশ্বব্যাংকের প্রধানের সফরে বিনিয়োগকারীরা ইতিবাচক বার্তা দিয়েছেন। এর ওপর রিজার্ভ বাড়ছে এবং অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে সামিট করপোরেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিজ খান সমকালকে মোবাইল ফোনে জানান, অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগে সামিট কাজ শুরু করেছে। বিনিয়োগের জন্য পরবর্তী কার্যক্রম চলছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বিনিয়োগের জন্য উদ্যোক্তারা যেসব সুযোগ-সুবিধা চান তা অর্থনৈতিক অঞ্চলে রয়েছে। এখানে বিনিয়োগে শুল্কমুক্ত সুবিধা, নীতি সহায়তা, ইউটিলিটি এবং সার্বিক অবকাঠামো সুবিধা রয়েছে। আবার বিনিয়োগকারীদের জন্য ওয়ান স্টপ সেবাও চালু করার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এসব কারণে অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘিরে দেশি-বিদেশি কোম্পানির আগ্রহ বাড়ছে।
আমেরিকান ইথান কোম্পানি কক্সবাজারের মাতারবাড়ী এলাকার মহেশখালী-৩ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। ২০০ একর জমির ওপর তারা বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে। দ্বৈত জ্বালানির এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এতে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে।
চীনের জিঝিয়াং জিনদুন হোল্ডিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। প্রতিষ্ঠাটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৩০০ একর জমির ওপর বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে চায়। তারা দুই হাজার ৩০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে। সিঙ্গাপুরের ইন্টার-এশিয়া গ্রুপ পিটিই লিমিটেড এক হাজার ৩০০ একর জমির ওপর কক্সবাজারের সাবরাং টুরিজম পার্কের উন্নয়ন করবে। যুক্তরাজ্যের এনআরবি ইনভেস্টরস গ্রুপ তিনটি এগ্রো প্রসেসিং প্ল্যান্ট নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। ২৫ একর জমির ওপর মৌলভীবাজারের শ্রীহট্টতে এ কারখানা নির্মাণ করা হবে। সামিট করপোরেশন মীরসরাইয়ে এনার্জি হাব করার উদ্যোগ নিয়েছে। ১০০ একর জায়গায় বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করবে প্রতিষ্ঠানটি। বিএসআরএম গ্রুপ বিদ্যুৎ এবং স্টিল প্ল্যান্ট নির্মাণে ৬০০ একর জমি চেয়েছে। রানার গ্রুপ একই অর্থনৈতিক অঞ্চলে বাস এবং ট্রাকের অ্যাসেম্বেলিং প্ল্যান্ট এবং থ্রি হুইলার প্ল্যাট লুব্রিক্যান্ট, গ্রিজ প্ল্যান্ট, এলপিজি বোতলিং কারখানা করবে। ১২৫ একর জমির ওপর এ কারখানা করবে।
রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগে সুযোগ-সুবিধার বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বেজার কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বাস-ট্রাকের বডি নির্মাণসহ আরও কয়েকটি খাতে বিনিয়োগের জন্য এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু বেজার পক্ষ থেকে জমি বরাদ্দের বিষয়টি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।
আগামী ১৫ বছরের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। অর্থনীতির চাকা গতিশীল করতে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় এ ধারণা বাস্তবায়নে রয়েছে সরকারের সর্বোচ্চ তৎপরতা। আশির দশকে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ঈর্ষণীয় উন্নতি করেছে চীন। একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড ও ভারত।