‘এতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শুধু তালাক বা দেনমোহরজনিত দ্বন্দ্ব মীমাংসা হচ্ছে না, বরং অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততাও বেড়েছে। একইসঙ্গে সুবিধাবঞ্চিত নারীরা প্রাপ্ত ক্ষতিপূরণ বিভিন্ন উত্পাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করছেন।’
বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ন্যায়বিচার পাচ্ছে। দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের ন্যায়বিচারের অধিকার নিশ্চিত করতে ব্র্যাকের ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি’ (এডিআর) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শুধু তালাক বা দেনমোহরজনিত দ্বন্দ্ব মীমাংসা হচ্ছে না, বরং অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততাও বেড়েছে। ব্র্যাক জরিপের সার্বিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, পারিবারিক নির্যাতনের শিকার নারীদের অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা ১৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ২২ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এর মূল কারণ হচ্ছে সচেতনতার মাধ্যমে নিজের গুরুত্ব উপলব্ধি ও উন্নত জীবনযাপন সম্পর্কে ধারণা লাভ করা। একই সঙ্গে সুবিধাবঞ্চিত নারীরা প্রাপ্ত ক্ষতিপূরণ বিভিন্ন উত্পাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করছেন।
গতকাল শনিবার ডেইলি স্টার সেন্টারে আয়োজিত ‘ন্যায়বিচারের সুযোগ ও টেকসই আইন সহায়তা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে গবেষণা প্রবন্ধে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক ও ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার যৌথভাবে এ বৈঠকের আয়োজন করে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিচারপতি সৈয়দ রিফাত আহমেদ বলেন, আইনী সহায়তা শক্তিশালী করতে নীতি-নির্ধারকদের আরো সম্পৃক্ত করতে হবে। এর পাশাপাশি তিনি সরকারের এ সংক্রান্ত যে বিভিন্ন সহায়তা কার্যক্রম আছে তা প্রান্তিক মানুষকে জানানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
ব্র্যাকের মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচি নিয়ে সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরে সংশ্লিষ্ট কর্মসূচি প্রধান ব্যারিস্টার সাজেদা ফারিসা কবির বলেন, দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করতে ব্র্যাকের মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা কর্মসূচি কাজ করছে।
‘ন্যায়বিচারের সুযোগ ও বিশ্লেষণে সুশীল সমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক উপস্থাপনায় উল্লেখ করা হয়, সুশীল সমাজভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (১৬তম) অর্জনের ক্ষেত্রে কিভাবে ভূমিকা রাখতে পারে ব্র্যাক মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা কর্মসূচির কার্যক্রম মূল্যায়নের মাধ্যমে সে বিষয়ে অনুধাবন করার চেষ্টা করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ‘মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচির মূল্যায়ন: বিকল্প উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তি’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট রুমানা আলী। প্রবন্ধে তিনি ব্র্যাকের ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত গবেষণা জরিপ বিশ্লেষণ করে বলেন, ২০১০ থেকে ২০১১ সালে ব্র্যাকের এডিআর সুবিধাভোগীদের মধ্যে যেখানে স্বল্প আয়ের চাকরিজীবীদের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা ছিল ২০ শতাংশ, সেখানে ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ শতাংশে। দর্জি, ক্ষুদ্র ব্যবসা, কারুশিল্প, পশুপালন ইত্যাদির মাধ্যমে যারা জীবিকা অর্জন করেন, তাদের ক্ষেত্রে যেখানে ২০১০-২০১১ সালে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা ছিল ৪০ শতাংশ, ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ শতাংশে।
১৯টি জেলায় ১৯৩ জন মহিলা ও ১৯৩ জন পুরুষসহ মোট ৩৮৬ জনের ওপর এ গবেষণা জরিপ পরিচালিত হয়। জেলাগুলো হচ্ছে— মাদারীপুর, বরিশাল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মাগুরা, সাতক্ষীরা, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, দিনাজপুর, নোয়াখালী, ফেনী, সুনামগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গা।
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা টেকসই আইন সহায়তার ক্ষেত্রে এডিআর-এর সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার জন্য আরো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে কার্যকর নেটওয়ার্ক তৈরি, অভিযুক্তকে কাউন্সেলিং করা, প্রাতিষ্ঠানিক পুনর্গঠন এবং সরকার ও অধিকারভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে যোগসূত্র স্থাপন, জমি সংক্রান্ত বিরোধের অভিযোগ গ্রহণের জন্য প্রান্তিক মানুষকে সচেতনতা আনয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণসহ বেশ কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন ডেইলি স্টার-এর স্পেশাল সাপ্লিমেন্টস এডিটর শাহনূর ওয়াহিদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের সমন্বয়কারী অ্যান্ড্রু জেনকিন্স। এ ছাড়া ‘ন্যায়বিচারের সুযোগ ও বিশ্লেষণে সুশীল সমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক উপস্থাপনা তুলে ধরেন একই বিভাগের (ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট) সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট সৈয়দা সিতওয়াত শাহেদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ব্র্যাকের অ্যাডভোকেসি ফর সোস্যাল চেইঞ্জ, টেকনোলজি অ্যান্ড পার্টনারশিপ স্ট্রেংদেনিং ইউনিটের পরিচালক কে এ এম মোর্শেদ। সমাপনী বক্তব্য ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. আব্দুল বায়েস। অন্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন ন্যাশনাল লিগেল এইড সার্ভিসেস অর্গানাইজেশন-এর পরিচালক মালিক আব্দুল্লাহ আল-আমিন, সিনিয়র অ্যাডভোকেট এ এফ হাসান আরিফ, আইনজীবী সারা হোসেন প্রমুখ।