বরিশালের ছেলে খুলনায় বেড়ে ওঠা মিরাজের গল্প

ঝুপড়ি ঘরে জন্ম হওয়া ছেলেটি আজ বিশ্ব নন্দিত ক্রিকেট তারকা মেহেদি হাসান মিরাজ। খুলনার ছেলে হিসেবে পরিচিতি পেলেও তার গ্রামের বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের আউলিয়াপুর গ্রামে। আর্থিক অনটনের কারণে ২০০০সালে পরিবারসহ খুলনায় পাড়ি জমান মিরাজের বাবা। খালিশপুরের হাউজিং স্টেট কাশিপুরের টিনের ছাউনি, বাঁশের বেড়ার ভাড়ার বাসায় উঠেন। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট পাগল ছিলেন মিরাজ। রেন্ট এ-কার চালক বাবা মো. জালাল হোসেনের ইচ্ছা ছিলো লেখাপড়া শিখিয়ে তাকে জজ কিংবা ম্যাজিষ্ট্রেট বানাবে। কিন্তু মিরাজের মন পড়ে থাকতো ক্রিকেটে। স্কুল পালিয়ে খেলতে যেতেন। এজন্য বাবা অনেক সময় শাসন করতো। শাসনে থেকে থাকেননি তিনি। থাকবেনই বা কেন? থেমে গেলে তো আর আজ বিশ্ব রেকর্ড করা হতো না। মিরাজ জানান, খুব ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ ছিলো অনেক বেশি। তাই খুব অল্প বয়সেই চাচাদের সাথে ক্রিকেট খেলতে যেতেন। ছোট বলে খেলতে নিতো না। তারপরও খেলা দেখতেন। খুলনা আসার পর স্কুলে ভর্তি হয়ে স্কুল পালিয়ে বন্ধু-বান্ধবের সাথে ক্রিকেট খেলতেন। বিভিন্ন মাঠে, রাস্তায় আর বিএল কলেজের মাঠে ক্রিকেট খেলতেন।

এক পর্যায় পরিচয় হয় খালিশপুর মুসলিম একাডেমির কোচ আল মাহমুদের সাথে। তিনি খেলা দেখে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন। তার প্রচেষ্টাই আজকের মিরাজ হয়ে ওঠা।

এরপর নানা ঘাত-প্রতিঘাত আর চেষ্টার মাধ্যমে অনূর্ধ্ব-১৪, ১৬ ও ১৮ ক্রিকেটে খুলনা জেলার হয়ে খেলেছেন। বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটে খুলনা জেলা ও বিভাগের হয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ছিলেন। এরপর জাতীয় দলে টেষ্ট অভিষেক। মিরাজের বাবা মো. জালাল হোসেন জানান, তিনি কখনই কল্পনা করেন নি যে তার ছেলে মিরাজ কোনদিন এতবড় ক্রিকেটার হবে। এমনকি তিনি কখনও তা আশাও করেন নি। এ কারণে তিনি প্রথমে ছেলেকে খেলতে বাঁধা দিতেন। কিন্তু তার কোচ আল মাহমুদের মাধ্যমে তিনি মিরাজকে খেলতে ছেড়ে দেন। পরবর্তীতে তার ধারাবাহিক সাফল্যে তিনি এখন গর্বিত বলে জানান। অভিষেক টেস্টের পারফরম্যান্সে আগের প্রকাশিত র‌্যাংকিংয়ে মিরাজ উঠেছিলেন ৬১তম স্থানে। বোলিং র‌্যাংকিংয়ে পা রেখেছিলেন ৬১ নম্বর দিয়ে। আর পরের ম্যাচ খেলেই এক লাফে চলে এলেন ৩৩ নম্বরে। টাইগার অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ অভিষেক টেস্ট সিরিজের দুর্দান্ত পারফর্মে ২৮ ধাপ এগিয়েছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটের নতুন এই সেনসেশন অভিষেক টেস্টে চট্টগ্রামে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন। ঢাকা টেস্টে নেন আরও ১২ উইকেট।

দুই টেস্ট মিলিয়ে মোট পান ১৯ উইকেট। যা বাংলাদেশের হয়ে এক টেস্টে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড। দুই টেস্টের সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হতে মিরাজ ভেঙেছেন ১২৯ বছরের পুরোনো রেকর্ড। এরপর থেকে মিরাজকে নিয়ে মাতামাতি চলছেই। ডানপিটে ছেলেটি দু’দিনের ছুটিতে নিজ শহর খুলনায় এসেছিলেন সোমবার। এসে খুব একটা নিজের মতো থাকতে পারেননি। মিডিয়া, ক্যামেরা, ইন্টারভিউ, সেলফি আবদার কত কিছুই মেটাতে হয়েছে মিরাজকে। পড়েন খ্যাতির বিড়ম্বনায়। তবে মিরাজ খুব একটা কাউকে নিরাশ করেন নি। সামর্থ্যমত মিটিয়েছেন সবার আবদার। পুরো ক্রিকেট দুনিয়াকে তাক লাগানো খুলনার ছেলে মিরাজকে সংবর্ধনা দিয়েছে খুলনা জেলা প্রশাসন, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, খুলনা সিটি কর্পোরেশন, নৌ-পরিবহন মালিক গ্রুপ, খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থাসহ বিভিন্ন সংগঠন। সম্পাদনা- এল আর বাদল