১২৩ বছরের পুরনো ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার পাইলট হাইস্কুল। ১২৩ বছর আগে উপজেলাটি ছিল অজ পাড়াগাঁ। ওই সময় একটি হাইস্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন কয়েকজন শিক্ষানুরাগী। তাদের মধ্যে ছিলেন যদুনাথ সাহা, তার ছেলে কিরণ চন্দ্র সাহা এমএ বিটি, মতিলাল সাহা, মধুসূদন সাহা (ব্যবসায়ী), শ্রীনাথ সাহা (জমিদার) ও রামচন্দ্র সাহা (জমিদার)। তাদের সহযোগিতায় ১৮৯৩ সালে খড়ের চালাঘরে মাত্র ২৭ জন ছাত্র নিয়ে স্কুলটির যাত্রা শুরু হয়। আর ক্ষেত্রমোহন গাঙ্গুলী হন প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক।
রেকারিং গ্রান্ট মঞ্জুরের পর স্কুল ভবন নির্মাণের জন্য ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করে সরকার। এক সময় এ টাকা স্থগিত হয়ে যায়। তখন সার্জেন্ট জেনারেল অব বেঙ্গলের পিএ ছিলেন রায় সাহেব প্রিয় নাথ সাহা। তিনি চেষ্টা করে ১৫ হাজার টাকা মঞ্জুর করে দেন। প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক মতিলাল সাহা স্কুলটির অ্যাফিলিয়েশনের জন্য চেষ্টা করেন। তত্কালীন প্রেসিডেন্সি বিভাগের স্কুল পরিদর্শক পরিদর্শনে কলকাতা থেকে আসেন। তিনি স্কুল দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন ও উচ্চ শিক্ষা বিস্তারের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠার পক্ষে সুপারিশ করেন। এরপর স্কুলটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী অ্যাফিলিয়েশন লাভ করে।
স্কুলের সুমাম ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্র সংখ্যা বেড়ে আড়াইশ হয়। পরে ডা. বিহারী লাল ওই স্কুলের জন্য ১৮ শতক জমি দান করেন। খড়ের ঘর বিক্রি করে দান করা ওই জমিতে তিনটি টিনের ঘর নির্মাণ হয়। ১৯১২ সালে দুর্বৃত্তরা স্কুলটি পুড়িয়ে দেয়। স্কুল কমিটি অনেক চেষ্টার পর পুনর্নির্মাণ করে। ১৯১৪ সালে ফের দুর্বৃত্তরা পুড়িয়ে দেয়। তখন কমিটি দ্বারস্থ হয় ইংরেজ মহাকুমা প্রশাসক মি. এ ক্যাসেলের। তিনি স্কুলের জন্য পাকা ভবন নির্মাণের দায়িত্ব নেন এবং একতলা ভবন নির্মাণ করে দেন। ১৯৪৭ সালে অনেক হিন্দু ছাত্র দেশ ত্যাগ করেন। ছাত্র কমে ১শতে নেমে আসে। কিন্তু ১৯৫৬ সালে আবার ছাত্র সংখ্যা বেড়ে আড়াইশ হয়। ১৯৬০ সালে স্কুল ভবন দোতলা করা হয়। ১৯৬১-৬২ সালে বাই লেটারাল স্কুলে উন্নীত করে সরকার। প্রথমে এর নাম ছিল শৈলকুপা হাই ইংলিশ স্কুল। ১৯৬৮ সালে এ স্কুল সরকারের বহুমুখী পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত হয়। বর্তমান নাম শৈলকুপা পাইলট হাই স্কুল। এখন সরকারিকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
শুরু থেকেই স্কুলটি সফলতা দেখিয়ে আসছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন প্রথম ব্যাচে সাতজন ছাত্র এন্ট্রান্স পরীক্ষায় অংশ নেন। সকলেই প্রথম বিভাগে পাস করেন। বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১২শ ৪৭ জন। শিক্ষক আছেন ৩৪ জন। স্কুলে আধুনিক অনেক সুযোগ-সুবিধা থাকলেও লাইব্রেরির অবস্থা ভালো না। আর অনেক শিক্ষার্থীর ক্লাসে উপস্থিতিতে অনীহা রয়েছে। প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম এজন্য অভিভাবকদের দায়ী করে বলেন, তারা ক্লাসে না পাঠিয়ে প্রাইভেট শিক্ষকদের কাছে পাঠাতে আগ্রহী। তবে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিতি বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
স্কুলের স্বনামধন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে আছেন কবি গোলাম মোস্তফা, সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ মৈত্র, পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন প্রধান প্রকৌলশী (বিদ্যুত্) অমূল্য কুমার ভৌমিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মশিউজ্জামান, ড. গোলাম মোস্তফা, যুগ্ম সচিব কাজী শামসুজ্জামান প্রমুখ।
এদিকে বরাবরই স্কুলটি ভালো ফল করে আসছে। ১৯২২ সালে পাসের হার ছিল ৭৫ ভাগ, ১৯৩০ সালে শতভাগ ও ১৯৩১ সালে শতভাগ। ২০১২ সালে শতভাগ, ২০১৪ সালে ৯৪ দশমিক ২৪ ভাগ, ২০১৫ সালে ৭৬ দশমিক ০৫ ভাগ ও ২০১৬ সালে পাসের হার ৯২ দশমিক ৫২ ভাগ।