ছোট্ট অহনার খুব ভালো লাগে। একঝাঁক শিশু কিচিরমিচিরে মেতে থাকে। কার্পেট বিছানো ঘরে হালকা দৌড়াদৌড়ি, একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়াÑ মজার একটা ব্যাপার যেন তার কাছে। সকালে যশোর ডে-কেয়ার সেন্টারে তাকে দিয়ে যায় মা। তারপর থেকে শুরু হয় তার আনন্দের ক্ষণ। ১১ মাস বয়সেই অহনা ডে-কেয়ারের সদস্য। এখন আড়াই বছরে পা দিয়েছে। ওই সময় থেকেই ডে-কেয়ারের সেবা ভোগ করছেন তার চাকরিজীবী মা। মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের উদ্যোগে পরিচালিত কর্মজীবী, শ্রমজীবী, চাকরিজীবী মায়েদের সন্তানের দিবাকালীন সেবা প্রদানের জন্য যশোরে প্রতিষ্ঠা হয়েছে ‘যশোর ডে-কেয়ার সেন্টার’। ২০০৪ সাল থেকে লোন অফিসপাড়ার এইচএমএম আলী রোডে ৮৫ নম্বর বাড়িতে চলছে এর কার্যক্রম। কর্মজীবী মায়েরা তাদের সন্তানকে এখানে রেখে নিশ্চিন্তে থাকতে পারছেন।
সম্প্রতি ওই ডে-কেয়ার সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, অহনার মতো আরও কিছু বাচ্চা মাঝে বসে আছে অর্চি। সকালের নাশতা সেরেই বসে পড়েছে খেলতে। এদের মাঝে বসে আছে তাহমিনা আক্তার মুনা ও নাছরিন আক্তার। তারা এখানকার আয়া। আতিক নামে এক শিশু দৌড়ে গেল মুনার কাছে। বললো, দেখ আমার এ বাড়িটা হচ্ছে না। মাতৃস্নেহের কোমল হাতে তাকে পাশে বসিয়ে লেগে গেলেন পাজল্ড গেমের বাড়ি তৈরিতে। আশপাশে অন্যরাও তাকে ঘিরে ধরল। এভাবে দুইজন আয়া লেগে থাকেন বাচ্চাদের সঙ্গে। নিরাপত্তার জন্য রয়েছেন দুইজন দাড়োয়ান। সহকারী স্বাস্থ্য শিক্ষিকা ও সহকারী শিক্ষিকা ডেপুটেশনে থাকায় কিছুটা কষ্ট হলেও সবকিছু সামলে নিচ্ছেন ডে-কেয়ারের কর্মকর্তা নাছরিন সুলতানা। দুপুরে আবার খাবার দিতে হবে। তাতে কোনো চিন্তাই নেই, খাবার রেডি। রয়েছেন দুইজন বাবুর্চিÑ আলমগীর হোসেন ও বকুল হোসেন। রান্না শেষ হয়ে গেলে বাচ্চাদের নিয়েই মেতে থাকেন তারা। এভাবে হাসি, আনন্দ, মজা আর খুনসুটিতে মেতে রয়েছে কর্মজীবী, চাকরিজীবী ও শ্রমজীবী মায়েদের ৪০ শিশু। এভাবেই প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত কেটে যায় এখানকার ৯ কর্মকর্তা-কর্মচারীর।
শহরের স্বনামধন্য সরকারি কলেজের প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা মা-ও এ সুবিধা নিচ্ছেন বলে জানালেন ডে-কেয়ারের কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা। তিনি বলেন, বর্তমানে ৪০ মা এ সেবা নিচ্ছেন। সার্বিক দিক দিয়ে তারা আস্থা রাখতে পারছেন। সব থেকে বড় কথা কর্মজীবী, চাকরিজীবী মায়েরা তাদের ছেলেমেয়েকে রেখে নিশ্চিন্ত থাকতে পারছেন। তবে মফস্বল হওয়ায় অনেকে এখানে বাচ্চা রেখে চাকরিতে যাওয়াকে আত্মসম্মানের বিষয় বলে মনে করেন। এ ধরনের ভ্রান্ত ধারণা থেকে বের করিয়ে আনার জন্য আমরা ফিল্ডওয়ার্ক করছি। কিছুটা কাজে দিয়েছে। বর্তমানে এখানে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা মা-ও এ সেবা গ্রহণ করছেন। রুটিন অনুযায়ী খাবার দেয়া হয়। সপ্তাহের পাঁচ কর্মদিবসে খাবারের তালিকায় সকালে রয়েছে দুই দিন দুধ-সুজি, দুুই দিন পাউরুটি, একদিন অন্যান্য। দুপুরের জন্য দুই দিন ডিম, দুই দিন মাংস, একদিন মাছ। মাসে একদিন দুপুরের খাবারে রয়েছে বিশেষ আয়োজন পোলাও-মাংস। এসব খাবার কন্ট্রাক্টর আবুল কালাম আজাদ সরবরাহ করে থাকেন। রান্না করেন সেন্টারে নিযুক্ত বাবুর্চি। খেলাধুলার জন্য রয়েছে ইন্ডোর গেমস। এছাড়া রয়েছে সিøপিং রোড, দোলনা ও ছোট ছোট খেলনা। ছেলেমেয়েদের শেখানো হয় কবিতা আবৃত্তি। মাঝে মাঝে খালি গলায় গান গেয়েও শোনান শিক্ষক-কর্মচারীরা। তবে ‘সংগীত শিক্ষক থাকলে ছেলেমেয়েরা আরও বেশি আনন্দ পেত’ বলে জানালেন আদিবের মা মনিরা সুলতানা।
বছরের শুরুতে সেন্টারে বাচ্চা ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয়। প্রচার-প্রচারণা চলে সারা বছরই। ভর্তি হতে প্রয়োজন ছেলেমেয়ের জন্মনিবন্ধন, মা ও বাচ্চার এক কপি করে পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং সেশন চার্জ বাবদ ১০০ টাকা। তাছাড়া মাসিক খরচ মাত্র ১০০ টাকা। তবে শর্ত হলো বয়স হতে হবে ৬ মাস থেকে ৬ বছরের মধ্যে।