স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশ টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে হাঁটছে বলে মনে করেন ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক। তবে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তাই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন তিনি।
গতকাল সোমবার ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) এক ভোজসভায় অ্যালিসন ব্লেক এসব কথা বলেন। রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে আয়োজিত এ সভায় এফআইসিসিআইয়ের সভাপতি রূপালী চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক জামিল ওসমান, নির্বাহী কমিটির সদস্য এডউইন বোলস বক্তব্য দেন। এতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকরা এবং এফআইসিসিআইয়ের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, চরমপন্ত্রী সন্ত্রাসীরা বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের জাল বিস্তার করেছে। এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। গত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশে হামলা চালায়। এতে সারা বিশ্ব থমকে যায়। তবে এ সময় বাংলাদেশ সরকার শক্ত হাতে সন্ত্রাস দমন করেছে। বাংলাদেশ সরকার এবং পুলিশের দেওয়া বাংলাদেশে থাকা বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তাব্যবস্থাও ছিল বেশ প্রশংসনীয়।
বিট্রিশ হাইকমিশনার আরো বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে অর্থনীতি বেশ স্থিতিশীল। ফলে এখানে বিনিয়োগের বেশ সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময়ে জানা যায়, বাংলাদেশে বিনিয়োগে জ্বালানি, অবকাঠামো এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়েছে।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের ব্যবসা-বাণিজ্যে সহায়ক দেশগুলোর ‘ডুয়িং বিজনেস’ প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে অ্যালিসন ব্লেক বলেন, ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ দুই ধাপ এগিয়েছে। তার পরও ১৯০টি দেশের মধ্যে অবস্থান ১৭৬। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে আফগানিস্তান।
বাংলাদেশ-ব্রিটিশ বাণিজ্যের কথা উল্লেখ করে অ্যালিসন ব্লেক বলেন, ‘বাংলাদেশে যুক্তরাজ্য বিদেশি বিনিয়োগকারী হিসেবে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। যা মোট বিনিয়োগের ১৩ শতাংশ। ব্যাংকিং, বস্ত্র এবং খাদ্য খাতে আমাদের বিনিয়োগ রয়েছে।’ এ দেশের কর্মসংস্থানেও যুক্তরাজ্যের প্রায় ২০০ কম্পানি ভূমিকা রাখছে বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহের কথা উল্লেখ করে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, যুক্তরাজ্যে এই দেশের প্রায় পাঁচ লাখ প্রবাসী রয়েছে। তারা বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাতে বড় ভূমিকা রাখছে। গত বছর তারা প্রায় ৮১ কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়েছে বাংলাদেশে।
ব্যালান্স অব ট্রেড বাংলাদেশের পক্ষ উল্লেখ করে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে যুক্তরাজ্য তৃতীয় বৃহত্তম বাজার। বাংলাদেশের পোশাক খাতের প্রায় ১০ শতাংশ রপ্তানি হয় যুক্তরাজ্যের বাজারে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতের বড় প্রকল্প পদ্মা সেতু এবং পায়রা বন্দরেও যুক্তরাজ্যের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রশ্নোত্তর পর্বে এক প্রশ্নের জবাবে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, ‘বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। এটাকে আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা মনে করি, শুধু নির্বাচনের দিন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে তা নয়, পুরো প্রক্রিয়াটি যেন স্বচ্ছ হয়, এটা জরুরি।’
রূপালী চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের দীর্ঘদিনের উন্নয়ন সহযোগী দেশ। দেশটির উন্নয়ন সংস্থা ডিএফআইডি বাংলাদেশের উন্নয়নে চলতি অর্থবছরে ৩৭ প্রকল্পের জন্য এক কোটি ৬৮ লাখ ডলারের অনুমোদন দিয়েছে।