২০১৪-১৫ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে অর্থনীতির সব সূচকেই ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। এক বছরে মাথাপিছু জাতীয় আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, আমদানি-রপ্তানি, সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ এবং রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ও পরিমাণ বেড়েছে।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে দারিদ্র্যের হার অব্যাহতভাবে হ্রাস পেয়ে ২৩ দশমিক ৫০ শতাংশে এবং হতদরিদ্রের হার ১২ দশমিক ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। এ সময়ে প্রবৃদ্ধির হার যেমন বেড়েছে, তেমনি হ্রাস পেয়েছে সামাজিক বৈষম্য।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘মন্ত্রণালয় ও বিভাগসমূহের ২০১৫-১৬ অর্থবছরের কার্যাবলি সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদন’ উপস্থাপন করা হলে তা অনুমোদন হয়। এ প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের কাছে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে দেশে মাথাপিছু আয় ৭ দশমিক ০৫ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল এক হাজার ৩১৬ মার্কিন ডলার এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলারে।
এছাড়াও পণ্যের বহুমুখীকরণ, সরকারের বাস্তবমুখী পদক্ষেপ ও প্রণোদনা প্যাকেজ প্রদান এবং রপ্তানিকারকদের নিরলস প্রচেষ্টার ফলে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৪ হাজার ২৫৭ দশমিক ১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে এক লাখ ৭১ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৯ দশমিক ০১ শতাংশ বেশি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিদেশে জনশক্তি পাঠানো হয় ছয় লাখ ৮৪ হাজার ৫৩৭ জন, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৪৮ দশমিক ১৯ শতাংশ বেশি।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ২০ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিবি) সংশোধিত বরাদ্দ মোট ৯৩ হাজার ৮২৩ কোটি টাকার মধ্যে ৮৬ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা (৯৩ শতাংশ) ব্যয় করা সম্ভব হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগের আওতায় গৃহীত সমাপ্তিযোগ্য ২৭৭টি প্রকল্পের মধ্যে ২৪৫টি প্রকল্প সমাপ্ত হয়। এর ফলে আগের বছরের চেয়ে এডিবিতে ব্যয়ের পরিমাণ ৯ হাজার ৩১ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০১৪-১৫ অর্থবছরের তুলনায় প্রতিবেদনাধীন অর্থবছরে চাল, ডাল গম, ভুট্টা, আলু, পিয়াজ, পাট, শাকসবজি, সুতা, পাটজাত দ্রব্য, লবণ, মৎস্য, মাংস, দুধ, ডিম, সার (ইউরিয়া), গ্যাস, কয়লা এবং চায়ের প্রকৃত উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ও উৎপাদনের পরিমাণ উভয়ই গত অর্থবছরের তুলনায় এক হাজার ২১৯ মেগাওয়াট বৃদ্ধি পেয়েছে। ৩১ হাজার কিলোমিটার বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন ও ১৯৮ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন-লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। আগের অর্থবছরের তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে ১৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ, লোডশেডিং কমেছে ৩২ শতাংশ এবং বিদ্যুৎ বিতরণ ও সঞ্চালন সিস্টেম লস ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ থেকে কমে ১৩ দশমিক ১০ শতাংশ হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, নতুন ১০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনার অনুমতি দেয়া হয়েছে। উচ্চতর গবেষণা সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় অর্থায়ন করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ১৯টি বেসরকারি কলেজ এবং ১১টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করা হয়। ৩৩ কোটি ৩৭ লাখ ৬২ হাজার ৭৬০টি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে উপবৃত্তি, মেধাবৃত্তি ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষায় ছাত্রছাত্রীর বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার হার আগের অর্থবছরের ২০ দশমিক ৯০ শতাংশ থেকে কমে ২০ দশমিক ৪০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।