‘ক্ষুদ্রঋণে মেধাবী নেতৃত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ’

অর্থিক প্রতিষ্ঠানে নৈতিকতার মান নির্ধারণ শুরু হয় ওই প্রতিষ্ঠান থেকে। এটি একটি সাধারণ চর্চা, বিশেষ করে ব্যাংক কম্পানিতে। আবার সামগ্রিক খাত মিলেও নৈতিকতার একটি মান নির্ধারণ করতে চেষ্টা করতে পারে। কেননা এই খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিটিই এক রকম আত্মনিয়ন্ত্রিত। সর্বোপরি, এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থারও বড় ভূমিকা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টি তদারকি করা থেকে বিরত থাকা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কখনোই উচিত হবে না। গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর মিরপুরস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) মিলনায়তনে বিআইবিএম আয়োজিত ব্যাংকিংয়ে নৈতিকতাবিষয়ক ষোড়শ নূরুল মতিন স্মারক বক্তৃতায় রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) সাবেক গভর্নর দুভভুরি সুব্বারাও এসব কথা বলেন।

বিআইবিএমের আমন্ত্রণে তিনি বাংলাদেশে আসেন। ‘আর্থিক খাতে নৈতিকতা—একটি বিরোধাভাস’ শিরোনামের ওই বক্তৃতার শুরুতেই সুব্বারাও বলেন, ‘এই বক্তৃতার জন্য আমি যখন প্রস্তুতি নিচ্ছি তখন আমার মনে একটি প্রশ্ন আসে যে আমরা ব্যক্তিপর্যায় থেকে কিভাবে নৈতিকতার মানদণ্ড নির্ধারণ করি? আমরা কি আমাদের ব্যক্তি ও পেশাগত জীবনে ভিন্ন ভিন্ন মানদণ্ড দাঁড় করাই? অন্য যেকোনো ক্ষেত্রের চেয়ে আথিক খাতে নৈতিকতা কি বেশি গুরুত্বপূর্ণ? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমি এক বিশাল পট বা ক্যানভাস আবিষ্কার করি এবং আমার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সত্যিকার অর্থেই ওই ক্যানভাসকে পূর্ণ করতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘প্রশ্ন হচ্ছে, একজন ব্যক্তি কি সর্বক্ষেত্রেই সৎ থাকেন। ব্যক্তিজীবনে যে সৎ কর্মজীবনে তিনি কি অসৎ হতে পারেন না? উভয় সংকটে পড়ে সে যে সিদ্ধান্ত নেয় তা কি সব সময় তার সৎ চিন্তার ওপর নির্ভর করে? কখনো কখনো যা নৈতিক, তাই আবার কখনো কখনো অনৈতিক হতে পারে।’

নৈতিকতার মানদণ্ড নির্ধারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা নিয়ে বলতে গিয়ে সুব্বারাও বলেন, ‘আমি যখন আরবিআইর গভর্নর হিসেবে যোগ দিই তখন দেখি, প্রতিটি ব্যাংক তার গ্রাহকের কাছ থেকে সুদ আদায়ের জন্য একটি প্রাইম বেঞ্চমার্ক নির্ধারণ করেছে। কোনো গ্রাহকই এই হারের কম সুদে ঋণ নিতে পারত না। কিন্তু কিছু ব্যতিক্রম ঘটনার কথা বলে এবং ফাঁক-ফোকর তৈরি করে ব্যাংকগুলো নিয়মিত ওই হারের কম সুদে ঋণ দিতে শুরু করল। এ ধরনের কর্মকাণ্ড ব্যাংক ব্যবস্থাপকদের মধ্যে অনৈতিক চর্চার সুযোগ তৈরি করে এবং তাদের প্রলুব্ধ করে।’

তিনি আরো বলেন, ‘একটি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান নিয়েও আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছিল। অভিযোগ ছিল, ওই প্রতিষ্ঠানটি দারিদ্র্য বিমোচনের কথা বলে গরিব গ্রাহকদের কাছ থেকে উচ্চ হারে সুদ আদায় করছে। ঋণ পরিশোধ করতে না পারা গ্রাহকদের সঙ্গে অমানবিক ব্যবহার করছে। পরে আমরা বিষয়টির খোঁজ নিই এবং ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের সুদ হারের একটি ঊর্ধ্বসীমা বসিয়ে দিই।’ এ সময় অবশ্য বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের প্রশংসা করে সুব্বারাও বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্ষুদ্রঋণ খাতে একটি মেধাবী নেতৃত্ব দিয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার নিয়ে অনেক বিতর্ক ওঠে। কেউ কেউ বলতে শুরু করে, বড় বড় প্রতিষ্ঠান ১৪-১৫ শতাংশ সুদে ঋণ নেয়। ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার কেন তাদের সমান হবে? আমি বলব, এই বিতর্কটি সঠিক নয়। কেননা বড় প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক টাকা ঋণ নেয় এবং এরা অনেক টাকা সুদ পরিশোধ করে। যে কারণে তাদের ঋণের সুদহারও কম হওয়া প্রয়োজন রয়েছে। সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ‘নৈতিকতা নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নরের বক্তৃতা আমাদের দেশের আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের মধ্যে নৈতিক চর্চা বাড়িয়ে তুলতে সহযোগিতা করবে।’