শেরে বাংলা ফজলুল হক বাংলার মানুষের কাছে ‘আনক্রাউন্ড কিং অব বেঙ্গল’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর পরিচিতি ছিল ‘গণতন্ত্রের মানসপুত্র’ হিসেবে। ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটির মধ্যে মূর্ত হয়ে উঠেছেন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। মওলানা ভাসানী হয়ে ওঠেন ‘মজলুম জননেতা’। এঁরা সকলেই দেশের হতদরিদ্র ও অধিকারহারা মানুষের সার্বিক মুক্তি আদায়ের জন্য জীবনপাত সংগ্রাম করে মানুষের হৃদয়-সিংহাসনে সমাসীন হয়ে রয়েছেন। আমাদের জাতীয় ইতিহাসের বিভিন্ন পর্বে নেতৃত্ব দানকারী উল্লিখিত নেতারা প্রাতঃস্মরণীয়, নমস্য তো বটেই।
অতঃপর দীর্ঘ, অতিশয় দুরূহ ও যারপরনাই কঠিন সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়ে যিনি আজ বাংলাদেশের মানুষকে বিশ্বসভায় মর্যাদাবান করেছেন এবং বাংলাদেশকে গৌরবের স্বর্ণ শিখরে পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে ভরপুর করে তুলেছেন তিনি আর কেউ নন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তার শিরস্ত্রাণে একের পর এক অভাবিত সাফল্যের পালক প্রভাত সূর্যের উজ্জ্বল ও বর্ণালী কিরণচ্ছটার মতো জ্বলজ্বল করছে। শুভ্র চন্দ্রমার স্নিগ্ধ জ্যোৎস্নায় অবগাহন করার মতো এক মনোরম আবেশ রচনা করেছেন তিনি। বাংলাদেশের আকাশে অগণ্য উজ্জ্বল জ্যোতিঃপুঞ্জের শোভা বিস্তারের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে বলে দেশী-বিদেশী মহল থেকে স্বীকৃতি মিলছে। চীনা প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে শুধু যে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নয়া দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে তা নয়, বরং এতে করে বাংলাদেশে চীনা সহায়তায় বিপুল ও বিশাল উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের সূচনা ঘটতে চলেছে। অন্যদিকে, বিশ্বব্যাংক প্রধানের ফলপ্রসূ ঢাকা সফর এই উন্নয়ন ধারাকে আরও বেগবান করার প্রতিশ্রুতি বয়ে এনেছে। ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর বাংলাদেশে জাপানী সহায়তায় বহুমাত্রিক উন্নয়ন কার্যক্রমের ব্যাপক ক্ষেত্র প্রস্তুত করে।
বিএনপি-জামায়াত ও আওয়ামী লীগবিরোধী সংগঠনসমূহ এতকাল বলে বেড়িয়েছে যে, আওয়ামী লীগ ভারতের কাছে দেশ বেচে দিয়েছে। এমতাবস্থায় তাদের কাছে এখন আমাদের জানতে ইচ্ছে করে ভারতের সঙ্গে কোন প্রকার চুক্তি বা সমঝোতায় উপনীত হলেই যদি দেশ বিক্রি হয়ে যায় তাহলে চীন, জাপান, রাশিয়ার সঙ্গে যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের চুক্তি হলো তাতে তারা বাংলাদেশ ভূখণ্ডের কে কত ভাগের মালিকানা লাভ করল? এই হিসাবটি বের করা এখন তাদের নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে নয় কি?
শেখ হাসিনা যে আজ ভারত, চীন, জাপান, রাশিয়া, আমেরিকা, ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তুলছেন তা যে তিনি কেবলই দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির কথা চিন্তা করে করছেন এ কথা বুঝতে কি রকেট সায়েন্স জানা লাগে? শুধু দুর্মুখ আর হীনম্মন্য ব্যক্তিরা তা দেখতে পায় না, কেননা তাদের চোখে স্বার্থের ঠুলি আঁটা যে! পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অসাধু ও দুরভিসন্ধিমূলক অভিযোগের কথা আমরা ভুলে যাইনি। একদিন হেনরি কিসিঞ্জার আমাদের প্রতি যে উক্তি করেছিলেন সে কথা কিন্তু দেশবাসী আজও ভোলেনি। বাণিজ্য-সাম্রাজ্যবাদের সারথী বিশ্বব্যাংকের ছলচাতুরি নস্যাত করে দিয়ে প্রবলভাবে আত্মবিশ্বাসী শেখ হাসিনা অসম সাহসিকতায় নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করে বিশ্ববাসীকে তারস্বরে জানিয়ে দিয়েছেন, আমরা কোন ‘বটমলেস বাস্কেট’ নই। তার এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের সঙ্গে কেবল আরব জাতীয়তাবাদী নেতা গামাল আব্দুল নাসেরের সেই প্রবল প্রতাপে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ও শর্ত উপেক্ষা করে আসওয়ান বাঁধ নির্মাণের তুলনা করা চলে। পাঠকের নিশ্চয় মনে আছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ ও দ-িত যুদ্ধাপরাধীদের দ- রদের জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন দেশ, জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানিবাধিকার সংস্থা শেখ হাসিনা সরকারের ওপর যে চাপ ও খানিক হুমকি-ধমকি দিয়েছিল ‘শেখের বেটি’ তার থোড়াই পরোয়া করেছেন। শেখ হাসিনার এই জাতীয়তাবাদী চেতনা ও নতি স্বীকার না করা এটাই প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের মানুষের চাওয়া-পাওয়ার প্রতি তার সম্পৃক্ততা কত অকৃত্রিম ও কত গভীর। তাই কোন দেশী-বিদেশী প্রভুত্ব তিনি মানতে নারাজ।
সারাবিশ্ব যখন জঙ্গীদের অপতৎপরতায় দিশেহারা তখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশের নেত্রী শেখ হাসিনা অকুতোভয়ে জঙ্গী মোকাবেলায় জিরো টলারেন্স দেখিয়ে এবং এই অপশক্তির বিরুদ্ধে দেশবাসীকে এককাট্টা করে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। আবার সকল ভ্রƒকুটি ও দেশী-বিদেশী চাপ অগ্রাহ্য করে নিজেদের আইনে আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার ও একাত্তরের ঘাতকদের দ- কার্যকর করেছেন।
আমার বিবেচনায় যে বিষয়টি শেখ হাসিনার এত সব কৃতী ও কীর্তি ছাপিয়ে তার শাসনকালকে ইতিহাসে চিরকাল গৌরবদীপ্ত ও মহিমান্বিত করে রাখবে সেটি এই যে, তিনি বাংলাদেশের মানুষের হৃত আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা পুনর্প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এটি বুঝতে নিশ্চয় কারও কোন কষ্ট হওয়ার কথা নয় যে, এই কাজটি করতে তাকে নিজ জীবন বাজি রাখতে হয়েছে। আর এখানেই তিনি প্রমাণ করেছেন তিনি ‘শেখের বেটি’। আজকের বাংলাদেশের অবয়বটির মাঝে একটি সফল, সবল, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, মেধাবী ও পরিশ্রমী জাতির উচ্চকিত চেহারা ফুটে উঠছে নয় কী! বাংলাদেশের দরিদ্র ঘরের মেয়েরা বাংলাদেশকে আজ পৃথিবীর অন্যতম সেরা গার্মেন্টস রফতানিকারক দেশে পরিণত করেছে। আমাদের দেশের কৃষক অহোরাত্রি হাড়ভাঙ্গা খাটুনি করে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে, শেখ হাসিনার সরকার কার্যকর ও সময়োচিত পদক্ষেপ নিয়ে মঙ্গাপীড়িত অঞ্চলসমূহে ফসলের বন্যা বইয়ে দিয়েছে। মৎস্য খাতে অভাবিত সাফল্য অর্জিত হয়েছে। সরকারের কার্যকর নীতি ও উদ্যোগ এবং তা বাস্তবায়নে দৃঢ় সঙ্কল্পবোধ আজ দেশকে জোর কদমে এগিয়ে যাবার পথ করে দিয়েছে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশী দোসরদের পরাজিত করে আমরা দুনিয়াকে দেখিয়ে দিয়েছিলাম যে, ‘আমরাও পারি, বাঙালীরাও পারে’। পঁচাত্তরে জাতির জনককে হত্যার মধ্য দিয়ে আমাদের সেই আত্মবিশ্বাসকে নড়বড়ে করে দেয়া হয়েছিল। কুচক্রীরা ছলে-বলে-কৌশলে দীর্ঘদিন যাবত ক্ষমতায় থাকার সুবাদে দেশটিকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন বানিয়ে আর ঘোরতর এক প্রতিক্রিয়াশীল দেশে রূপান্তরিত করে জাতির আত্মমর্যাদাবোধ ও আত্মবিশ্বাস প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছিল। আর এজন্য গোটা জাতি অমানিশার নিকষ কালো অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। এই চরম হতাশা, অনিশ্চয়তা আর ভগ্নহৃদয় দশা থেকে উদ্ধার করে জাতির বুকে দৃঢ় প্রত্যয়ের বীজ নতুন করে বপন করেছেন শেখ হাসিনা। বিএনপি’র পৃষ্ঠপোষকতায় একাত্তরের ঘাতকরা সমাজে-রাষ্ট্রে যেভাবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গিয়েছিল তাতে করে গোলাম আযম-সাকা চৌধুরীদের দ- দূরে থাক, আদৌ তাদের বিচার করা যাবে সে ভরসাও মিছে হয়ে যাওয়ার যোগাড় হচ্ছিল! জিয়াউর রহমান ও তার দল বিএনপির বদান্যতায় এবং সর্বতো সহযোগিতায় এই ঘাতকরা তো বটেই, এমনকি যাবতীয় পাকিস্তানবাদী কুচক্রীরাও দেশে ও সমাজে সীমাহীন প্রভাব দেখায়। রাষ্ট্রীয় ও প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে নানাভাবে ঘায়েল আর পর্যুদস্ত করেছে তারা অনায়াসে। কি ভয়াবহ প্রতিক্রিয়ার শৃঙ্খলেই না সেদিন সমাজ-দেহকে ও রাষ্ট্রযন্ত্রকে অক্টোপাসের মতো বেঁধে ফেলেছিল ওরা! পাকিস্তানবাদী জঙ্গীদের সব ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের মাধ্যমে সেদিন বিএনপি-জামায়াত আমাদের সোনার দেশটিকে জঙ্গীদের অভয়াশ্রমে পরিণত করেছিল। এদের কবল থেকে বেরুনো অনেকটা দুঃস্বপ্নের মতোই মনে হতো সকলের কাছে। কিন্তু ১৯৯১ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ঘাতকদের বিরুদ্ধে সূচিত আন্দোলন আর সেই আন্দোলনের সমর্থনে শেখ হাসিনার অসম সাহসী ভূমিকার মধ্য দিয়ে দেশে স্বাধীনতাবিরোধী বধের ব্যাপারে জনমনে আশার সঞ্চার ঘটে। উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা একের পর এক মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পথে বিছানো বাধাসমূহ নির্ভীকচিত্তে উপড়ে ফেলতে থাকেন।
একটু ঠা-া মাথায় পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাবলীর দিকে চোখ রাখলেই বোঝা যাবে যে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাস্নাত বাংলাদেশটিকে সামরিক শাসকরা, জে. জিয়াউর রহমান, জে. এরশাদ, খালেদা-তারেক জিয়া-নিজামী-মওদুদ গং কোথায় নিয়ে গিয়েছিল! আর তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তানী ধারায় ফিরিয়ে এনে লুটতন্ত্রের যে রাজত্ব কায়েম করেছিল এবং জন্ম-জন্মান্তর ধরে বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যে ধরনের পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করে রেখেছিল তার সব চক্র-চক্রান্ত থেকে দেশকে বের করে আনতে কি পরিমাণ চারিত্রিক দৃঢ়তা, নৈতিক সাহস, ধীশক্তি, ধৈর্য প্রয়োজন তা দেশপ্রেমিক, সংবেদনশীল, নির্মোহচিত্ত ও সত্যনিষ্ঠ মানুষ ভিন্ন অন্যদের পক্ষে ঠাওর করা সম্ভবই নয়! আর বিএনপি, জামায়াত এবং আরও কিছু তথাকথিত ডান-বাম দলের মতলববাজদের পক্ষে তো নয়ই। মতলববাজরা ছাড়া দেশের আর সকলেই জানে যে, শেখ হাসিনা ধর্মবিশ্বাসে একনিষ্ঠ আবার ধর্ম ব্যবসায়ীদের প্রতি, সমাজে ফেতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারীদের ব্যাপারে তিনি সব সময় আপোসহীন। বঙ্গবন্ধুও ছিলেন তাই।
আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যে সখ্য, বন্ধুত্ব আর সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তোলা হচ্ছে এটি বরাবরই ছিল আওয়ামী লীগের নীতির অংশ। সেই ১৯৫৭ সালে পাকিস্তান আমলে আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী চীন সফরের মাধ্যমে প্রথম চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বের দ্বার উন্মোচন করেছিলেন। আবার চীনের ঘোরতর শত্রু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও সুসম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। তার বৈদেশিক নীতির মূলমন্ত্র ছিল ‘ভৎরবহফষু ঃড় ধষষ, সধষরপব ঃড় হড়হব’, আর স্বাধীনতার পর আমরা শহীদ সাহেবের যোগ্যতম ও সবচেয়ে বিশ্বস্ত এবং নির্ভরযোগ্য শিষ্য বঙ্গবন্ধুকেও তার শাসনামলে ওই একই বিদেশ নীতি অনুসরণ করতে দেখি। তার কন্যা শেখ হাসিনাও যে সে বৈদেশিক নীতিমালাই অনুসরণ করবেন এটাই তো স্বাভাবিক!
তাছাড়া আমরা এখন তো আর বিগত শতকের পঞ্চাশ বা ষাটের দশকে বাস করি না, এখন এমন এক ভিন্ন পৃথিবীর বাসিন্দা, যে পৃথিবীতে পরস্পরের ওপর নির্ভরশীলতা টিকে থাকার এক অপরিহার্য শর্ত। প্রযুক্তি আর বিজ্ঞানের অবিশ্বাস্য অগ্রগতির এই যুগে একজন সাধারণ মানুষকেও যে আর বোকা বানিয়ে রাখা যাবে না, যায় না- এই সত্যটি অনুধাবনের মতো মানসিক সামর্থ্য ওই আহম্মকদের নেই। আর সে কারণেই বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো যখন শেখ হাসিনার সরকারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ তখন ওই অর্বাচীনরা বিশ্ব নেতাদের দুয়ারে দুয়ারে ধর্ণা দিয়ে হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে গীবতের বন্যা বইয়ে ভাবছে যে, এই উপায়ে তারা ওই নেতাদের আশীর্বাদ লাভ করে ক্ষমতায় ফের ফিরে আসবেন। কিন্তু হিসাবে যে তারা ভুল করে বসে আছে এ ধারণা তাদের নেই। বলি, এ উপায়ে কি বার বার ভবীকে ভোলানো যায়? ক্ষমতায় ফিরতে হলে জনগণের ভাল-মন্দ, সুখ-দুঃখের সাথী হতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নিরন্তর কাজ করতে হবে।
এবার একটু ক্ষতিয়ে দেখাই যাক আওয়ামী লীগ পঁচাত্তরের পরে তিন তিনবার ক্ষমতায় থাকায় দেশে কি কি অর্জিত হয়েছে! ১৯৯৬ সালে প্রথম দফা ক্ষমতা লাভের পর জঘন্য ইনডেমনিটি বিল বাতিল এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকা-ের বিচার ও হত্যাকারীদের দ- কার্যকর করা হয়। এই সাহসী এবং অবশ্য করণীয় কাজটি করে দেশকে বিএনপি-জামায়াত নির্দেশিত পাকিস্তানী প্রতিক্রিয়াশীল ধারা থেকে একাত্তরের চেতনা ধারায় ফিরিয়ে আনার পথ প্রশস্ত করা সম্ভব হয়। এর পর থেকে নানা গতিশীল ও বাস্তবোচিত পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা, দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির রাশ টেনে ধরা, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বহুগুণ বৃদ্ধি, দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রাখা, নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ করে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ, দুদকের শক্তি বৃদ্ধি করা, হেফাজত-জামায়াত-বিএনপি’র গণবিরোধী, হিংসাত্মক ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ কঠোরহস্তে দমন, তথাকথিত বিডিআর বিদ্রোহ সফলভাবে প্রতিরোধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাঙালী সংস্কৃতির বিকাশধর্মী যাবতীয় উদ্যোগ গ্রহণ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে যুগোপযোগী করে তোলা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও দ- কার্যকর করা শেখ হাসিনা সরকারের অসংখ্য অর্জনের মধ্যে অন্যতম। তাছাড়া বিদ্যুত খাতের আশ্চর্য দ্রুত উন্নতি সাধন, জঙ্গী মোকাবেলায় অভূতপূর্ব সাফল্য ইত্যাদি তো আছেই। সামাজিক-অর্থনৈতিক এতসব সাফল্যের দরুন জাতিসংঘ এবং বিশ্বের বিভিন্ন মর্যাদাপূর্ণ ফোরামের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ যে প্রশংসা, সমাদর এবং পুরস্কার পেয়েছেন এবং পাচ্ছে তা বাংলাদেশী মাত্রের জন্য গর্বের ব্যাপার বৈ নয়।
জাতিসংঘ ঘোষিত মিলেনিয়াম গোল অর্জনে এই সরকারের সাফল্য আজ বিশ্বব্যাপী নন্দিত। দারিদ্র্য দূরীকরণে অভাবিত সাফল্য, অতি দরিদ্রের হার বহুলাংশে লাঘব করা, উন্নয়ন অবকাঠামো গড়ে তোলার আন্তরিক প্রয়াস ইত্যাদি এই সরকারকে সংশ্লিষ্ট মহলে গ্রহণযোগ্যতা এনে দিচ্ছে। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আদালতে আইনী লড়াইয়ে জয়লাভ করে বিশাল সমুদ্র সীমানা অর্জন, ভারতের সঙ্গে সীমানা নির্ধারণ ও ছিটমহল বিনিময়, ট্রানজিট বাস্তবায়নে অগ্রগতি, হাজারো প্রতিকূলতার মধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা এসবই সরকারের সাফল্যের পরিচয়বাহী এ কথা যারা না মানে তারা যে মতলববাজ তা নিশ্চয় কাউকে নতুন করে বলে বোঝানোর প্রয়োজন করে না। তবে, এত সাফল্যের পরও একেবারেই কোন ব্যর্থতা নেই তা কিন্তু নয়। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, হলমার্কসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের দ্বারা ব্যাংকের বিপুল অর্থ লোপাটের ঘটনা, দুর্নীতির বিস্তার রোধে কার্যকর ব্যবস্থার অভাব, ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতার নানা অপকর্ম, দল অভ্যন্তরে নীতি-আদর্শের চর্চার নিদারুণ অভাব ইত্যাদি দলটির জন্য অত্যন্ত লজ্জা এবং দুশ্চিন্তার ব্যাপার।
এসব বিষয়কে বিশেষভাবে বিবেচনায় নিয়ে দল যদি গতিশীল হতে পারে তাহলেই কেবল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ বিশ্বে একটি অন্যতম উন্নত দেশ হয়ে উঠতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘজীবী হোন আর দেশসেবায় সকলকে ছাড়িয়ে যান এটিই আমাদের সবার কামনা।