খেতাবপ্রাপ্ত ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতা বাড়ছে। একই সঙ্গে শহীদ পরিবারের ভাতাও বাড়ছে। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে শফিউল আলম জানান, খেতাবপ্রাপ্তদের মধ্যে বীরশ্রেষ্ঠদের সম্মানী ভাতা মাসিক ১২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করা হয়েছে। বীর উত্তমদের ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা, বীর বিক্রমদের ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা এবং বীর প্রতীকদের ৬ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে।
সচিব বলেন, সাত বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ পরিবারের জন্য সম্মানী ভাতা ২৮ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। শহীদ পরিবারের জন্য ভাতা বাড়িয়ে ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা করা হয়েছে। মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য ভাতা বাড়ানো হয়েছে ১৫ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ‘এ’ শ্রেণির সম্মানী ভাতা বাড়ানো হয়েছে ৩০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা। ‘বি’ শ্রেণির ২০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা। ‘সি’ শ্রেণির ১৬ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা। ‘ডি’ শ্রেণির ৯ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এই ভাতা কার্যকর হবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান। তিনি বলেন, যারা দুই ধরনের ভাতাপ্রাপ্ত, তাদের ক্ষেত্রে যে ভাতাটি বেশি, তারা সেটি পাবেন।
এদিকে মন্ত্রিসভার গতকালের বৈঠকে বিশেষ মেধা ও যোগ্যতার অধিকারী গবেষক বা বিজ্ঞানীদের অবসর গ্রহণের বয়সসীমা-সংক্রান্ত একটি অবস্থানপত্র গ্রহণ করা হয়। অবস্থানপত্রে এ ধরনের বিজ্ঞানী-গবেষকদের অবসর নেয়ার বয়সসীমা বাড়ানোর প্রস্তাব উল্লেখ রয়েছে। তবে বয়স কত হবে, তা বলা হয়নি। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন,
এই অবস্থানপত্রে বয়স বাড়ানোর জন্য তিনটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
অন্যদিকে গতকাল বৈঠকে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির কার্যপরিধি বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। অর্থ বিভাগের পাঠানো সংশোধন প্রস্তাবে বলা হয়, সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও অধঃস্তন দপ্তর, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত পূর্ত কাজ এবং যন্ত্রপাতি সরঞ্জমাদি ও সংশ্লিষ্ট সেবা কিনতে পারবে এককভাবে। এ ক্ষেত্রে মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের প্রয়োজন হবে না। তবে এর বেশি টাকার কোনো পণ্য কিনতে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন নিতে হবে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় এককভাবে পণ্য কেনার ক্ষমতা রয়েছে ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, অনুন্নয়ন বাজেটের ক্ষেত্রে পূর্ত কাজের জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সব প্রতিষ্ঠানও ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত পণ্য এককভাবে কিনতে পারবে। তবে পূর্ত কাজের যন্ত্রপাতি ক্রয়ের এ সীমা ৫০ কোটি টাকাই থাকবে।
এ ছাড়া উন্নয়ন প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে ৩০ কোটি টাকা এবং অনুন্নয়ন বাজেটের ক্ষেত্রে ২০ কোটি টাকা এককভাবে খরচের ক্ষমতা দেয়ার প্রস্তাব বিবেচনার জন্য বলা হয়। বিদ্যমান ব্যবস্থায় দুটি ক্ষেত্রেই পরামর্শক নিয়োগে সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন ছাড়া এককভাবে ব্যয় সীমা ছিল ১০ কোটি টাকা। বর্তমানে পূর্ত কাজ ও ভৌত সেবা এবং পণ্য ও সংশ্লিষ্ট সেবা চুক্তি অনুমোদনের ক্ষেত্রে ৫০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বের যে কোনো প্রস্তাব এবং পরামর্শক সেবার জন্য ১০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বের যে কোনো প্রস্তাব বিবেচনার জন্য সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠাতে হয়।
এ ছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন আইন ২০১৬-এর খসড়া, জাতীয় লবণ নীতির খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়।
এর বাইরে যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল লেবার পার্টির ছায়া মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক ও আরেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রূপা হক স্থান পাওয়ায় মন্ত্রিসভায় অভিনন্দন প্রস্তাব পাস হয়। এ ছাড়া থাইল্যান্ডের রাজা ভূমিবল আদুলাদেজ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলামের মৃত্যুতে শোকপ্রস্তাব পাস হয়।