লাল বা হলুদ বর্ণের আকর্ষণীয় এক ফলের নাম ড্রাগন। অনেকে ফলটিকে পিটাইয়া, টিহায়া নামেও ডেকে থাকেন। ফলটি বর্তমানে আমাদের দেশের মানুষের কাছে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। ক্যাকটাস গোত্রের গাছটিকে অনেকে সবুজ ক্যাকটাস বলে থাকেন। ড্রাগন ফল গাছে শুধু রাতে ফুল দেয়। ফুল লম্বাটে সাদা ও হলুদ, অনেকটা নাইট কুইন ফুলের মতো। এ কারণে ড্রাগন ফুলকেও মুন ফ্লাওয়ার বা রাতের রানী বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে।
ভিয়েতনামে এ ফল সর্বাধিক বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়। ২০০৭ সালে বাংলাদেশে এ ফল প্রথম প্রর্বতন করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টার। এ সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. এম এ রহিম থাইল্যান্ড, ফ্লোরিডা ও ভিয়েতনামের জাতের ক্রস ঘটিয়ে নতুন বাণিজ্যিক জাত উদ্ভাবনে সাফলতা পান। বর্তমানে পুষ্টি ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তায় নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখা দিয়েছে ড্রাগন ফল।
ফলটির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে ড. রহিম জানান, ড্রাগন ফল দেখতে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও মনোমুগ্ধকর। সব ধরনের ডায়েটের জন্য এ ফলটি উপযুক্ত। এ ফল শরীরের জন্য ফাইবার সরবরাহ করে, যা পেটের পীড়া এবং লিভারের জন্য উত্তম। খাবারের পর ডেজার্ট হিসেবে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় এ ফল খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। এ ফলটি প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, মিনারেল এবং উচ্চ ফাইবার-যুক্ত। জুস তৈরির জন্যও ফলটি অত্যন্ত উপযোগী। খাদ্যমানের এ প্রাচুর্যের জন্য হয়তো উৎপাদনকারী দেশগুলোয় প্রতি বেলার খাবারের সঙ্গে এ ফল না থাকলে যেন তা অপূর্ণ থেকে যায়। ডায়াবেটিক রোগীদের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক ফলটি। ফ্রেশ ফলের চেয়ে শুষ্ক ফল বেশ কার্যকরী। এ ফল সালাদের সঙ্গেও ব্যবহার করা যায়।
ড. রহিম বলেন, ক্যাকটাস গোত্রের গাছ বিধায় বছরের যে কোনো সময়ই এ গাছ লাগানো যায়। তবে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে লাগানোই ভালো। প্রায় সব ধরনের মাটিতেই ড্রাগন ফল চাষ করা যায়। উচ্চ জৈব পদার্থসমৃদ্ধ বেলে-দোআঁশ মাটিই এ ফল চাষের জন্য উত্তম। তবে অবশ্যই পানি সেচ ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ড্রাগন ফল প্রচুর আলো পছন্দ করে। তবে এতে ফল ধরতে একটু বেশি সময় লাগে। সেজন্য কাটিংয়ের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করাই উত্তম। কাটিং থেকে উৎপাদিত একটি গাছে ফল ধরতে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগে। এ ফলে রোগবালাই খুব একটা চোখে পড়ে না। ১২ থেকে ১৮ মাস বয়সের একটি গাছে ৫ থেকে ২০টি ফল পাওয়া যায় কিন্তু পূর্ণবয়স্ক একটি গাছে ২৫ থেকে ১০০টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। হেক্টরপ্রতি ফলন ২০ থেকে ২৫ টন। ড্রাগন ফলের বাণিজ্যিক চাষাবাদ সম্পর্কে উদ্ভাবক ড. রহিম বলেন, দেখতে মনোলাভা ফলটি সব ধরনের ডায়েটের জন্য উপযুক্ত। উচ্চফলনশীল ফলটি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষের মাধ্যমে পুষ্টি ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তায় অবদান রাখবে।