লাল কাঁকড়া ও সবুজ কার্পেটের সৈকত

লাল কাঁকড়া ও সবুজ কার্পেটের সৈকতমিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া: পটুয়াখালীর কলাপাড়ার গঙ্গামতি সমুদ্রসৈকত এখন পর্যটকদের কাছে ভ্রমণের অন্যতম পর্যটন স্পট। জোয়ারের সময় কুয়াকাটা সৈকত পানিতে তলিয়ে থাকায় গঙ্গামতি সৈকতে পর্যটকদের পদচারণা ক্রমেই বাড়ছে। সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য উপভোগ ছাড়াও বিস্তীর্ণ সৈকতের বালুকাবেলায় লাল কাঁকড়ার খেলা ও প্রকৃতির অপরূপ সমারোহ কার্পেটের মতো সবুজ ঘাস পর্যটকদের আকর্ষণ করছে। শীত শুরু না হলেও এই সৈকতে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখি।
কলাপাড়ার আন্ধারমানিক নদীর বালিয়াতলী স্টেশনের খেয়া নৌকা পেরিয়ে সড়কপথে গঙ্গামতি সৈকতে পৌঁছতে মাত্র এক ঘণ্টা সময় লাগে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে কুয়াকাটার এ বিকল্প সড়কপথে গঙ্গামতি সৈকত ঘুরে কুয়াকাটায় রাতযাপন পর্যটকদের কাছে ভ্রমণের এক অন্য মাত্রা যোগ করেছে।
কলাপাড়ার ধুলাসার ইউনিয়নে গঙ্গামতি সৈকতের অবস্থান। প্রায় তিন হাজার একরেরও বেশি খাস জমি নিয়ে বিশাল সমুদ্রের বেলাভূমি। বনবিভাগের মাইলের পর মাইল সংরক্ষিত বনাঞ্চলে প্রকৃতির সব সৌন্দর্য যেন সাজিয়ে রাখা। এ বনাঞ্চলে বিরল প্রজাতির পাখিসহ মাঝেমধ্যেই চোখে পড়বে বন্য শূকর, কাঠবিড়ালি, শেয়াল ও বানর। কুয়াকাটা সৈকত
থেকে গঙ্গামতি সৈকতের দূরত্ব মাত্র সাত কিলোমিটার।
সৌন্দর্যের লীলাভূমি গঙ্গামতি সৈকতে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য অবলোকন করা যায়। এখানে গ্রীষ্ম, বর্ষাসহ সব ঋতুই পাখিদের কলরবে মুখরিত থাকে। বিস্তীর্ণ সৈকতের বালুকাবেলায় সারি সারি সাজানো জেলেদের নৌকার বহর। সকাল থেকে এ নৌকা সাজানো থাকলেও শেষ বিকেলে তা সাগরে ভাসে মাছ শিকারের জন্য। এখান থেকেই অবলোকন করা যায় সাগরে সংগ্রামী জেলেদের জীবনযাত্রা।
গঙ্গামতি সৈকতের বালুকাবেলায় ছোট ছোট লাল কাঁকড়ার খেলা পর্যটকদের জন্য বাড়তি পাওনা। বালুতটে এ লাল কাঁকড়ার লুকোচুরি দূর থেকে দেখলে মনে হবে পর্যটকদের অভ্যর্থনার জন্য যেন সৈকতজুড়ে লাল কার্পেট বিছিয়ে রাখা হয়েছে। তাই তো দেশ-বিদেশের পর্যটকরা বারবার ছুটে আসছে গঙ্গামতি সৈকতে। প্রকৃতি ও সমুদ্রের অপরূপ মিতালী যেন ঘিরে রেখেছে গোটা সৈকতের বালুকাবেলা। যেখানে কৃত্রিমতার কোনো ছাপ নেই।
গঙ্গামতি সৈকতের কাছেই মিশ্রিপাড়ায় রয়েছে শত বছরের পুরনো এশিয়ার বৃহত্তম বৌদ্ধ বিহার। এখানে ঘুরতে এলে উপভোগ করা যায় রাখাইন সংস্কৃতি। যারা এখনও নিজেদের পরনের কাপড় নিজেরাই বোনে আপন মনে। এ পাড়ায় সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে রাখাইন শিশুদের মাতৃভাষা শেখার জন্য নিজ সংস্কৃতির স্কুল। একটু দাঁড়ালেই আয়ত্ত করা যাবে তাদের ভাষা।
গঙ্গামতি সৈকতে ভ্রমণে আসা ঢাবি’র ছাত্র সুমন, তালিম ও তাদের বন্ধুরা জানান, কুয়াকাটা সৈকতের চেয়েও এ সৈকতের প্রস্থ বেশি। এ সৈকতে ঘুরে বেড়ানো সত্যিই আনন্দের। বালিয়াতলী খেয়া পার হয়ে মোটরসাইকেলযোগে এক ঘণ্টার মধ্যেই আসা সম্ভব এখানে।
গঙ্গামতি সৈকত এলাকায় পর্যটকদের রাতযাপনের জন্য এখনও হোটেল নির্মাণ না হলেও এ সৈকতকে ঘিরে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে বিভিন্ন হাউজিং কোম্পানি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির মালিকরা। ইতোমধ্যে হোটেল-মোটেল নির্মাণ কাজও শুরু হয়েছে। কয়েক বছরের মধ্যেই গঙ্গামতি সৈকত হয়ে উঠবে এক আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট।