রেশম শিল্পে ফিরছে সুদিন

আবার স্বপ্ন দেখাচ্ছে রেশম। চাঁপাইনবাবগঞ্জের এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প প্রায় বিলুপ্ত হতে বসেছিল। যদিও জেলার রেশমের সুনামটা গোটা দেশ জুড়েই। বলা যেতে পারে আম, কাঁসা-পিতলের মতই রেশমের সুনাম ছিল সারা দেশে। বর্তমানে হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নিয়েছে রেশম বোর্ড। রেশন বোর্ড জানিয়েছে, ১৯৬১ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ভোলাহাট, গোমস্তাপুর, নাচোল ও শিবগঞ্জ এলাকা নিয়ে গঠন করা হয় জেলা রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয়। সে সময় শুধু এ জেলাতেই ২২-২৩ হাজার বিঘা জমিতে রেশম চাষ হতো। কিন্তু নানান সমস্যার কারণে প্রায় বিলুপ্ত হতে বসে এ শিল্প। তবে এখন ৩০০ থেকে ৩৫০ বিঘা জমিতে চাষ হচ্ছে রেশম। জেলা রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয় ভোলাহাট সহকারী পরিচালক মো. মাহবুব উল হক জানান, রেশম শিল্প টিকিয়ে রাখতে নতুন করে চলতি বছরে ১০০ বিঘা জমিতে ১ লাখ চারা রোপণ করা হবে। এছাড়া রেশমের উৎপাদন বাড়াতে চাষিদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করা হচ্ছে। চাষিদের কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে। আর্থিক সহায়তাসহ প্রত্যেক চাষিকে চারা দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট বিভাগের তথ্যমতে, সব চেয়ে বেশি রেশম চাষ করা হয় ভোলাহাট উপজেলাতে। সেখানে চাষ হয় ৩৪৭ বিঘা, শিবগঞ্জে ৫ বিঘা, নাচোলে ১২, গোমস্তাপুরে ১০ বিঘা জমিতে। এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেশম বীজাগার থেকে বীজ উৎপাদন করে এলাকার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলাতেও পাঠানো হয়। সব চাইতে বেশি রেশম আবাদ হয় ভোলাহাট উপজেলার, চরধরমপুর, গপিনাথপুর, যাদুনগর, তাঁতিপাড়া, বজরাটেক, পিরানচক, গোহাল বাড়ি ও পোলাডাঙ্গাতে। তথ্যমতে, জেলায় মোট রেশম চাষির সংখ্যা ৫৭৭ জন। সুতা উৎপাদন করেন মাত্র ১১ জন। পলু পালনকারীর সংখ্যা ৩১৭ জন। জেলায় মোট ৪০০টি তাঁত রয়েছে। সুতা উৎপাদানকারী কারিগর রয়েছে ২২ থেকে ২৫ হাজার। রেশম বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী জেলায় রেশম চারা থেকে ৫০ হাজার কেজি গুটি উৎপাদন করা হয়। সেখান থেকে আয় হয় প্রায় দেড় কোটি টাকা। গুটি থেকে সুতা তৈরি করেও বছরে প্রায় দেড় কোটি টাকা আয় হয়। আবার সুতা থেকে কাপড় তৈরি করে প্রায় দুই কোটি টাকা আয় করেন তাঁত শিল্পীরা। ভোলাহাট উপজেলার চর ধরমপুর গ্রামের পলু পালনকারী ও চাষি সহিমুদ্দিন জানান, রেশম বোর্ড থেকে চাষিদের ডালা, মুড়াসহ কারিগরি সহায়তা দেয়া হয়। আগে চাষিদের চারা রোপণের সময় এক বিঘা জমিতে ৬ হাজার ৯০০ টাকা দেয়া হতো। কিন্তু সেটাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তিনি চার বিঘা জমিতে রেশম চাষ করে বছরে প্রায় দুই লাখ টাকা আয় করেন। তাতে খরচ হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। খরচ বাদে যে টাকা থাকে তা দিয়ে তার ৮ সদস্যের খরচ করেও কিছুটা বেঁচে থাকে। তার দাবি, ভোলাহাট উপজেলাতে আম গাছের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে রেশম চাষে জমির অভাব রয়েছে। সরকারিভাবে বিনা সুদে রেশম চাষিদের যদি ঋণ দেয়া হতো তা হলে সে টাকা দিয়ে ভোলাহাট বিলে জমি লিজ নিয়ে রেশম চাষ করা যেত। তাতে আরো আগ্রহ বাড়ত চাষিদের। বেড়ে যেত রেশম চাষির সংখ্যা। আগের ঐতিহ্যে ফিরে যেত এ শিল্প। তাঁতিপাড়া এলাকার সুতা ব্যবসায়ী জামাল উদ্দীন জানান, এক সময়ে বিদেশ থেকে সুতা আমদানি বন্ধ ছিল। সে সময়ে রেশমের ব্যাপক চাষ হতো। কিন্তু সরকার সুতা আমদানিতে ট্যাক্স মওকুফ করে দেয়ার কারণে বিদেশ থেকে সুতা আমদানি বেড়ে গেছে। বিদেশি সুতা আমদানিতে ট্যাক্স বসানো হলে বেড়ে যাবে দেশীয় সুতার চাহিদা। ফলে রেশম চাষ ছেড়ে দেয়া কৃষকরাও ফিরে আসবে এ পেশায়। পুরনো ঐতিহ্য ফিরে আসবে তাঁত শিল্পের। তিনি আরো জানান, মানুষ এখন ঐতিহ্যবাহী রেশমের পোশাকে আগ্রহী হয়েছে বেশ কিছু ক্ষেত্রে। তাই রেশমের চাষ বাড়ছে। কিন্তু সেটা খুব ধীরগতি। তবে আশার কথা হচ্ছে-রেশমে আগ্রহ বাড়ছে নতুন প্রজন্মেরও। নতুন প্রজন্মকে আগ্রহী করে তুলতে পারলে রেশনের চাহিদা বাড়বে আগের মতোই।