উন্নয়নের নেতৃত্বে ভূয়সী প্রশংসা বিদেশি অতিথিদের

আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনে অংশ নিয়ে বিদেশি রাজনীতিকরা অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করলেন আওয়ামী লীগ ও বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বের। অনেকেই বললেন শেখ হাসিনা পুরো দক্ষিণ এশিয়ার ‘বিরল নেতা’। অতিথিদের কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং গণতন্ত্র ও উন্নয়নে বর্তমান সরকারের অবদানের কথাও ছিল। আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশের চিরন্তন সঙ্গী হিসেবে আখ্যা দেয়ার পাশাপাশি দেশের প্রাচীনতম এই দলটির সঙ্গে নিজেদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথাও তুলে ধরেন ভারত, চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের নেতারা।
গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের প্রথম দিনে ১০টি দেশের ৫৫ জন বিদেশি অতিথি অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. বিনয় প্রভাকর, কংগ্রেসের নেতা গোলাম নবী আজাদ, কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়ার (মার্কসবাদী) পলিটব্যুরোর সদস্য বিমান বসু, পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি, রাশিয়ান ফেডারেশন ইউনাইটেড রাশিয়ার উপ-সাধারণ সম্পাদক সের্গেই জেলেনিয়াক, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের ভাইস-মিনিস্টার ঝেং শিয়াওসং, কানাডার কনজারভেটিভ পার্টির সংসদ সদস্য দীপক অবহারী, নেপাল কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা ড. রাম শর্মা মাহাত, নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির ড. রাজন ভট্টরাই, শ্রীলঙ্কার ধর্মমন্ত্রী এএইচ মোহাম্মদ হাশিম, অস্ট্রিয়ার সোশ্যাল ডেমক্র্যাটিক পার্টির মিসেস ফচ, ইতালির ডেমক্র্যাটিক পার্টির নেতা এবং উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী খালিদ চৌয়াকী, যুক্তরাজ্যের জেনি রাটবোন, অস্ট্রেলিয়ার সোশ্যাল ডেমক্র্যাটিক পার্টির নেতা খিউ হুগ ম্যক ডারমট ও সংসদ সদস্য এম আর. ফঙ্ এবং ভুটানের ড. দর্জি ওয়ানজি বক্তব্য রাখেন। এছাড়া দেশগুলো থেকে আগত অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ড. বিনয় প্রভাকর বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের বৃহত্তম পুরান রাজনৈতিক দল। দলটির বর্তমান সভাপতি হলেন রেয়ার লিডার। তিনি সত্যিকারের জননেত্রী। তিনি শুধু বাংলাদেশের নয়, বরং পুরো উপমহাদেশের জননেত্রী। বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের জন্যই নন, বিশ্বের সব মুক্তিকামী মানুষের নেতা ছিলেন। তিনি সারা বিশ্বের সব বঞ্চিত মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস। শেখ হাসিনার সরকারের সন্ত্রাসবিরোধী দৃঢ় পদক্ষেপের প্রশংসাও করেন ড. বিনয়।
সের্গেই জেলেজনিয়াগ বলেন, বিশ্বে রাশিয়া এবং বাংলাদেশের অবস্থান একই রকমের। বাংলাদেশ-রাশিয়ার সম্পর্ক সমতা ও পারস্পারিক শ্রদ্ধার। বিশ্বে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ঝেং শিয়াওসং বলেন, ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে এই সম্মেলনে যোগ দিতে পেরে আমি আনন্দিত। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে এবং স্থিতিশীলতা অব্যাহত আছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
গোলাম নবী আজাদ বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতীয় কংগ্রেসের সম্পর্ক খুবই শক্তিশালী। মহাত্মা গান্ধী যেমন ভারতের স্বাধীনতার জন্য গণআন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন তেমনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। আওয়ামী লীগের সম্মেলনের সফলতা কামনা করেন তিনি।
বিমান বসু বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির উন্নয়নের জন্য অসামান্য অবদান রেখেছে। দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য অবদানের জন্য বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ও বাংলাদেশের সুমহান ঐতিহ্য রয়েছে।
পার্থ চ্যাটার্জী বলেন, দুই বাংলা ভূখ-ে আলাদা হতে পারে, তবে হৃদয় থেকে কখনো আমরা আলাদা হতে পারিনি। তাই সবসময়ই আমরা এক। সোনার বাংলা তৈরি করতে কাজ করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। তিনিই ডিজিটাল বাংলাদেশের মাধ্যমে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছেন।
ড. রাম শর্মা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে জন্ম নেয়া বাংলাদেশ বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে খুবই শক্তিশালী দেশে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু একজন মহান নেতা। তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমানে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, উন্নয়ন করছে। বাংলাদেশের সঙ্গে নেপালের বন্ধুত্বও গভীর।
দীপক অবহারী বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র তৃণমূল পর্যন্ত শক্তিশালী হয়েছে। এ দিকটাই এদেশের টেকসই উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। কানাডা বাংলাদেশের আগে যেমন ছিল সামনেও থাকবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
খিউ হুগ ম্যাক ডারমট বলেন, বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। সেই ইতিহাস-ঐতিহ্য, গৌরবকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এই সুন্দর দেশটি। এদেশের উন্নয়ন, সন্ত্রাসবাদ দমন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে সরকার।
মিসেস ফচ বলেন, জেন্ডার সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন, সারা পৃথিবীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন বিশ্বজুড়ে রোল মডেল। ১৯৭৫ সালে নিহত হয়েছেন এদেশের জাতির জনকসহ তার পরিবার এবং জাতীয় চার নেতা। তাদের রক্তে গড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে উন্নতির শিখরেই শুধু উঠছে না, বিশ্বের উন্নয়নেও নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত হচ্ছে।