বৃদ্ধি করা হচ্ছে মাঠ প্রশাসনে নারীর পদায়ন

মাঠ প্রশাসনে নারীর পদায়ন দ্রুত বৃদ্ধি করা হচ্ছে। লক্ষ্য হচ্ছে মাঠে প্রশাসনে নারীর ক্ষমতায়ন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের হিসাবে বর্তমানে সিভিল সার্ভিসের ২৮ শতাংশই নারী কর্মকর্তা, ২০১১ সালে যা ছিল প্রায় ২০ শতাংশ এবং বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে এই হার ছিল মাত্র ১০/১৫ শতাংশ।
নারী কর্মকর্তারা এখন জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে সাফল্যের পরিচয় দিচ্ছেন বলে মনে করছেন সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন ইস্যুতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ভিন্নমত থাকলেও ডিসি ও ইউএনওরা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন দক্ষতার সঙ্গেই। বর্তমানে ৯ জন ডিসি ও ২১ জন এডিসি এবং ৬৭ জন ইউএনও আছেন নারী।
অতীতে কখনো এত সংখ্যক নারী একসঙ্গে সচিব, ডিসি, এডিসি ও ইউএনও হিসেবে পদায়ন পায়নি। এছাড়া প্রথমবারের মতো বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর সচিব আছেন একজন নারী কর্মকর্তা। সরকারের মোট ৬৭ জন সচিবের মধ্যে নারী আছেন ছয়জন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী সংবাদকে বলেন, ‘এখানে মূল বিষয়টি হলো- উইমেন অ্যাম্পাওয়ারমেন্ট বৃদ্ধি করা। আমরা সেটা দ্রুত করছি।’
তিনি জানান, ‘সমাজের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নারীদের সম্পৃক্ততা বাড়ানো, মাঠ প্রশাসনের পলিসি ম্যাকিংয়ে তাদের অবদানের সুযোগ বৃদ্ধি করা এবং সমাজের তৃণমূল পর্যায়ে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
সিনিয়র সচিব বলেন, ‘আমরা বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে নারীদের মাঠ প্রশাসনে পদায়ন করছি। কারণ নারীর ক্ষমতায় বৃদ্ধি না করে সমাজের যথাযথ উন্নয়ন সম্ভব নয়। নারীরা সমাজকে এগিয়ে নিতে পারছে, পারবেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে ‘উইমেনস লিডারশিপ অ্যান্ড জেন্ডার পার্সপেক্টিভ অন প্রিভেন্টিং অ্যান্ড কাউন্টারিং ভায়োলেন্স এঙ্ট্রিমিজম’ বিষয়ক এক সম্মেলনে বলেন, ‘যে সমাজ নারীর অংশগ্রহণ এবং ক্ষমতায়নের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়, সে সমাজে উগ্র চরমপন্থার কোন স্থান নেই। আমাদের নারীর কর্মক্ষেত্র প্রসারিত করার মাধ্যমে সবার জন্য টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে কাজ করে যেতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী উগ্র চরমপন্থা প্রতিরোধে নারীদের অংশগ্রহণ এবং নারী নেতৃত্বের অন্তর্ভুক্তির নতুন পরিকল্পনার জন্য সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি সবার জন্য শিক্ষানীতিতে বিশ্বাসী, বিশেষ করে নারীদের জন্য। এটাই সমাজ থেকে সন্ত্রাস এবং উগ্র চরমপন্থা হটানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। আমি আমাদের মায়েদের এক একজনকে তাদের সন্তানদের জন্য রোল মডেল হিসেবে নিজেকে উপস্থাপনের জন্য উৎসাহিত করে থাকি। দেশের প্রাইমারি স্কুলগুলোর শিক্ষকদের শতকরা ৬০ শতাংশ নারী শিক্ষক এবং তারা এই সমাজে মূল্যবোধ এবং সংযমের আলো ছড়াচ্ছে।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের বিভিন্ন স্তরে মোট কর্মকর্তা আছেন পাঁচ হাজার ৫৫১ জন। এর মধ্যে নারী এক হাজার ১৫১ জন এবং পুরুষ কর্মকর্তা আছেন চার হাজার ৪০০ জন। এ হিসেবে প্রায় ২৮ শতাংশই নারী কর্মকর্তা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারের মোট ৬৯ জন সচিবের মধ্যে ছয়জন নারী। এর নিচের অর্থাৎ অতিরিক্ত সচিবের মোট ৪২৪ জন কর্মকর্তার মধ্যে ৫৭ জন নারী, যুগ্ম সচিবের মোট ৮৩৬ জন কর্মকর্তার মধ্যে ১০০ জন নারী, উপ-সচিবের মোট এক হাজার ২৭৮ জন কর্মকর্তার মধ্যে ১৮৯ জন নারী কর্মকর্তা রয়েছেন।
এছাড়াও নিচের স্তরের সিনিয়র সহকারী সচিবের মোট এক হাজার ৬০৩ জন কর্মকর্তার মধ্যে ৩৮৭ জন নারী এবং সহকারী সচিবের মোট এক হাজার ৩৪১ জন কর্মকর্তা মধ্যে ৪১২ জন নারী কর্মকর্তা আছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে প্রথমবারের মতো গত বছরের প্রথমদিকে ইউএনও হিসেবে পদায়ন পান নারী কর্মকর্তা (সৈয়দা নাহিদা হাবিবা)। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আমি এখানে প্রায় ১১ মাস ধরে দায়িত্ব পালন করছি। কর্মকালে সবার সহযোগিতা পাচ্ছি, ভালোবাসা পাচ্ছি; তবে এখানে কোন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হইনি।’
সৈয়দা নাহিদা হাবিবা বলেন, ‘আমরা যখন চাকরিতে যোগদান করি, তখন সামাজিক প্রেক্ষাপটই বলে দেয়- আমি নারী। কিন্তু পরবর্তীতে আমাদের ঊর্ধ্বতন স্যাররা যখন ট্রেইন আপ করেন তখন আমরা অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা দিয়ে সেই প্রেক্ষাপট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হই। নারী হয়ে ওঠে অফিসার।’
মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় পদ হলো ‘ডিসি’ (ডেপুটি কমিশনার) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) পদ। ৬৪ জেলার ডিসির মধ্যে বর্তমানে ৯ জন আছেন নারী কর্মকর্তা। আর ৩৯২ জন ইউএনওর মধ্যে নারী আছেন ৬৭ জন। এছাড়াও এডিশনাল ডেপুটি কমিশনারের (এডিসি) মোট ২১০ জন কর্মকর্তার মধ্যে নারী আছেন ২১ জন।