২০০ কোটি ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে ২০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশী মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন এ সহায়তার ঘোষণা দেন। বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের দুই দিনের বাংলাদেশ সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয় এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট এনেট ডিক্সন, বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটান কার্যালয়ের কান্ট্রি ডিরেক্টর কিমিও ফান, ঢাকা কার্যালয়ের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন, সহায়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক মেনজিসটু এলেমায়েহু উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অর্থনীতির সাম্প্রতিক উন্নতি, নিরাপত্তা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেন বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট। তবে অর্থনীতিকে আরও এগিয়ে নিতে বিনিয়োগ পরিবেশের সীমাবদ্ধতাকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেন তিনি। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায়ও জোড় দিতে বলেন তিনি। দুর্নীতি রোধে বিশ্বব্যাংক আগের মতোই কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে এক প্রশ্নের জবাবে জানান সংস্থার প্রেসিডেন্ট। শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ে বিশ্বব্যাংকের পূর্ণ আস্থা রয়েছে বলে পৃথক অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন কিম।
সংবাদ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় আগামী ৩ বছরে ২০০ কোটি ডলার সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দেন কিম। এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি অনেক কমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি । এর আগে তিনি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নির্মিত স্কুলের পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম রয়েছে। এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দরিদ্র মানুষ। বাংলাদেশ দুর্যোগ মোকাবিলায় অগ্রদূতের ভূমিকায় রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের ব্যবসায় পরিবেশের উন্নতিতে জোড় দেয়ার তাগিদ দেন বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি করতে বাণিজ্য নীতিমালা সংশোধন করতে হবে। বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) পরিমাণ পাশের দেশগুলোর চেয়ে কম। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে চাইলে অবকাঠামো খাতে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হবে।
সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাবকে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেন বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট। তাছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠায়ও গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। কিম বলেন, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, সরকারি ব্যাংক, কর আহরণ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের। দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জিরো টলারেন্স অবস্থায় থাকবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সফর শেষে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি জানান, দুই দিনে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ভবিষ্যৎ স্বপ্ন সম্পর্কে জেনেছেন। এরপর আমরা বলতে পারি, ভবিষ্যতের উন্নয়ন, দারিদ্র্যবিমোচন, অধিক থেকে অধিকতর কাজের সুযোগ সৃষ্টি এবং ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বাড়াতে সব ধরনের সহায়তা এবং পাশে থাকবে বিশ্বব্যাংক।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুর্নীতির প্রশ্নে বিশ্বব্যাংকের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। এক্ষেত্রে বিশ্বের যে কোনো দেশের ক্ষেত্রে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি চলমান রয়েছে। ভবিষ্যতেও এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে আমাদের অনেকগুলো প্রকল্প চলমান রয়েছে। সেগুলো পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি যেন না হয়, সে বিষয়ে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভূয়সী প্রসংসা করে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল। বাংলাদেশ অনেকগুলো লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বেশকিছু পদক্ষেপ বাংলাদেশ হাতে নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, দারিদ্র্যবিমোচনে বাংলাদেশের সাফল্য দেখতে রোববার বিকালে ঢাকায় পৌঁছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। মঙ্গলবার বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রাকুদিয়া গ্রামে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত সোশ্যাল ডেভেলপমেট ফাউন্ডেশনের (এসডিএফ) নতুন জীবন প্রকল্প পরিদর্শন করেন তিনি।
সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচিতে পূর্ণ আস্থা রয়েছে Ñকিম : এদিকে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচির প্রতি পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। মঙ্গলবার বিকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাৎকালে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট এ আস্থা প্রকাশ করেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন বলে সরকারি বার্তা সংস্থা বাসস জানিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব জানান, দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন ও প্রশমনের বিষয়ে বিশ্বব্যাংক পুরোপুরিই অঙ্গীকারবদ্ধ।
প্রেস সচিব জানান, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট নিজ থেকেই জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে তহবিল আরও বৃদ্ধির ব্যপারে সহযোগিতার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, তার (বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট) বিশ্বাস বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে সহজে ব্যবসা করার সুযোগ সম্পর্কে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের প্রস্তাব দেন।