বাংলাদেশ মডেল ॥ দারিদ্র্য দূরীকরণে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথিবীকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত করতে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আমরা শুধু নিজেদের দেশকে নয়, এ অঞ্চল নয়, এ পৃথিবীকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত করতে চাই। এ প্রয়াসে বিশ্বব্যাংক আরও জোরালো ভূমিকা রাখবে- এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমরা সবরকম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছি। প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট বহুবিধ দুর্যোগ ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অর্জন করেছে। বিশ্বব্যাংকের মতো সংস্থার কাছ থেকে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের উদ্ভাবনী উদ্যোগের প্রশংসা গরিবী হঠানোর চেষ্টাকে আরও এগিয়ে নেবে।

আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবস উপলক্ষে সোমবার বিকেলে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট এবং এ সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী এমন মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা-ের ফলে বাংলাদেশ আজ প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। আমরা টেকসই উন্নয়নের দিকে যাচ্ছি। তবে পথচলা কখনই মসৃণ ছিল না। আমরা প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি, যার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সারাবিশ্বে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম দারিদ্র্য বিমোচনে সফলতা অর্জনের জন্য বাংলাদেশের ভূঁয়সী প্রশংসা করেন। দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জনকে ‘চমৎকার’ বলে অভিহিত করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের এ অভিজ্ঞতা অন্য দেশের মধ্যেও ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হবে। দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করে তিনি বলেন, এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অন্য দেশও সুফল পাবে। বাংলাদেশ তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবেÑ এমন আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যত উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হবে।

বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্বব্যাংক যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট এনেট ডিক্সন বক্তব্য রাখেন এবং অনুষ্ঠান শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সংস্থাটির প্রধান অর্থনীতিবিদ পল রোমার। এছাড়া অনুষ্ঠানে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার এবং বিভিন্ন দাতা সংস্থার পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। এছাড়া বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী হাজীবের গাওয়া একটি দেশাত্মবোধক গানের ভিডিও পরিবেশন করা হয়।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জঙ্গী-সন্ত্রাসবাদ দমনে তার সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন ফোরামে আমি বহুবার উল্লেখ করেছি যে, বিশ্ব আজ সন্ত্রাস এবং সহিংস জঙ্গীবাদ নামক দুটি অন্যতম চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। যে কোন ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে আমার সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। দেশের জঙ্গীবাদ দমনে আমরা সক্ষম হয়েছি। জঙ্গীবাদের অভিশাপ থেকে সমাজকে মুক্ত করার লক্ষ্যে ভবিষ্যতে জঙ্গীবাদ দমন কার্যক্রমকেও আরও শাণিত করা হবে।

দ্রুত সময়ের মধ্যে দারিদ্র্য হ্রাসে বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বপরিম-লে তুলে ধরার জন্য বিশ্বব্যাংকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ স্বীকৃতি আমাদের লক্ষ্য অর্জনের প্রয়াসকে আরও বেগবান করবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ (এসডিজি) বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংক যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা গুরুত্বপূর্ণ। এসডিজি বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংকের ভূমিকা সহায়ক হবে। আর সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) বাস্তবায়ন ও অর্জনে বাংলাদেশ অন্যতম সফল দেশ হিসেবে বিবেচিত। এমডিজি বাস্তবায়নের দৃঢ় ভিত্তিকে বিবেচনায় নিয়ে আমরা এসডিজি’স বা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নের জন্য এসব লক্ষ্যসমূহ জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা ও কৌশলে অন্তর্ভুক্ত করেছি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ অমিত সম্ভাবনার দেশ। এ দেশের মানুষ অত্যন্ত সাহসী, দৃঢ়চেতা এবং পরিশ্রমী। নিজেদের ভবিষ্যত বিনির্মাণ এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য আমরা দৃঢ়প্রত্যয়ী। আমরা ইতোমধ্যে মানব উন্নয়ন সূচকে মধ্যম ক্যাটাগরির দেশ এবং মাথাপিছু আয় বিবেচনায় নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমরা সহসাই স্বল্পোন্নত দেশের ক্যাটাগরি থেকে বেরিয়ে আসব এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ।

এ সুন্দর পৃথিবীকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী সকলকে একযোগে কাজ করার উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট বহুবিধ দুর্যোগ ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অর্জন করেছে। দৃঢ় নেতৃত্ব এবং এ দেশের সাহসী ও সংগ্রামী মানুষের প্রতিকূল অবস্থা থেকে উত্তরণের সক্ষমতা বাংলাদেশকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে সাহায্য করেছে এবং বাংলাদেশ এখন অন্যান্য দেশের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

দারিদ্র্য বিমোচনে তার সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরতে গিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের সময় দারিদ্র্যের হার ছিল ৭০ শতাংশের ওপরে, যা হ্রাস পেয়ে ১৯৯১ সালে দাঁড়ায় ৫৬ দশমিক ৭ শতাংশে। আমরা বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ২২ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। দেশে বর্তমানে চরম দারিদ্র্যের হার ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। তিনি বলেন, আমাদের উন্নয়নের একটি মানবিক অবয়ব রয়েছে। দারিদ্র্য ও ঝুঁকির মধ্যে থাকা জনগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নয়ন আমাদের উন্নয়ন কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অন্যতম নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা পালন করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অসমতা দূর করতে সামাজিক নিরাপত্তা, যথোপযুক্ত কর্মসংস্থান এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক সুবিধা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের প্রায় এক-চতুর্থাংশ পরিবারকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় আনা হয়েছে। এজন্য সরকার মোট বাজেটের ১৩ শতাংশ এবং জিডিপির ২ দশমিক ৩ শতাংশ ব্যয় করছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারী ব্যয়ের সুফল নিশ্চিত করতে আমরা জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল প্রণয়ন করেছি। আমাদের লক্ষ্য হলো বিশ্ব সম্প্রদায় কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই দেশ থেকে দারিদ্র্য এবং ক্ষুধা নির্মূল করা। আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং সংস্থার অবদানের কথা তিনি গভীরভাবে স্মরণ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ বেশ বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে। গত ১০ বছরে জাতীয় আয়ের গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ, যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়ে ৭ দশমিক ০৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ২০১৭-২০ মেয়াদী সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেছি। প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা, দারিদ্র্য হ্রাস এবং সাধারণ মানুষের ক্ষমতায়নকে এ পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সর্বশেষ বছরে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণসহ গড় প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। তিনি বলেন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ১ হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া এবং বহুমাত্রিক দারিদ্র্য নিরসনের লক্ষ্য অর্জনে শক্ত ভিত গঠনের ক্ষেত্রে অন্যান্য আর্থিক সূচকসমূহের অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক মন্দা সত্ত্বেও আমাদের রফতানি ও প্রবাসী আয় এবং সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ গত সাড়ে সাত বছরে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। বিনিয়োগ হার জিডিপির ২৬ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২৯ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, ২০০৯-১০ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আকার ছিল ২৮৫ বিলিয়ন টাকা, যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৩৩ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন টাকা।

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা আরও বলেন, এগিয়ে যাওয়ার পথে আমাদের সামনে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমাদের জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছেন। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের জনমিতিক সুবিধার সদ্ব্যবহার করতে হবে। এলক্ষ্যে আমরা ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, বেশকিছু হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক প্রতিষ্ঠাসহ বেসরকারী এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক রাষ্ট্রের কাতারে শামিল হয়েছে। কয়েকটি উন্নত দেশসহ প্রায় ৩০টি দেশে আমরা সফটওয়্যার ও আইসিটি সেবা রফতানি করছি।

রূপকল্প-২০২১ এবং রূপকল্প-২০৪১ জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্য-অশিক্ষা এবং বঞ্চনামুক্ত সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রণীত মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের প্রত্যাশা আমাদের উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিদ্যমান অংশীদারিত্ব ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী হবে। বিশ্বব্যাংক আমাদের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রয়াসে বিশ্বব্যাংক আরও জোরালো ভূমিকা রাখবেÑ এ প্রত্যাশা করছি। আমরা শুধু নিজেদের দেশের নয়, শুধু এ অঞ্চলের নয়, এ পৃথিবীকে দারিদ্র্য ও ক্ষধামুক্ত করতে চাই। এলক্ষ্যে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের অর্জন চমৎকার -বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ॥ দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জনকে চমৎকার বলে অভিহিত করেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। তিনি বলেন, বাংলাদেশের এই অভিজ্ঞতা অন্য দেশের মধ্যেও ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হবে।

দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করে তিনি বলেন, এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অন্য দেশও সুফল পাবে। দারিদ্র্য বিমোচনে বৈশ্বিক অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, মাত্র এক বছরের মধ্যে পৃথিবীতে ১০ কোটি মানুষকে অতিদরিদ্র থেকে বের করে আনা সম্ভব হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ীÑ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে বাংলাদেশে অতিদরিদ্রের হার যেখানে ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ ছিল, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকায় তা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে। বিশ্বব্যাংক প্রধান বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য নতুন ধারণার প্রবর্তন যে খুবই জরুরী, তা বাংলাদেশ খুবই দ্রুত অনুধাবন করতে পেরেছে। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে নারী স্বাস্থ্যকর্মীদের দল গড়ে তুলে বাংলাদেশে ডায়রিয়ার মতো রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলার কথা স্মরণ করেন কিম। তিনি বলেন, জনগণের পেছনে বিনিয়োগ করা ঠিক ততটাই জরুরী, যতটা জরুরী অবকাঠামো ক্ষেত্রে বিনিয়োগ। অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও সেই বিনিয়োগ বাংলাদেশে সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মানবজাতিকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে বহু বছর আগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের করা অঙ্গীকারের কথা মনে করিয়ে দিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ সেই পথে বহুদূর অগ্রসর হয়েছে, ৭৫ শতাংশ দারিদ্র্যের হার নিয়ে স্বাধীন হওয়ার পর তা নামিয়ে এনেছে ২০ দশমিক ৬ শতাংশে। এই অভিযাত্রা অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশের অঙ্গীকারের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন এবং ২০৩০ সালের মধ্য টেকসই উন্নয়নের প্রতিটি লক্ষ্য পূরণের প্রত্যয়ের কথা জানান।

বিশ্বব্যংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট পল রোমার মূল প্রবন্ধে বলেন, এমনিতে অর্থনীতিতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ ‘খুব জরুরী না হলেও’ বাংলাদেশের মতো দেশের পরিস্থিতি তেমন নয়। শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর জোর দেয়ার পাশাপাশি মনে করিয়ে দেন, মান বজায় রাখাই আসল। দারিদ্র্য বিমোচনে দ্রুত উদ্যোগী হওয়ার তাগিদ দিয়ে রোমার বলেন, এক্ষেত্রে সামান্য বিলম্বও অনেক ক্ষতির কারণ হতে পারে।