নোয়াখালীর মুছাপুর ক্লোজার এখন দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রপ্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি নোয়াখালীর মুছাপুর ক্লোজার এখন দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এ পর্যটন কেন্দ্রে দেখতে ভিড় করছেন। কক্সবাজার, সিলেট, পটুয়াখালী ও চট্টগ্রামের পতেঙ্গার পর মুছাপুর ক্লোজারটি বৃহত্তর নোয়াখালীবাসীর একমাত্র দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। শুধু ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরের মানুষ নয়, প্রতিবেশী জেলা চাঁদপুর, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কুমিল্লার ভ্রমণপিপাসু মানুষ মুছাপুর ক্লোজারটিকে একমাত্র উপভোগের স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে। সম্প্রতি ক্লোজারটি দেখতে গিয়ে এসব জেলার পর্যটকদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।
সরেজমিন দেখা গেছে, নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ সীমানায় বঙ্গোপসাগরের একেবারে কোল ঘেঁষে এই মুছাপুর ক্লোজার ও ছোট ফেনী নদীর অবস্থান। এখানে সবুজ প্রকৃতি, বণ্যপ্রাণী, পাখির ঝাঁক, ফরেস্ট বাগান, ফেনী নদীর মাঝে ক্লোজার, ২৩ ভেন্ট রেগুলেটর, জেলেদের উচ্ছ্বাস আর সাগরের বিস্তীর্ণ জলরাশি মিলে নয়নাভিরাম এক সৌন্দর্যের জগৎ। সাগরে যখন জোয়ারের পানি উথলে ওঠে তখন অনন্য এক সৌন্দর্য বিকশিত হয় মুছাপুর ক্লোজরের ছোট ফেনী নদীতে। তটরেখায় আঁছড়ে পড়ে ছোট-বড় ঢেউ। প্রায় ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ৩ কিলোমিটার প্রস্থের সমুদ্র সৈকতের সবস্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখছেন পর্যটকরা। একটু দাঁড়ালেই হারিয়ে যায় ঢেউয়ের তালে তালে দুলতে থাকা জেলে নৌকাবহর, সাগরে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য। আর এসব দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন নোয়াখালী ও পার্শ^বর্তী ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলার হাজার হাজার প্রকৃতিপ্রেমীদের উপচেপড়া ভিড়।
অপরদিকে সকাল হলেই বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা মোটরসাইকেল, সিএনজি, প্রাইভেটকার, মাইক্রো, বাস, পিকআপ নিয়ে চলে আসেন মুছাপুর ক্লোজারের ছোট ফেনী নদীর তীরে। এতে বিভিন্ন কলেজ ও বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা বনভোজনের জন্য মাইক, স্পিকারের মাধ্যমে বিভিন্ন শিল্পীদের গান পরিবেশন করেন। নব দম্পতিরা নদীর পাড়ে ও ফরেস্ট বাগানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জগতে হারিয়ে যান। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মুছাপুর ক্লোজারটি পর্যটন কেন্দ্র করার জন্য উপজেলার বনবিভাগ কর্মকর্তা (রেঞ্জ) ২০১৫ সালে প্রধান বন সংরক্ষক বরাবরে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। সেটি বাস্তবায়নের পথে রয়েছেন স্থানীয়রা। তারা বলেন, এ অঞ্চলের মানুষদের ভ্রমণের একমাত্র ঠিকানাই হবে মুছাপুর ক্লোজারটি।
অন্যদিকে বিচ্ছিন্ন-ই মুছাপুর ক্লোজারের প্রাণকেন্দ্র থেকে ট্রলারযোগে দক্ষিণে যাওয়ার সময় দেখা যায় বনবিভাগের ফরেস্ট বাগান দাঁড়িয়ে আছে। বাড়তি এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শোভাবর্ধন করে এটি। একই সঙ্গে চারপাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বিভিন্ন রকমের বনজ গাছ। বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কোলাহল, বিশাল সমুদ্র সৈকত, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তসহ নানা সৌন্দর্যের দৃশ্য উপভোগ করছেন পর্যটকরা। পর্যটক ও প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে এটি একটি দৃষ্টিনন্দন স্থান। মুছাপুর ক্লোজার দক্ষিণ মুছাপুর মৌজায় ৮২১ দশমিক ৫৭ একর, চরবালুয়া (দিয়ারা) মৌজায় ১ হাজার ৮৬১ দশমিক ১০ একর ও চরবালুয়া মৌজায় ৬১৫ একর নিয়ে গড়ে উঠেছে। সর্বমোট ৩ হাজার ২৮২ দশমিক একর বনবিভাগের জমিজুড়ে রয়েছে মনোরম বনাঞ্চল।
তার মধ্যে মুছাপুর ফরেস্ট বাগানটি অন্যতম। ফরেস্ট বাগানে রয়েছে ঝাউ, কেওড়া, পিটালি, খেজুর, লতাবল, গেওয়া, শনবলই, বাবুলনাটাই, আকাশমনিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান গাছ। এখানে রয়েছে ঘুঘুসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির পাখির অভয়স্থল। শীতের মৌসুমে অতিথি পাখিরাও এখানে আসতে ভুল করে না। এমনটি জানিয়েছেন স্থানীয় কেয়ারটেকারদের কয়েকজন। তারা বলেন, এখানে পরিকল্পিতভাবে ফরেস্ট বাগানটি শুরু হয় ১৯৬৯ সালে। কোনো হিংস পশুর ভয় না থাকলেও বনে রয়েছে শিয়াল, বন বিড়াল, সাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির পশু ও পাখি। তবে সাপগুলো নিশাচর। তারা আরো জানান, এ ছাড়া বন্য মহিষ, গরু, ভেড়াও দেখা যায়। বাগানের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া সরু রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একটু ভেতরে প্রবেশ করলে মনে হবে এ যেন আরেকটি ভুবন।
বনের ভেতরেই প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট একখণ্ড শীতল ছায়াবিশিষ্ট মাঠ। এখানে একটু বিশ্রাম নেয়া যায়। পাশে রয়েছে বিশাল সমুদ্র সৈকত। এখানকার প্রকৃতি পর্যটকদের মনে মনে ও কানে কানে বলে দেয়, ভ্রমণ করো, উপভোগ কর, শিখো, মানুষ হও, প্রকৃত মানুষ। দেশি-বিদেশি ভ্রমণপিপাসুদের ভ্রমণতৃষ্ণা মেটাতে মুছাপুর ক্লোজার একটি মনোরম অবকাশ কেন্দ্র।