জেলার মিরসরাই উপজেলায় মাশরুম চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। সম্প্রতি মাশরুম চাষ করে সফলও হয়েছেন অনেকে। তাদের একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুদর্শন রায়। তিনি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল ইছাখালী ইউনিয়নের চরশরত্ গ্রামে ও মিরসরাই পৌর এলাকায় ২টি মাশরুম সেন্টার গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে প্রতিদিন ২০ কেজি করে ওয়েস্টার মাশরুম বিক্রি করেন তিনি। মাশরুম চাষে সুদিন ফিরে এসেছে তার জীবনে।
উপজেলা সদরে অবস্থিত মাশরুম সেন্টারে গিয়ে দেখা গেছে, সুদর্শন রায় কয়েকজন শ্রমিক নিয়ে মাশরুমের পরিচর্যা করছেন। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিনি মাশরুমের যত্ন নেন। শুরুতে তিনি একা মাশরুম চাষ করলেও এখন তার অধীনে ৩০ জনের অধিক শ্রমিক কাজ করেন।
সুদর্শন রায় বলেন, বর্তমানে আমরা দৈনন্দিন খাবারে শাক-সবজি হিসেবে যেগুলো খাই সবগুলোতে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়, যা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এক্ষেত্রে মাশরুম উত্পাদনে কোনো কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। পুষ্টি ও ঔষধি গুণে
ভরা সুস্বাদু এবং বিভিন্ন জটিল রোগ যেমন হূদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যানসার, উচ্চরক্তচাপ প্রতিরোধে খুবই কার্যকর মাশরুম। মাশরুমের গুণাগুণ শুনে আমি মাশরুম খাওয়ার জন্য মিরসরাইতে একাধিক স্থানে খুঁজে কোথাও পাইনি। পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম শহর থেকে কিনে নিয়ে আসি। মাশরুম খাওয়ার পর আমার কাছে খুব ভালো লাগে। তাছাড়া বিষমুক্ত খাবার হিসেবে মাশরুমের চাহিদা থাকায় এটার উত্পাদনে আমার প্রবল আগ্রহ সৃষ্টি হয়। তাই শিক্ষকতার পেশা থেকে অবসর নেওয়ার পর জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্রের অধীনে মাশরুম উন্নয়ন জোরদারকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৩ মাসের প্রশিক্ষণ নিই। পরবর্তী সময়ে ওখান থেকে মাশরুমের বীজ নিয়ে এসে মিরসরাইতে আমার নিজ এলাকা চরশরত্ গ্রামে মাশরুম সেন্টার গড়ে তুলি। ওখানে মাশরুম উত্পাদন ভালো হওয়ায় মিরসরাই সদরে আরও একটি শাখা চালু করি। প্রতিদিন সকালে বিভিন্ন জায়গাতে লোকজন এসে মাশরুম নিয়ে যায়। এখন আমার ২টি সেন্টারে প্রতিদিন ওয়েস্টার মাশরুম ২০ কেজি হয়। প্রতি কেজি ওয়েস্টার মাশরুম ৩০০ টাকা করে বিক্রি করা হয়। বিক্রি পরবর্তী সময়ে যেগুলো থাকে, সেগুলোকে শুকিয়ে পাউডার হিসেবে বিক্রি করা হয়। মাশরুমের শুকনো পাউডার প্রতি কেজি ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। ২টি সেন্টার গড়তে ১০ লাখ টাকার মতো ব্যয় হয়েছে বলে জানান তিনি। বর্তমানে তিনি ওয়েস্টার, ফলো, পিএসপি, পিওপি, এইচকে-৫১ জাতের মাশরুম উত্পাদন করেন বলে জানান।
তিনি আরও বলেন, মাশরুম চাষ করার জন্য বৃহত্ জায়গা কিংবা অনেক টাকার মূলধনের প্রয়োজন হয় না। যাদের জায়গা নেই তারা ইচ্ছা করলে বাড়িতেও মাশরুম চাষ করতে পারেন। বর্তমানে দেশে যেভাবে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে তারা ইচ্ছা করলে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে এটাকে পেশা হিসেবে নিতে পারেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে নিজেদের ভাগ্য ফেরাতে পারেন। মাশরুম চাষে কেউ আগ্রহী হলে তিনি প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সব ধরনের সাহায্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহমদ বলেন, ‘সুদর্শন রায়ের মাশরুম সেন্টারগুলোতে অল্পদিনে ভালো ফল দেওয়া শুরু হয়েছে। নিয়মিত পরিচর্যা করলে অল্প পুঁজিতে মাশরুম চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার দৃষ্টান্ত তিনি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সুদর্শন রায়কে নিয়মিত বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।