বরেন্দ্র অঞ্চলে গলদা চাষ অর্থনীতিতে যোগ হবে নতুন মাত্রা

চিংড়ি রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। সাধারণত দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপকভাবে চিংড়ি চাষ করা হয়। সম্প্রতি বরেন্দ্র অঞ্চলের রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে গলদা চিংড়ি চাষ। এরই মধ্যে সফলতাও পাওয়া গেছে। এতে গোদাগাড়ী ও পবা উপজেলার মিঠা পানিতে গলদা চিংড়ি চাষের বিপুল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। অনেক চাষি পুকুরে গলদা চিংড়ি চাষ শুরু করেছেন। মৎস্য অধিদফতরের সহযোগিতা পেলে বরেন্দ্র অঞ্চলেও ব্যাপকভাবে চিংড়ি চাষ সম্ভব হবে বলে জানান চাষিরা। এতে খুলে যাবে এ অঞ্চলের মৎস্য চাষিদের ভাগ্য। অর্থনীতিতে যোগ হবে নতুন মাত্রা।
রাজশাহী জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ২০ মৎস্য চাষি প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে গলদা চিংড়ির চাষ শুরু করেছেন। জেলার গোদাগাড়ী ও পবা উপজেলার বরেন্দ্র ভূমির মিঠা ও স্বাদু পানিতে গলদা চিংড়ি চাষ করে লাভের আশা করছেন তারা। পবা উপজেলার কর্ণহারের শহিদুল ইসলাম জানান, গলদা চিংড়ি চাষে বিশেষ কোনো পরিচর্যার দরকার হয় না। অন্যান্য কার্পজাতীয় মাছের সঙ্গেই চিংড়ি সহজে চাষ করা যায়। তবে আলাদা চাষ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। খাদ্যের ক্ষেত্রেও বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই। গলদা চিংড়ি পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যেই পরিপক্ব হয়ে ওঠে। ছয় মাসের মধ্যে এদের ওজন ১২০ থেকে ১৪০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় লাভ ভালো হচ্ছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চিংড়ি চাষে সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা পেলে এ অঞ্চলে চাষিদের ভাগ্য বদলাবে। রফতানির মাধ্যমে সচল হবে অর্থনীতির চাকা।
পবার শহিদুল ইসলাম ও হরিয়ানের আলী আকবর বলেন, শুরুতে স্বাদু পানিতে চিংড়ি চাষ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম। এলাকার অন্য মৎস্য চাষিরাও চিংড়ি চাষে লোকসানের ভয় দেখিয়ে নিরুৎসাহিত করছেন। কিন্তু গত বছর স্থানীয় মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাদের উৎসাহে চিংড়ি চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে পৃথক পৃথক পুকুরে চিংড়ি চাষ শুরু করি। সব আশঙ্কা ভয়ভীতিকে পেছনে ফেলে এখন মিঠা পানির গলদা চিংড়ি চাষ লাভের আশা জাগিয়েছে। তারা আরও জানান, নাটোর থেকে পিএল (পোস্ট লার্ভি বা পোনা চিংড়ি) সংগ্রহ করেন। আগে থেকে চিংড়ি চাষে উপযোগী করে রাখা পুকুরে ওইসব পিএল ছেড়ে দেন। পিএলগুলো মাত্র ২০ থেকে ৪৫ দিনে সুষ্ঠুভাবেই বেড়ে ওঠে কিশোর চিংড়িতে পরিণত হয়। সাধারণত এ কিশোর চিংড়িই বিক্রি করেন তারা। আলী আকবর বলেন, শুরুতে শহিদুলের কাছে থেকে কিশোর চিংড়ি সংগ্রহ করে পুকুরে ছাড়েন। তিনি মিশ্র হিসেবে চাষ করেই ভালো লাভ পান। মাত্র পাঁচ থেকে সাত মাসেই এসব চিংড়ি বাজারে বিক্রি করা যায়। তিনি বলেন, জেলায় মোটামুটি ২০ থেকে ২৫ জন চিংড়ি চাষ করছেন। তারাও চিংড়ি চাষে সফলতা পেয়েছেন।
রাজশাহী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সাহা জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলসহ জেলায় স্বাদু বা মিঠা পানিতে মূলত গলদা চিংড়ির চাষ সম্ভব। কারণ গলদা চিংড়ি স্বাদু পানিতেই বেড়ে ওঠে। তবে বাজারজাতকরণে এখনও অসুবিধা আছে। জেলাতে এখনও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তাজা মাছ বাজার দখল করে আছে। নতুন কিছু স্থায়ী করতে কিছুটা সময় লাগবে। মৎস্য চাষিদের সহযোগিতা দেয়ার জন্য আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতিও আছে। তিনি আরও জানান, চাষিদের উৎসাহী করতে পারলেই দক্ষিণাঞ্চলের মতো বরেন্দ্র অঞ্চলও চিংড়ি চাষের উৎকৃষ্ট ক্ষেত্র হয়ে উঠবে। খুলে যাবে এ অঞ্চলের মৎস্য চাষিদের ভাগ্য।