জামালপুরের ব্রহ্মপুত্রে দুই সেতু উদ্বোধনের অপেক্ষায় ১০ লাখ মানুষের স্বপ্নপূরণ

জামালপুর জেলার ইসলামপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মাণ সমাপ্তির পথে ৫৬০ মিটার দীর্ঘ দুইটি সেতু। ইসলামপুরবাসীর দীর্ঘদিনের আকাক্সক্ষা স্বপ্নের সেতু নির্মাণের আনন্দে মেতে উঠেছে স্থানীয় নারী-পুরুষ ও শিশুরা। প্রতিদিন শত শত মানুষ স্বপ্নের সেতুতে দাঁড়িয়ে ব্রহ্মপুত্রের মুক্ত হাওয়া উপভোগ এবং সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে ভিড় করছে সেতুতে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইসলামপুর উপজেলা শহর থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বরাবরই বিচ্ছিন্ন ছিল ওই উপজেলার গাইবান্ধা, গোয়ালেরচর, চরগোয়ালিনী ও চরপুটিমারী ইউনিয়ন। একই কারণে ইসলামপুর উপজেলা শহরটি সরাসরি সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন ছিল পাশর্^বর্তী বকশীগঞ্জ, শেরপুর, শ্রীবরদী ও মেলান্দহ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়ন থেকে। এতে পাঁচটি উপজেলার প্রায় ১০ লাখ মানুষ স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও এ পথে চলতে গিয়ে সড়ক যোগাযোগ ও যাতায়াতের দুর্ভোগ মোকাবিলা করেছে। ওই অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে তাদের যাতায়াতের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য বিগত সরকারগুলোর কাছে বহুবার আবেদন জানিয়েও সুফল পায়নি। সবশেষে এলাকাবাসীর দাবির মুখে স্থানীয় এমপি ফরিদুল হক খান দুলাল ২০১৩ সনের প্রথমদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ইসলামপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর ৫৬০ মিটার দীর্ঘ দুটি সেতু নির্মাণের দাবি জানান। প্রধানমন্ত্রী ইসলামপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর দুইটি সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। সেই সুবাদে বর্তমান সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ২০১৩ সনের ২২ নভেম্বর তারিখে ২০৪ কোটি ব্যয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর ৫৬০ মিটার দীর্ঘ দুটি সেতু এবং প্রায় ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করে। ওই সেতু দুটির মধ্যে একটি সেতুর নির্মাণ শুরু হয় ইসলামপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর মেলান্দহের ডেফলাঘাট এলাকায় এবং অপর সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ইসলামপুরের পাইলিংঘাট এলাকায়। জামালপুরের এলজিইডি কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এইচসিআইএল এবং টিসিসিএলের মাধ্যমে সেতু দুটির নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে। সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পরেই সেতু দুটির সংযোগ থেকে ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ দুটি সড়কের উন্নয়ন কাজও শুরু হয়। তিন বছরে সেতু দুটির নির্মাণ ও সংযোগ সড়ক পাকাকরণের কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে পৌঁছে গেছে। ওই সেতু দুটির ওপর দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাতায়াত আজও শুরু হয়নি। তবে সেতু দুটির নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সেতুর ওপর দিয়ে সাধারণ মানুষের চলাচলের পথ কিছুটা উন্মুক্ত করে দিয়েছে। আর সেদিন থেকেই শত শত মানুষ এসে ভিড় করছে সেতু দুটির ওপর। ইসলামপুরের পাইলিংঘাট এলাকায় নির্মিত সেতুর ওপর ঘুরতে আসা সিরাজাবাদ গ্রামের উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রী তানিয়া আক্তার অজন্তার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। সে তার বান্ধবীদের সঙ্গে নিয়ে দলবেঁধে এসেছে সেতুতে বেড়াতে। অজন্তা জানায়, আমাদের এদিকে কোনো বেড়ানোর জায়গা নেই। এখানে প্রায় প্রতিদিনই আসি, খুব ভালো লাগে। পরিবেশটা খুবই ভালো। সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্যটা দেখতে সবারই ভালো লাগবে। সেতু দুটি হওয়াতে আমাদের চরাঞ্চলের মানুষের যাতায়াত ও কাঁচামাল পরিবহনে সুবিধা, রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে নেয়াসহ যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। একই সেতুর ওপর চটপটি বিক্রি করছিলেন মনজুরুল ইসলাম। তার বাড়ি স্থানীয় চরচাচিয়া গ্রামে। তিনি আগে ট্রেনে ফেরি করে বাদাম বিক্রি করতেন। সেতু হওয়ার পর থেকে এখানে চটপটি, মুড়ি ভর্তা বিক্রি করে বেশ ভালোই আয় করছেন। মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘আগে বাদাম বেইচা সংসার চলতো না। সেতু হওয়ায় আমগরে ভালোই হইছে। প্রতিদিনই এখানে দোকান করি। বিক্রিও ভালো হয়। ঈদের কয়েক দিন ধরে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত কামাই হইছে। ঈদ ছাড়াও বেচা হয় প্রতিদিন ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত।’ মেলান্দহের বীর হাতিজা গ্রামের আইসক্রিম বিক্রেতা মমতাজ উদ্দিন নতুন সেতুর ওপর আইসক্রিম বিক্রি করেন। তিনি বললেন, ‘ভালোই বেচা হয়। প্রতিদিন এখানে ১ হাজার থেইকা ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বেচতাছি। ঘুরন লাগে না। দুপুরের পর আসি। সন্ধ্যার মধ্যেই ব্যবসা হয়া যায়।’ আওয়ামী লীগ সরকার ও সরকারদলীয় জনপ্রতিনিধিরা মানুষকে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা শত ভাগ বাস্তবায়ন করে। সেতুটি হওয়াতে এখন চরের মানুষের জীবনযাত্রার মান অনেকটাই উন্নত হয়েছে। বদলে গেছে প্রতিটি গ্রামের দৃশ্যপট। এ ব্যাপারে স্থানীয় এমপি ফরিদুল হক খান দুলাল জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর দুটি সেতু নির্মাণের জন্য তিনি ইসলামপুরবাসীকে কথা দিয়েছিলেন। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ইসলামপুরবাসীর যাতাযাতের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য ২০১৩ সনের প্রথম দিকে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর দুটি সেতু দুটি নির্মাণের দাবি জানান। তখন প্রধানমন্ত্রী দুটি সেতুই নিমাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। মানুষকে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা শতভাগ বাস্তবায়ন করেন। এতে লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াতের দুর্ভোগ লাঘব হয়েছে।