সারা দিন প্রাকৃতিক জলাশয়ে খাবার খেয়ে পেট শান্ত। রাতে ঘুমানোর জন্য চাই নিরাপদ স্থান। তাই সন্ধ্যা নামতেই ধবধবে সাদা বকের দল উড়াল দেয় হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ, এম এ রব স্মৃতি পাঠাগার, জেলা পরিষদ অডিটরিয়াম ও সদর থানার দিকে। সেখানকার গাছগাছালিতে তারা নির্ভয়ে রাত কাটায়। সকালে আবার চলে যায় খাবারের সন্ধানে। এভাবেই অভয়াশ্রমে দিন কাটছে বকগুলোর।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বকের নিরাপত্তায় স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন জেলা পরিষদের এম এল এস এস আবদুল কুদ্দুছ। দাফতরিক দায়িত্বের পাশাপাশি তিনি বক পাখির নিরাপত্তায় কাজ করছেন। এ কারণে এসব পাখিকে কেউ বিরক্ত করে না। কেউ বিরক্ত করতে চাইলে তিনি বাধা হয়ে দাঁড়ান। এতে অবশ্য তিনি নানা সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। তবে জেলা পরিষদ প্রশাসকসহ অন্য কর্মকর্তারা বক রক্ষায় তাকে উৎসাহ ও সহযোাগিতা করছেন। বক প্রেমিক আবদুল কুদ্দুছ বলেন, বক প্রকৃতির অলঙ্কার। তাদের রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। এ কারণে অফিসে ডিউটির পর বাকি সময়টুকু বক রক্ষায় দিয়ে যাচ্ছি। এতে টাকা-পয়সা না পেলেও মনে তৃপ্তি আসছে। তিনি জানান, বকের বিচরণ দেখতে অনেকেই সন্ধ্যায় আসেন। এখানের পাখির অবস্থান অবলোকন করে আগতরা মুগ্ধ হচ্ছেন।
হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মোঃ ইয়াছিনুল হক বলেন, পাখি শিকার দ-নীয় অপরাধ। কেউ যদি ওই এলাকার পাখিদের ওপর ঢিল ছোড়ে কিংবা শিকার করে, তাহলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এ ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
জেলা পরিষদ প্রশাসক ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী বলেন, গাছগুলোতে শুধু বকই নয়, অন্য পাখিদেরও অবস্থান রয়েছে। শুভ্র-সাদা পাখা মেলে ভোর, সকাল-সন্ধ্যায় উড়াউড়ি আর ডাকাডাকিতে এখানে প্রকৃতি পেয়েছে নতুন মাত্রা। বকের এ অভয়াশ্রমটি ঘিরে আশপাশের এলাকার মানুষের আগ্রহ বেড়েই চলেছে। মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের বন্যপ্রাণী প্রকৃৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা মিহির কুমার দে বলেন, শুনেছি জেলা পরিষদের মেহগনি, কড়ইসহ ২০ থেকে ২২টি গাছে বক বাসা বেঁধেছে। বক দেখতে আশপাশের এলাকা থেকে প্রতিদিন অনেকে আসছেন এখানে। পাখিগুলো যাতে টিকে থাকতে পারে, এ ব্যাপারে সবার সচেতন ও যতœবান হওয়া জরুরি। তিনি বলেন, এখানকার মতো হাজার হাজার বক শহরের আর কোথাও দেখা যায় না। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে দেশে অনেক পশুপাখি বিলুপ্তির পথে। এ কারণে এ পাখিগুলো রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য।