স্বপ্ন পূরণে ছায়া জাতিসংঘ

এ জাতিসংঘ তরুণদের। যাকে বলা হয়, মডেল ইউনাইটেড নেশন্স। যেখানে প্রতিনিধিত্ব করেন তরুণরা। আর তাদের নিয়েই ২৯ সেপ্টেম্ব^র রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বসেছিল ইউনিস্যাব মডেল ইউনাইটেড নেশন্স-২০১৬। ‘বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত লক্ষ্যগুলোর সামঞ্জস্য বিধানকরণ’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সম্মেলন আয়োজন করেছিল ইউনিস্যাব রাজশাহী বিভাগীয় শাখা। সম্মেলনে ছয়টি কমিটির অধীন দেশের ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩০০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। কমিটিগুলোর মধ্যে ছিল ইউনাইটেড নেশন্স এনভাইরনমেন্টাল প্রোগ্রাম, ইউএন হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল, ইকোনমিক অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল কমিটি (ইকোফিন), স্পেশাল কমিটি ফর বাংলাদেশ অ্যাফেয়ার্স, ইউএন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম এবং সিকিউরিটি কাউন্সিল।
এ আয়োজনে নেপালের প্রতিনিধিত্ব করেন সানাউল্লাহ ফাহিম। তার অভিমত, স্বপ্ন ছিল জাতিসংঘের অধিবেশনে কূটনীতিবিদ হিসেবে বসব। দেশ ও বিশ্বের মঙ্গল সাধনে অগ্রগামী পদক্ষেপ নেব। আজ আমার স্বপ্ন পূরণ হলো। দেশ ও জাতির কল্যাণে ভূমিকা রেখেছি। গড়েছি ভ্রাতৃত্ববোধ। এভাবেই স্বপ্ন পূরণের কথা বলছিলেন ইকোফিন কমিটিতে থাকা সানাউল্লাহ ফাহিম। ইউএনআইসির বাংলাদেশস্থ অফিসার ইনচার্জ মোঃ মনিরুজ্জামানও সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এমনই এক স্বপ্ন পূরণের কথা বলেছেন। তার মতে, একদিন এ শিক্ষার্থীরাই ছায়া জাতিসংঘের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে দেশের নেতৃত্ব দেবে এবং জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগদান করবে। মডেল ইউনাইটেড নেশন্স সেশন অত্যন্ত চমকপ্রদ একটি সম্মেলন এবং প্রচলিত শিক্ষার্জনের বাইরে বিভিন্ন জ্ঞানার্জন করার একটি মাধ্যম।
সম্মেলন শুরু হয় একটি সাধারণ অধিবেশনের মাধ্যমে। যেখানে দেশ ও বিদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আসা শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি হিসেবে তাদের নিজ নিজ কমিটিতে থাকার এজেন্ডাগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। এখানে যুক্তরাষ্ট্র পায় রাশিয়ার মতো শক্ত প্রতিপক্ষকে। এখানে ছিল ইসরাইল, যে তার নিজস্ব চিন্তাভাবনায় এবং স্বার্থ রক্ষায় অবিচল। বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা এবং সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে এ ছায়া জাতিসংঘ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে ছিল আইসিটি ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার অধিকারের কথা, বিশ্বব্যাপী মানুষের টেকসই ও নিরাপদ বসবাসস্থল নিশ্চিত করা। টেকসই উন্নয়নের জন্য ই-গভরনেন্স এবং এসডিজি অর্জনে নাগরিক অংশগ্রহণ। সর্বোপরি বিশ্বের সমগ্র গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত লক্ষ্যগুলোর সুষম বণ্টন এবং সামঞ্জস্য বিধান করাই এ সম্মেলনের উদ্দেশ্য। মজার বিষয় হলো, এ আলোচনার মাধ্যমে কমিটিগুলো থেকে রেজুলেশন পাস হয়েছে, যা জাতিসংঘের হেড কোয়ার্টারে পাঠানো হবে এবং ভবিষ্যতে এ সম্মেলন থেকে গ্রহীত হওয়া পরামর্শগুলো বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের বিভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে।
সম্মেলনের শেষ দিন ২ অক্টোবর কমিটি সেশন শেষে সাধারণ পরিষদে রেজুলেশন পাস করে একটি প্লেনারি সেশনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ছায়া জাতিসংঘ সম্মেলন ইউনিস্যাব মুন-২০১৬ পূর্ণতা অর্জন করে।
সম্মেলনে ভালো যোগাযোগ দক্ষতা, নেগোসিয়েশনের ক্ষমতা, গঠনমূলক বক্তব্য, তথ্যবহুল পজিশন পেপার তৈরি ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে ছয়টি কামিটিতে ২৪টি অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়।
২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর মুহম্মদ মিজানউদ্দিন, সমাজকর্ম বিভাগের সভাপতি প্রফেসর মোঃ ছাদেকুল আরেফিন প্রমুখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভিসি প্রফেসর মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, এ ধরনের সম্মেলনগুলো জাতিসংঘে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার মতো হাজারও কূটনীতিবিদ তৈরি করতে অবদান রাখছে। এর মাধ্যমে তরুণরা জাতিসংঘে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে শিখবে এবং এ স্বপ্ন পূরণে ছায়া জাতিসংঘ সম্মেলন তাদের পথপ্রদর্শক।