অবশেষে ‘ডট বাংলা’ চালুর অনুমোদন পেল বাংলাদেশ

ইন্টারনেট জগতে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়ের ও বাংলা ভাষার স্বীকৃতি হিসেবে অবশেষে ডট বাংলা (.বাংলা) ডোমেইন চালুর অনুমোদন মিলল। বিভিন্ন কারণে পাঁচ বছর ঝুলে থাকার পর গতকাল বুধবার ইন্টারনেট করপোরেশন অব অ্যাসাইনড নেমস অ্যান্ড নাম্বারস (আইসিএএনএন) এ অনুমোদন দিয়েছে।

এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম গতকাল তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, অবশেষে ‘ডট বাংলা ডোমেইন’-এর অনুমোদন

পেয়েছে বাংলাদেশ। ডোমেইনটি পেতে সিয়েরা লিওনও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। বাংলাদেশের পক্ষে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের হয়ে আইসিএএনএনের কাছে তথ্য তুলে ধরা হয় যে বাংলাদেশ একমাত্র দেশ, যে দেশের মানুষ মাতৃভাষা বাংলার জন্য সংগ্রাম করেছে, রক্ত দিয়েছে, শহীদ হয়েছে। ‘২১ ফেব্রুয়ারি’ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছে। তাই এ ভাষার ওপর বাংলাদেশের জনগণের অধিকার সর্বাগ্রে। অবশেষে আইসিএএনএন ডট বাংলা ডোমেইনটি বাংলাদেশের অনুকূলে বরাদ্দ দিয়েছে।

তারানা হালিম বর্তমানে ইউনিভার্সাল পোস্টাল কংগ্রেসে অংশ নিয়ে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অবস্থান করছেন।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত সুখবর। এ ডোমেইন চালুর জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়ে আছে। যত দ্রুত সম্ভব এটি চালু করা হবে।’

এখন এ ডোমেইন (ডট বাংলা) চালু হলে সেটি হবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ডোমেইন। ‘ডট বিডি’ নামে আরেকটি ডোমেইন বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে। তবে সেটি ইংরেজিতে লেখা। কিন্তু ‘ডট বাংলা’ লেখা থাকবে বাংলাতেই।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ডট বাংলা ডোমেইনটি চালু হলে তা একই সঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়ের এবং বাংলা ভাষার স্বীকৃতি হিসেবে কাজ করবে। ইন্টারনেট অ্যাসাইনড নাম্বারস অথরিটির (আইএএনএ) তালিকায় বাংলা ভাষায় লেখা ডোমেইন হিসেবে ‘ডট বাংলা’ হচ্ছে দ্বিতীয়। ‘ডট ভারত’ নামে বাংলায় লেখা আরেকটি ডোমেইন ওই তালিকায় আগেই স্থান পেয়েছে। সেটির স্পন্সরিং অর্গানাইজেশন হচ্ছে ন্যাশনাল ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ অব ইন্ডিয়া।

বাংলাদেশ ২০১০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আইসিএএনএনের কাছে আবেদনের পর ২০১১ সালে ডট বাংলা ডোমেইনটির আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পায়। পরের বছর আইএএনএরও অনুমোদন মেলে। ভারতও ২০১০ সালে বাংলাদেশের পাশাপাশি এ ডোমেইনের অধিকার পেতে আবেদন করে। সব দিক বিবেচনা করে আইসিএএনএন তখন ডোমেইনটি বাংলাদেশকেই বরাদ্দ দেয়। কিন্তু চালুর অনুমোদন না থাকায় এত দিন এর স্পন্সরিং অর্গানাইজেশন সম্পর্কে কোনো তথ্য ছিল না। গতকাল দেখা যায়, আইএএনএর তালিকায় ডট বাংলার স্পন্সরিং অর্গানাইজেশন হিসেবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের নাম এসেছে। ডোমেইনটির সর্বশেষ রেকর্ড আপডেটের তারিখ লেখা হয়েছে ৪ অক্টোবর, ২০১৬।

সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, পাঁচ বছর আগে ডট বাংলা ডোমেইনটি নিবন্ধন পেলেও এটি কার্যকর করাতে দেরি হওয়াতে এর অধিকার হারাতে বসেছিল বাংলাদেশ। ডোমেইনটি কে নিয়ন্ত্রণ করবে, বিটিসিএল না বিটিআরসি, এ প্রশ্নেই কেটে যায় দীর্ঘদিন। নানা প্রশ্ন ওঠায় গত জুনের দিকে ফের এর অধিকার বহাল রাখতে তৎপর হয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।