বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চার পাশের নদীগুলো উদ্ধারের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এরই অংশ হিসেবে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যার দখল ও দূষণ নিরসন করবে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ- এ তিন মেয়াদে নদীর দূষণ ও দখল রোধে কাজ করার প্রাথমিক পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি ওই চারটি নদীকে দূষণমুক্ত করতে তিনস্তরের পরিকল্পনা এবং কিছু সুপারিশসহ একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। রূপরেখায় নদী রক্ষায় একবছরের জন্য স্বল্পমেয়াদি, এক থেকে তিন বছরের জন্য মধ্যমেয়াদি এবং এক থেকে পাঁচ বছরের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। একইসঙ্গে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নৌবাহিনী সদস্যদের নিয়োজিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। গত ২৪ জুলাই নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত একটি কৌশলপত্র নৌমন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে।
আগামী ৯ অক্টোবর নদী রক্ষা জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটির সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। এদিকে আগামী রবিবার জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটির সাতজন মন্ত্রী সরেজমিনে বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চার নদী পরিদর্শন করবেন। সরেজমিনে তারা নদী দখল ও দূষণের চিত্র পর্যবেক্ষণ করবেন।
বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদী দূষণের জন্য দায়ী মূলত শিল্পবর্জ্য। ৬০ শতাংশ বর্জ্যই শিল্প খাতের। নদী চারটিতে গিয়ে পড়া বর্জ্যের ৪০ শতাংশ ট্যানারি শিল্পের এবং ২০ শতাংশ অন্যান্য শিল্প কারখানার। এ ছাড়া রয়েছে ১৫ শতাংশ কঠিন বর্জ্য, ১০ শতাংশ নৌযান বর্জ্য, ১৫ শতাংশ ডকইয়ার্ড, পলিথিন, হাসপাতাল, ইটভাটাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য। নদীর দখল ও দূষণ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা বারবার নদীতে ফেলা বর্জ্য নিয়ে কথা বলেছি। কিন্তু সরকার কর্ণপাত করেনি। বুড়িগঙ্গার পানি আর পানি নেই। বিষ হয়ে গেছে। নৌ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এসব নদীর তলদেশে ১০ ফুটের বেশি পলিথিনসহ নানা ধরনের বর্জ্য জমে আছে। এই চারটি নদীতে ট্যানারি বর্জ্য, হাসপাতাল বর্জ্য, শিল্পবর্জ্যসহ পয়ঃবর্জ্য ফেলা হচ্ছে। নদী দখল করে গড়ে তোলা হচ্ছে বড় বড় অবকাঠামো। এসব কারণে নদী চারটি তাদের স্বাভাবিক চরিত্র হারিয়েছে। প্রথমে নদীগুলোকে দূষণমুক্ত করতে হবে।
খসড়া রূপকল্পে বলা হয়েছে, নদী দূষণমুক্ত করতে নৌবাহিনীর তৈরি করা এক বছরের জন্য স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপে নদীকে দূষণ করে এমন সব ময়লার উপাদান শুরুতেই চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। একইসঙ্গে তা পরিষ্কার করতে কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। সীমানা নির্ধারণ করে নদীগুলো দখলমুক্ত করতে হবে। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাসহ নদীর প্রবাহ ঠিক রাখতে নদী খননের কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া নদীর তীর সংরক্ষণে পদক্ষেপ নিতে হবে। গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়নের অগ্রগতি তদারকিতে মনিটরিং কমিটি গঠন ও তা জোরদার করতে হবে।
ঢাকার চার নদী রক্ষা সম্পর্কে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ইত্তেফাককে বলেন, নদীগুলো ঢাকার প্রাণ। এক সময় বুড়িগঙ্গাকে ঘিরেই রাজধানী ঢাকার গোড়াপত্তন হয়েছিল। নদীগুলোর কাছে আমাদের অনেক দায়। আর এই দায়বদ্ধতা থেকেই সেগুলোকে রক্ষা করতে হবে। মন্ত্রী বলেন, বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চার নদী দূষণমুক্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে নৌবাহিনীকে। তারাই মূলত নদীর অবশিষ্ট দখলদার উচ্ছেদ এবং নদীগুলো দূষণমুক্ত করবে।