বদলে যাচ্ছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উড়োজাহাজ চলাচল ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম। পিপিপির আওতায় স্থাপিত হচ্ছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির রাডার। দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে রাডার প্রতিস্থাপনের দরপত্র যাচাই-বাছাইয়ের কার্যক্রম। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, নতুন রাডার স্থাপিত হলে দেশের আকাশপথ হবে ঝুঁকিমুক্ত। আর আগামী ২০ বছরে সরকার এ খাত থেকে আয় করবে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি। আগামী বছরের মধ্যে এই কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কর্মকর্তারা।
সূত্র জানায়, সর্বাধুনিক প্রযুক্তির রাডার ক্রয়ের জন্য দেওয়া আন্তর্জাতিক দরপত্রে বিশ্বের নামিদামি চারটি কম্পানি অংশ নেয়। প্রাথমিক বাছাইয়ে দুটি প্রতিষ্ঠান কারিগরি মূল্যায়নের জন্য যোগ্য বিবেচিত হয়েছে। দরপত্রের বিধি অনুযায়ী বেবিচক ও পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) সেলের সমন্বয়ে গঠিত ডি-ব্রিফিং সেশনে উপস্থিত হতে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, শাহজালালের বর্তমান রাডারটি ৩৫ বছরের পুরনো। দ্রুত প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি রাডার স্থাপিত না হলে যেকোনো সময় বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম ভেঙে পড়তে পারে। রাডার নিয়ে শঙ্কার কথা কালের কণ্ঠ’র কাছে স্বীকার করেন সিভিল এভিয়েশনের অ্যারো এটিএস বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা। একই সঙ্গে তিনি বলেন, অর্থ সংকটের কারণে স্পর্শকাতর এই প্রকল্প নিয়ে এগোনো যাচ্ছিল না।
রাডার বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী এহসানুল আলম চৌধুরী জানান, সর্বাধুনিক রাডার ও কন্ট্রোল টাওয়ার স্থাপনের এই প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের পিপিপি সেলের প্রথম আনসলিসিটেড প্রকল্প। পিপিপির মাধ্যমে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সিএএবির কোনো অর্থ ব্যয় হবে না। বরং আগামী ২০ বছরে সরকার দুই হাজার কোটি টাকার বেশি আয় করতে পারবে। পিপিপির আওতায় ১০ বছর পর্যন্ত বিনা মূল্যে রাডার রক্ষণাবেক্ষণ, খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ, রাডার অপারেটর ও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীসহ আনুমানিক ১৫০ জনকে দেশ-বিদেশে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রকল্পের কার্যাদেশ পাওয়া প্রতিষ্ঠানকে আগামী ১০ বছরের মধ্যে তাদের ব্যয়িত অর্থসহ লাভের একটি অংশ দেওয়া হবে। বেবিচকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তাও একই কথা বলেন।
জানা গেছে, শাহজালালে বিদ্যমান রাডারটি প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি রাডারের সমন্বয়ে গঠিত। ফরাসি সরকারের অনুদানে ১৯৮৪ সালে প্রাইমারি রাডার এবং ১৯৮৬ সালে সেকেন্ডারি রাডার স্থাপন করা হয়। ১৯৮৭ সালে চার কোটি ৫৪ লাখ, ১৯৯৪ সালে চার কোটি পাঁচ লাখ টাকা এবং ২০০৮ সালে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বর্তমান রাডারটি আপগ্রেড করা হয়। কিন্তু বিদ্যমান রাডার ব্যবস্থা বর্তমানের আধুনিক চাহিদা আর পূরণ করতে পারছে না।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল পিপিপির মাধ্যমে রাডার ব্যবস্থাপনার প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য একটি আনসলিসিটেড প্রস্তাব পায়। এই প্রস্তাবের ভিত্তিতে এবং এককালীন বিপুল আর্থিক ব্যয়ের সাশ্রয় বিবেচনা করে সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ২০১৩ সালে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নতুন রাডারসহ এয়ার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংস্কারের এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়।
সূত্র জানায়, নানা প্রক্রিয়া শেষে ২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর এই প্রকল্পে দরপত্র আহ্বান করা হয়। বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুরোধে প্রায় সাতবার পেছানোর পর ২০১৬ সালের ২২ জুন সিএএবি নির্দিষ্ট দপ্তরে দরপত্র জমার তারিখ ধার্য করে। দরপত্রে দেশি-বিদেশি চারটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এর মধ্যে মেসার্স এরোনেস ইন্টারন্যাশনাল ফ্রান্সের থ্যালেস, মেসার্স করিম অ্যাসোসিয়েটস কানাডার রেথিয়ন, উইংস এভিয়েশন স্পেনের ইন্দ্রা ও মেসার্স গেকি তাদের প্রস্তাবে তোশিবার রাডার স্থাপনের প্রস্তাব করে। এর মধ্যে থ্যালেস ও রেথিয়ন প্রাথমিক বাছাইয়ে কারিগরি মূল্যায়নের জন্য যোগ্য বিবেচিত হয়।
সিএএবি, সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত মূল্যায়ন কমিটিতে দরপত্রের কারিগরি মূল্যায়নের কাজ দ্রুততার সঙ্গে চলছে। বিষয়টি নিয়ে আরো কাজ করছে ৯টি কারিগরি সাবকমিটি। কমিটিগুলো প্রাথমিক প্রতিবেদনও দাখিল করেছে। ইতিমধ্যে ঢাকায় এসেছেন আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের প্রতিনিধিরা। তাঁরা প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা করে তাঁদের মতামত দেবেন।
বেবিচক সূত্র জানায়, বিশ্বের সব বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) ও এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট (এটিএম) ২০১৭ সালের মধ্যে যুগোপযোগী করা সংক্রান্ত ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের গাইডলাইন অনুযায়ী সিএএবি এই প্রকল্প হাতে নেয়। এই প্রকল্পে প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি রাডার স্থাপন, এডিএস-বি স্থাপন, এটিএস সেন্টার আপগ্রেড, কন্ট্রোল টাওয়ার বিল্ডিং স্থাপন, ভিএইচএস, এক্সটেন্ডেট ভিএইচএস, এইচএফ, মাস্টার ক্লক, আরসিএজি, রেকর্ডিং সিস্টেম ও ভিসিসিএস স্থাপন করা হবে।