ভালুকায় কুমিরের সাম্রাজ্য:চামড়ার পর এবার রফতানি হবে মাংস

ময়মনসিংহের ভালুকায় বানিজ্যিক ভিত্তিতে উভচর সরীসৃপ প্রাণী কুমিরের চাষ হচ্ছে ১২বছর ধরে । ইতোমধ্যে উৎপাদিত কুমিরের চামড়া রপ্তানী হয়েছে বিভিন্ন দেশে। এবার মাংস রফতানির ঘোষনা দিলেন উৎপাদকারী প্রতিষ্ঠান। সবমিলিয়ে রফতানিবাণিজ্যে কুমিরের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ভালুকা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৭কিলোমিটার দূরে ভরাডোবা-সাগরদিঘী সড়কের উপজেলার উথুরা ইউনিয়নের হাতিবেড় গ্রামে রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠানটি কুমির চাষ ও রফতানি করছে ।

কোম্পানী সূত্রে জানা যায়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় বিগত ২০০৪ সনের ৫ মে খামারটি প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা সিআইটিইএস এর অনুমোদন নিয়ে তারা ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে মালয়েশিয়ার সারওয়াত থেকে এক কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫টি পুরুষ এবং ৬০টি মা কুমির আমদানী করেন। পরে ২২ডিসেম্বর কুমিরগুলোকে খামারে অবমুক্ত করা হয়।

তখন আমদানী করা কুমিরগুলোর বয়স ছিল গড়ে ১০-১৪ বছর, আর কুমিরগুলো লম্বায় ছিল ৭-১২ ফুট । পরবর্তী সময়ে ২০০৬ সনের আগষ্ট মাসে ওই খামারের প্রথম দুটি মা কুমির ডিম দেয়া শুরু করে । ক্রমান্বয়ে কুমিরের বংশ বিস্তারের মাধ্যমে ওই খামারটি প্রায় ৮০০ কুমিরে উন্নীত হয়।

সরকারের কাছ থেকে কুমির রফতানির চুড়ান্ত অনুমোদন পেয়ে ২০০৯ সনের অক্টোবর মাসে জার্মানের হাইডেল বার্ড ইউনিভার্সিটি কুমিরের শরীরের অংশ বিশেষ থেকে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধক মেডিসিন আবিস্কারের জন্য ওই রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড থেকে কুমির রপ্তানির চুক্তিতে আবদ্ধ হয়।

২০১০ সনে ওই খামারের রফতানিযোগ্য ৩০০ কুমিরের মধ্য থেকে ৬৯ টি কুমির জার্মানে রফতানি করা হয়। বাকি ২৩১ টি কুমির ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রফতানির প্রক্রিয়া চলে । জার্মানিতে ৭০ লাখ টাকায় ৬৯টি কুমির বিক্রির মধ্য দিয়ে লাভের মুখ দেখে প্রতিষ্ঠানটি । একই সঙ্গে কুমির রফতানির দেশ হিসাবে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের নাম লিপিবদ্ধ হয় ।

কুমিরের গড় আয়ু ১০০ বছর । আমদানিকৃত কুমিরের মধ্যে বর্তমানে ২৫টি বড় পুরুষ রয়েছে। ডিম দেওয়ার মত বড় কুমিরদের প্রতি মাসে ২টন মাংস খাবার হিসেবে দেয়া হয় । বন্য অবস্থায় ১০/১২ বছর বয়সে এবং ফার্মে ৬/৭ বছর বয়সের একটি স্ত্রী কুমির বছরে একবার (এপ্রিল-মে )মাসে ৪০ থেকে ৫০ টি করে ডিম দেয় । ডিম ফুটতে সময় লাগে ৭০ থেকে ৮০ দিন।

এখানে কৃত্রিম উপায়ে ডিম ফুটানোর ব্যবস্থা রয়েছে । বর্তমানে খামারে ৪০টি পুকুর ও ১০টি হ্যাচারী রয়েছে । ২০১৩ সালে মালয়েশিয়ার সারওয়াত কুমির ফার্ম থেকে এখানে দেড় কোটি টাকা দিয়ে আরও ৪০ টি ব্রিডার কুমির ক্রয় করে আনা হয়েছে । সবমিলে বর্তমানে এ খামারে ৬০টি মা কুমির রয়েছে । এছাড়া এ খামারে নিজস্ব উৎপাদিত ছোট বড় মিলে প্রায় ২ হাজার কুমির রয়েছে যেগুলোর দৈর্ঘ্য তিন ফুট থেকে সাড়ে ছয় ফুট পর্যন্ত লম্বা।

কুমিরের কোন কিছুই “ফেলনা” নয় বলে চামড়া, মাংস, দাঁত, ও হাড় বিপণন করা যায় । চীন , জাপান, সিঙ্গাপুর, অষ্ট্রেলিয়া ,পাপুয়া নিউগিনি ও থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যমানের কুমিরের মাংসের চাহিদা রয়েছে । বর্তমানে ব্যাংকক, ভিয়েতনাম ,সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, চীনসহ অর্ধশত দেশে কুমিরের চাষ হচ্ছে।