রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদকে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের মাধ্যমে মেশিন রিডেবল স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এই কার্ড বিতরণ কার্যক্রমের সূচনা করেন তিনি। পরে আঙুল ও চোখের আইরিশের ছাপ দিয়ে এবং পুরনো জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদের কাছ থেকে স্মার্ট কার্ড গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক এবং স্মার্ট কার্ড প্রকল্পের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর মাশরাফি বিন মুর্তজা, ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মোস্তাফিজুর রহমান, সাব্বির রহমান, তাসকিন আহমেদ, সৌম্য সরকার, নাসির হোসেন, ইমরুল কায়েস ও তাইজুল ইসলামের হাতে স্মার্ট কার্ড তুলে দেন।
বক্তৃতা পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্ট কার্ডের তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৬ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা করার জন্য আমরাই প্রথম দাবি তুলেছিলাম। যদিও তখন ওই দাবি উপেক্ষা করা হয়। পরে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরি করে নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের ব্যবহার কেবল ভোটের মধে?্য সীমাবদ্ধ না রেখে নাগরিক সেবার ক্ষেত্রেও যাতে কাজে লাগানো যায়, আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর সে কাজে হাত দেয়। কারণ, আমরা চেয়েছি জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে একজন নাগরিক যাতে সঠিক সেবাটা পান সে ব্যবস্থা করা।
২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কর্মসূচি ঘোষণার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি, আজ যে স্মার্ট কার্ড আমরা প্রদান করা শুরু করলাম, এটা আমাদের সেই অঙ্গীকারেরই প্রতিফলন। ডিজিটাল বাংলাদেশ আজকে বাস্তব। আজ সেটাই প্রমাণিত হলো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনোভাবেই বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি হতে দেয়া হবে না। যারা এ ধরনের সমাজবিরোধী কর্মকা-ে সম্পৃক্ত থাকবে, তাদের শনাক্ত করতে এই কার্ড যথেষ্ট সহযোগিতা করবে। তিনি বলেন, স্মার্ট কার্ড থাকলে যে কোনো অপরাধীকে দ্রুত গ্রেফতার বা শনাক্ত করা সহজ হবে।
আদালত বা ট্রাইব?্যুনালে দ-প্রাপ্ত ব্যক্তি এবং মানসিক প্রতিবন্ধীদেরও স্মার্ট কার্ডের আওতায় আনা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারাগারে বন্দিদেরও পরিচয়পত্র দেয়া দরকার। যারা ভোট দিতে পারে, অর্থাৎ ১৮ বা তার চেয়ে বেশি বয়সী, বর্তমানে তাদেরই পরিচয়পত্র দেয়া হচ্ছে। তবে যাদের বয়স ১৮ বছরের কম, যারা ভোটার হওয়ার যোগ্য হয়নি, তাদেরও জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যত ধরনের নতুন প্রযুক্তি রয়েছে, স্মার্ট কার্ডের নিরাপত্তা রক্ষায় তা গ্রহণ করা হবে। তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কেউ যেন তথ্য ব্যবহার করে কোনো অপরাধ করতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন সিইসি কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ এবং বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ প্রতিনিধি কিমিয়াও ফ্যান। অনুষ্ঠানে ‘আইডেনটিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং এক্সেস টু সার্ভিস’ শীর্ষক এ প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মোঃ সালেহ উদ্দীন প্রকল্প সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করেন। ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, স্মার্ট কার্ড প্রদানের জন্য দেশের ১০ কোটি নাগরিকের তথ্য নিয়ে একটি তথ্যভা-ার (ডাটাবেজ) তৈরি করা হয়েছে। এর আওতায় ২০১৭ সালের মধ্যে ৯ কোটি নাগরিককে লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র প্রতিস্থাপন করে স্মার্ট কার্ড দেয়া হবে।
সূত্র জানায়, বর্তমান বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি করা হয়েছে স্মার্ট কার্ড। জাতীয় পরিচয়ের তথ্যভা-ার ও স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রত্যয়নকারী কর্তৃপক্ষের সনদপ্রাপ্ত। এটি ট্রাভেল কার্ডসহ আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন জাতীয় পরিচয়পত্র হিসেবে বিবেচিত হবে। স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র নাগরিকদের শ্রেণী, বয়স, অবস্থা-অবস্থান ও পেশাভিত্তিক রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করবে। সেবা প্রদানকারী সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অনলাইন ও অফলাইনÑ উভয় পদ্ধতিতে নাগরিকদের পরিচিতি সঠিকভাবে যাচাই করতে পারবে। তথ্যভা-ারে প্রবেশাধিকার লাভের মাধ্যমে অনলাইনে ও অফলাইনে চিপ/এমআরজেড/বারকোড/ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানারের মাধ্যমে সহজেই স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যাদি যাচাই করা সম্ভব। এরই মধ্যে সমঝোতা স্মারক সইয়ের মাধ্যমে ৬৪টি প্রতিষ্ঠান এর সেবা গ্রহণ শুরু করেছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়। এদিকে, আজ সোমবার থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ড এবং উত্তরের ১ নম্বর ওয়ার্ড, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর জনগণ ও বিলুপ্ত ছিটমহলের অধিবাসীদের মধ্যে এই কার্ড বিতরণ করা হবে।