সপ্তম স্বর্গে তামিম

‘জয়, জয় চেয়েছিনু, জয়ী আমি আজ।’
না, ‘গান্ধারীর আবেদন’-এর দুর্যোধনের মতো এমন আকুলতা তাঁর কণ্ঠে কখনো শোনা যায়নি। রান তো নিয়মিতই করেন তামিম ইকবাল। তাঁর আকুলতা যদি থেকে থাকে, তবে সেটি সেঞ্চুরির জন্য। একটি ইনিংসেই সেই আকুলতা শেষ হয়ে যায়নি, তবে প্রায় দেড় বছর পর সেঞ্চুরি তো পেলেন!
কথাটিতে একটু ফাঁক রয়ে গেল। গত মার্চেই যে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করেছেন। গত বছর টেস্টে একটি ডাবল সেঞ্চুরিও আছে। বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যানের দেড় বছরের অপেক্ষাটা আসলে এক দিনের ক্রিকেটে। গত এপ্রিলে পাকিস্তানকে ধবলধোলাই করা সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১১৬ রানে অপরাজিত ছিলেন। এরপর আর ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি পাননি তামিম।
এমন নয় যে এ সময়টায় খুব খারাপ খেলেছেন, আসলে পার করেছেন ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা সময়টাই। এ সময় ওয়ানডেতে কালকের ইনিংসটির আগে ১২ ইনিংসে ৪০ গড়ে ৪৪০ রান, ৫ ফিফটি। কিন্তু এই পাঁচ ফিফটির শুধু একটি ছাড়া বাকি সব ইনিংসেই সেঞ্চুরির ডাক শুনতে শুনতে আউট হয়ে গেছেন দেশসেরা ওপেনার।
তবু কালকের সেঞ্চুরিকে আলাদা চোখে দেখতে রাজি নন তামিম, ‘আমার জন্য প্রতিটি সেঞ্চুরি স্পেশাল। কার বিপক্ষে করছি, এটা বড় নয়। সেঞ্চুরি সেঞ্চুরিই। এটাই আমার কাছে স্পেশাল কিছু। আর এটা আজকের মতো সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে।’
কাল অবশ্য সেঞ্চুরি দূরে থাক, ২ রানও করা হতো না। মুখোমুখি হওয়া নবম বলেই মিড অনে যে ক্যাচটি দিয়েছিলেন, সেটিকে হাতের মোয়া বললেও অত্যুক্তি হয় না। কিন্তু আফগান অধিনায়ক আসগর স্টানিকজাইয়ের মাখনগলা হাত জমাতে পারল না বলটি। তামিমের রান তখন মাত্র ১। এমন সুযোগ কি তামিমকে দুবার দিতে হয়!
জীবন ফিরে পেয়েই খোলস ছেড়ে বেরোলেন তামিম। তাঁর ব্যাটের ঝাঁজটা সবার আগে টের পেলেন মিরওয়াইস আশরাফ। আগের ওভারেই সৌম্য সরকারকে ফেরানো আশরাফের দ্বিতীয় ওভারে মারা তিন চারেই ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন, দিনের বাকি সময়টা কী হতে যাচ্ছে। ১৯তম ওভারেই পেয়ে গেলেন নিজের ৩৪তম ওয়ানডে ফিফটি।
চোখজুড়ানো সব শট আর সাবলীল ব্যাটিংয়ে ধীরে ধীরে সাজিয়ে নিয়েছেন নিজের ইনিংসটা। সাব্বির রহমানকে সঙ্গী করে দলের জন্য গড়েছেন বড় জয়ের ভিত। সবকিছুই ঠিক ছিল, মিলছিল না শুধু একটা বিষয়ই। এত দুর্দান্ত এক ইনিংসের সঙ্গে এক শর কম স্ট্রাইক রেট ব্যাপারটি ঠিক যাচ্ছিল না। তামিম নিজেও বোধ হয় বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন। রহমত শাহর বলে এগিয়ে এসে মারলেন দিনের সেরা শট, এক্সট্রা কভার দিয়ে ছক্কা। আগের দুই বলেও একটি চার ও ছক্কা। ব্যস, তিনটি শটেই ৯২ স্ট্রাইক রেটটা এক লাফে ১০৪!
সেঞ্চুরি অবশ্য এর আগেই হয়ে গেছে। দওলত জাদরানের বলটা লেগ সাইডে আলতো ঠেলে দিয়েই দৌড়। উদ্যাপনটা হলো খুব সাধারণ। অথচ উপলক্ষটা বড়ই ছিল। অন্য প্রান্ত থেকে দৌড়ে আসা সাকিবকে পেরিয়ে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির একক মালিক এখন শুধু তামিমই।
তাঁর সপ্তম সেঞ্চুরিটা অবশ্য খুব বড় হতে পারল না। দিনের সেরা শটটিই শেষ স্কোরিং শট হয়ে গেল, পরের ওভারেই মোহাম্মদ নবীকে লং অফ দিয়ে তৃতীয় ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ফিরলেন তামিম। ১১৮ বলে ঠিক ১১৮ রান করে। তামিম-ঝড়ের পূর্ণরূপ না দেখার অতৃপ্তিটা তাই রয়েই গেল। অতৃপ্তি তামিমের নিজেরও, ‘আমাদের বড় সেঞ্চুরি, ১৫০-১৬০ করা উচিত। সত্যি কথা বলতে, আজ আমার সুযোগও ছিল। এটা আমার নিজেরই দোষ।’
কিছুটা অতৃপ্তি থাকা অবশ্য ভালো। ইংল্যান্ড সিরিজেও অতৃপ্ত তামিমকে যে বড় দরকার হবে বাংলাদেশের!

তামিমের ৭ সেঞ্চুরি
বিপক্ষ ভেন্যু সাল
১২৯ আয়ারল্যান্ড ঢাকা ২০০৮
১৫৪ জিম্বাবুয়ে বুলাওয়ে ২০০৯
১২৫ ইংল্যান্ড ঢাকা ২০১০
১১২ শ্রীলঙ্কা হাম্বানটোটা ২০১৩
১৩২ পাকিস্তান ঢাকা ২০১৫
১১৬* পাকিস্তান ঢাকা ২০১৫
১১৮ আফগানিস্তান ঢাকা ২০১৬