আশীর্বাদের ধান ‘আশ্বিনের ধান’

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড়ের মাথায় উড়ছে সাদা মেঘ। রোদহীন পাহাড় ও আশপাশের প্রকৃতি দেখাচ্ছে দারুণ সতেজ। পাহাড়ের তলদেশের জমিতে রোপা আউশ ধান সোনা রং ছড়িয়ে হাওয়ায় দুলছে। মেঘভাঙা রোদ আকাশে উঁকি দিলে হলুদ ধানক্ষেত উজ্জ্ব্বল হয়ে ওঠে। ধানক্ষেতের এমন ছবির ক্যানভাসে আপন মনে ধান কাটছে গোটা কয়েক চাষি। তাদের মতে এই ধান ‘আশ্বিনের ধান’। এ ধান আশীর্বাদ নিয়ে এসেছে তাদের জীবনে। এ কারণে বোরোহারা চাষির মুখে এখন হাসির ঝিলিক। হাওর জেলা হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জ। এখানে বোরো ধান চাষই হয়ে থাকে বেশি। জেলার ভূমির প্রকৃতি জলমগ্ন থাকায় বোরোই এখানকার কৃষকের প্রধান ফসল। তবে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, সদর, বিশ্বম্ভরপুর ও দোয়ারাবাজার উপজেলার সীমান্ত এলাকার দোআঁশ মাটিতে রোপা আউশের চাষ হয় বেশি। সীমান্ত এলাকার জমির প্রকৃতি উঁচু হওয়ায় ওই এলাকার কৃষকরা আউশ ধান চাষ করে থাকে। সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বোরো মৌসুম শেষেই রোপা আউশের চাষ করে কৃষকরা। মে মাসে ধান লাগানোর পর ফলন আসে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে। এ সময় ঝড়-তুফান বা শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা না থাকায় ধানের ফলনও হয় ভালো। ফলে কৃষকরা আউশ চাষ করে লাভবান হয়। প্রতি ৩০ শতাংশ জমিতে প্রায় ১৫-২০ মণ ধান পাওয়া যায়। যার বাজার মূল্য প্রায় ১৫-২০ হাজার টাকা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ছয় হাজার ৬৮৭ হেক্টর রোপা আউশ চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি তিন হাজার ২০০ হেক্টর চাষ হয়েছে সীমান্ত উপজেলা দোয়ারাবাজারে। সদর উপজেলায় এক হাজার ১০০ হেক্টর, বিশ্বম্ভরপুরে এক হাজার হেক্টর ও তাহিরপুরে ৩০০ হেক্টর জমিতে আউশ চাষ হয়েছে। বোরো ফসল কাটার পরই হাওরের চেয়ে কিছুটা উঁচু এমন জমিতেই আউশ ধান চাষ হয়ে থাকে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। তাহিরপুর সীমান্তের বাদাঘাট ইউনিয়নের বিন্নাকুলি এলাকার পুটিয়ার হাওরে গিয়ে দেখা যায় ধান কাটছে কৃষকরা। লামাশ্রম গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের সীমান্ত এলাকার জমিতে অনেকেই রোপা আউশ ধান চাষ করে। আউশের সময় প্রকৃতি শান্ত ও শিলাবৃষ্টি না থাকায় ফলন নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।’ এই জমিতে আউশ ধান কাটার পরেই তরমুজ, বাঙ্গিসহ অন্যান্য ফসল লাগানো হবে বলে তিনি জানান। একই গ্রামের কৃষক মল্লিক মিয়া বলেন, ‘খাসিয়া পাহাড়ের নিচে আমাদের যে কিছুটা নিচু ফসলি জমি রয়েছে সেসব জমিতে আমরা প্রতি বছরই আউশ ধান লাগাই। ধানও হয় ভালো। এখন আমরা সেই ধান কেটে গোলায় তুলছি।’ তিনি বলেন, “বোরো ধান তলিয়ে বা শিলায় নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও ‘আশ্বিনের ধান’ (রোপা আউশ) নষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই। এই ধানের কারণেই আমাদের কৃষকের মুুখে হাসি ফুটেছে।” তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম বলেন, তাহিরপুর সীমান্তে এ বছর প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে রোপা আউশ চাষ হয়েছে। অন্যান্য এলাকায় ধানের চার-পাঁচ বার চাষ করা গেলেও বোরো প্রধান সুনামগঞ্জে আলোক সংবেদনশীল ধানের চাষ কম হয়। তবে সীমান্তে কিছু এলাকায় রোপা আউশ চাষ হয়ে থাকে বলে তিনি জানান। সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জাহেদুল হক বলেন, সুনামগঞ্জ একফসলি বোরো এলাকা। তবে কয়েকটি উপজেলায় রোপা আউশ ধানও চাষ হয়। যেসব এলাকায় চাষ হয় এর সবগুলোই সীামান্ত এলাকা। রোপা আউশ মৌসুম এখন শেষের পথে। কৃষকরা রোপা আমন নিয়ে এখন ব্যস্ত।