শ্রমবাজার উন্নয়নে নতুন উদ্যোগ

বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের শ্রমবাজার চাঙ্গা করতে নতুন উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। এ উদ্যোগের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেসব অদক্ষ বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন, তাদের প্রত্যেককে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে। এ জন্য প্রবাসী শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিতে এবং বিদেশে গমনেচ্ছুদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে গঠিত হচ্ছে স্কিল ডেভেলপমেন্ট ডিভিশন। শিগগিরই এই ডিভিশনের কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ। রবিবার তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অভিবাসনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের ২২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ জড়িত। ফলে শ্রমিক পাঠানো ও প্রশিক্ষণের বিষয়ে কোনো কাজ করতে গেলে অনেক দফতর ঘুরতে হয়। এতে একদিকে বিদেশ গমনেচ্ছু শ্রমিকদের যেমন সময় ও শ্রম নষ্ট হয়, তেমনভাবে শ্রমিকরা বিভিন্ন দেশে তাদের প্রকৃত মজুরি থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। এমন জটিলতা থেকে বেরিয়ে আসতে এবং এখন থেকে শতভাগ দক্ষ শ্রমিক বিদেশে পাঠাতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে শুধু সৌদি আরবেই ৬০ লাখের মতো বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছেন, যার প্রায় অর্ধেকই অদক্ষ। পাশাপাশি ওমান, কুয়েত, বাহরাইন, লিবিয়া, মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। এ ছাড়া সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের অন্য যেসব দেশে বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন, তাদেরও অর্ধেকের বেশি অদক্ষ। অভিবাসী এসব শ্রমিককে শতভাগ দক্ষ করতে ইতিমধ্যে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কুয়েত, ওমান, সিঙ্গাপুর ও বাহরাইনের একাধিক কোম্পানির সঙ্গে চুরির বিষয়ে আলোচনা চলছে। বিভিন্ন শ্রেণির শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে এ ধরনের কয়েকটি কোম্পানি এবং বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মধ্যে নভেম্বরের মধ্যেই চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। ফলে এসব দেশে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকরা সেখানে বসেই প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পাবেন। তারা সেখানে চাকরিরত অবস্থায়ই প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদের দক্ষ শ্রমিক হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ পাবেন। এ ছাড়া সৌদি আরব ও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে অনেক দক্ষ শ্রমিক রয়েছেন, যাদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি নেই। এ জন্য দক্ষ হওয়া সত্ত্বেও বছরের পর বছর তাদের বেতন বাড়ে না। ফলে তাদের কর্মশালার মাধ্যমে প্রশিক্ষণের আওতায় এনে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হবে। অর্থাৎ তারা যে দক্ষ তাদের সে সনদ দেওয়া হবে। এতে সেসব শ্রমিকের বেতনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়বে বলে মনে করে সরকার। সূত্র জানায়, শ্রমবাজার সম্প্রসারণে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসগুলোকেও কাজে লাগানো হচ্ছে। বাংলাদেশি শ্রমিক বেশি রয়েছেন এমন ২৫টি দেশে অবস্থিত দূতাবাসে ২৮টি লেবার উইং রয়েছে। এসব উইংয়ের মাধ্যমে শ্রমবাজার অন্বেষণ, শ্রমিকদের কল্যাণ, ভিসা যাচাই ও নিয়োগ-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এখন থেকে শ্রমিকদের মান উন্নয়ন বা দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য সংশ্লিষ্ট উইংগুলোকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশ যেতে আগ্রহী শ্রমিকদের দক্ষ করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)। সারা দেশে অবস্থিত বিএমএইটির ৭০টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে ৪৮টি ট্রেডে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়িয়ে এর কার্যক্রম উপজেলা পর্যায়ে বিস্তৃত করা হবে। বিএমইটি সূত্র জানায়, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫৫ শতাংশ দক্ষ শ্রমিক বিদেশে যাচ্ছেন। এ সংখ্যা আরও বাড়বে। তবে গ্রামাঞ্চল থেকে নিজ উদ্যোগে যেসব শ্রমিক বিদেশে গিয়ে থাকেন, তাদের মধ্যে অদক্ষের সংখ্যা বেশি। শিগগিরই এ সংখ্যা কমিয়ে এনে শতভাগ দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শ্রমিক পাঠানো শুরু হবে বলে জানা গেছে।