কেওড়া ফলের আচারে ভাগ্য গড়ছেন ১১ নারী

সুন্দরবনের কেওড়া ফলের আচার বানিয়ে নিজেদের ভাগ্য গড়ছেন জেলার দাকোপের ইকো ভিলেজে ১১ নারী। দাকোপের বানীশান্তা ইউনিয়নের পূর্ব ঢাংমারী সুন্দরবন এলাকার নারীরা বিইডিএসের আর্থিক সহযোগিতায় বন্য ফলের এ আচার তৈরি করছেন। নির্ভেজাল আচারের গুণগত মান ও খেতে সুস্বাদু হওয়ায় এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।

বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির (বিইডিএস) পূর্ব ঢাংমারীর ইকো ভিলেজে সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, তারা কেওড়ার আচারের উপাদান প্রস্তুত করছিলেন। কথা হয় দলনেতা গৃহবধূ নমিতা হালদারের সঙ্গে। ইকো ভিলেজে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের সুন্দরবন ভ্রমণের ব্যবস্থা আছে। আমার স্বামী এখানে ট্যুর গাইডার হিসেবে কাজ করেন। ২০১২ সাল থেকে পর্যটকদের আমি নিজ হাতে রান্না করে খাওয়াই এবং খাবারের সঙ্গে দেশীয় বিভিন্ন ফলের আচার খেতে দিই। সর্বশেষ মার্চ মাসে ভিজিটে আসেন জাপানের একদল পরিবেশকর্মী। তাদেরও আমি নিজ হাতে রান্না করে খাওয়াই এবং খাবারের সঙ্গে সুন্দরবনের ফল কেওড়ার আচার পরিবেশন করি। এ আচার খেয়ে স্যাতো নামের এক কর্মকর্তা মুগ্ধ হন। তিনি বলেন, এ আচার ভালোভাবে এবং ব্যবসায়িকভিত্তিতে করতে পারলে অন্যরা যেমন খেয়ে খুশি হবেন তেমনি দিন দিন এর চাহিদা এবং ব্যবসায়িক গুরুত্বও বাড়বে। বিষয়টি শুনে বিইডিএসের প্রধান নির্বাহী মাকসুদুর রহমান এ ধরনের বনজ ফলের আচার বানানোর জন্য আগ্রহী হন। এপ্রিল মাসে তিনি পরীক্ষামূলক কিছু অর্থ দেন আচার বানানোর জন্য। তারপর থেকে অন্য দশজন নারী সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে নমিতা হালদার শুরু করেন বিভিন্ন ধরনের আচার বানানোর কাজ। নমিতা বলেন, আমরা নোয়াল, কদবেল, তেঁতুল, চালতা এবং কেওড়ার আচার তৈরি করেছি। ইতিমধ্যে মংলা এবং স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছ থেকে বিভিন্ন আইটেমের প্রায় এক হাজার বৈয়ম (পট) আচার ক্রয় করেছেন। এখন প্রচুর কেওড়া পাওয়া যায়। তাই কেওড়ার আচার তৈরি করছি। বর্তমানে অর্ডার আছে ১৫শ’ বৈয়ম কেওড়ার আচারের। সেগুলো প্রস্তুতের কাজ করছি। তিনি কেওড়ার কিছু ভেষজগুণের কথা উল্লেখ করে বলেন, কেওড়া খেলে গ্যাস ও বুকজ্বালা দূর হয়, খাদ্য হজমে সহায়তা করে, ব্লাডের কোলোস্টেরল কমিয়ে দেয় এবং কেওড়া হাইপ্রেসারের রোগীদের প্রেসার কমায়, যাদের রাত্রে ভালো ঘুম হয় না কেওড়া খেলে তাদের সুনিদ্রা হবে।

নমিতার সহযোগী বুলবুল হালদার, লাকী মৃধা, লতিকা মণ্ডল, জয়ন্তী মণ্ডল, অনিমা মণ্ডল বলছিলেন, তারা তো বেকার সময় কাটাতেন। এখন এ কাজের জন্য দৈনিক তারা ২৫০ টাকা হারে পারিশ্রমিক পান। তবে কেউ রাতে (৭টা-১১টা) অতিরিক্ত ডিউটি করলে তাকে প্রতি ঘণ্টার জন্য ৬০ টাকা হারে অতিরিক্ত দেয়া হয়। তারা বলেন, দিন দিন কেওড়ার আচারের চাহিদা বাড়ছে। তাই আমরা চিন্তা করেছি আগামী মাসে আরও ১১ নারীকে আচার বানানোর প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের কাজে লাগাব। বিইডিএসের (বেডস) প্রধান নির্বাহী মাকসুদুর রহমান বলেন, কাজটি আমরা পরীক্ষামূলকভাবে করেছি এবং সফল হয়েছি। দেশীয় ফলের আচারের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ফলে এখানে নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। আগামীতে চাহিদামতো বাজারজাতকরণের ইচ্ছা রয়েছে এবং এর জন্য সরকারি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনুমতি নিয়েই করব।

প্রসঙ্গত, প্রাকৃতিক সম্পদের ভাণ্ডার বিশাল সুন্দরবনের প্রায় সর্বত্রই কেওড়া গাছের ফল পাওয়া যায়। নির্দিষ্ট মৌসুমে হাজার হাজার টন ফল গাছের নিচে পড়েই নষ্ট হয়ে যায়। প্রকৃতির এ দানই এখন জীবনযাত্রার উন্নয়নে উপজীব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।