জনশক্তি রফতানি বেড়েছে। গত বছরের প্রথমার্ধের চেয়ে এ বছরের প্রথমার্ধে জনশক্তি রফতানি বেড়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার জনেরও বেশি। তবে এখনও বন্ধ রয়েছে জনশক্তি রফতানির অন্যতম প্রধান লিবিয়া, যুক্তরাজ্য ও ইতালির বাজার। এসব দেশের প্রতিবন্ধকতা কাটানো গেলে জনশক্তি রফতানি আরও বাড়বে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, জনশক্তি রফতানিতে যে ইতিবাচক ধারা দেখা যাচ্ছে সেটা যাতে ধরে রাখা যায় সরকারকে সে চেষ্টা করতে হবে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়াধীন জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য থেকে জানা গেছে, ২০১৬ সালের জানুয়ারি-জুন মেয়াদে (প্রথমার্ধে) বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রফতানি বেড়েছে। এই সময়ে কাজের ভিসা নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গেছে ৩ লাখ ৭২ হাজার ৮৯৫ জন বাংলাদেশি; যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫২ শতাংশ বেশি। ২০১৫ সালের প্রথমার্ধের তুলনায় ২০১৬ সালের প্রথমার্ধে ১ লাখ ২৮ হাজার ৬৫৬ জন বেশি বাংলাদেশি কাজের ভিসা নিয়ে বিদেশ গেছে।
২০১৫ সালে বছর জুড়ে ১ লাখ ৩ হাজার ৭১৮ জন নারী গৃহকর্মীসহ মোট ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৮৮১ জন বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশে কাজের ভিসা পেয়েছিল।
জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে উল্লেখযোগ্য হারে বাংলাদেশি কর্মী ওমান, কাতার এবং সৌদি আরবে কাজের ভিসা পেয়েছে। শুধু ওমানে কাজের ভিসা পেয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৩২০ জন বাংলাদেশি। এ ছাড়া ৬৭ হাজার ৭০৫ জন কর্মী কাতারে এবং ৫৭ হাজার ২৭৯ জন বাংলাদেশি কর্মী সৌদি আরবে কাজের ভিসা পেয়েছে। মূলত এ কারণেই জনশক্তি রফতানি বৃদ্ধির হার ইতিবাচক।
এ ছাড়া অন্যান্য দেশের মধ্যে জর্দান, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এবং সিঙ্গাপুরে নিয়োগ প্রক্রিয়া আগের মতো স্বাভাবিক রয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) প্রেসিডেন্ট আবুল বাশার সকালের খবরকে বলেন, সৌদি আরব, আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে নারী কর্মী নিয়োগ বৃদ্ধি জনশক্তি রফতানি বৃদ্ধিতে মূল ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু আমরা সরকারের কাছে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি, অন্যতম শীর্ষ বাজার লিবিয়ায় জনশক্তি রফতানির অনুমতি দেওয়ার জন্য। কিন্তু নিরাপত্তার অজুহাতে সরকার সে অনুমতি দিচ্ছে না। অথচ পাকিস্তান, নেপালসহ আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো ঠিকই লিবিয়ায় জনশক্তি রফতানি করছে। এতে বাজারটি আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। লিবিয়ায় জনশক্তি রফতানি করা গেলে জনশক্তি রফতানি আরও বাড়ানো যেত। কারণ কয়েক বছর আগেও লিবিয়ায় বছরে দেড় থেকে ২ লাখ জনশক্তি রফতানি করতাম আমরা।
এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, জনশক্তি রফতানির এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছি। চলতি বছর সাত লাখের বেশি বাংলাদেশি কর্মী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়া আমাদের জনশক্তি নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করলে এর চেয়ে অনেক বেশি বাংলাদেশি এ বছর বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে।
তিনি আরও বলেন, বিদেশে তরুণদের কর্মসংস্থানের জন্য নতুন নতুন গন্তব্য সন্ধানের পরিকল্পনা করা হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে বিদেশে আমাদের কর্মীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ আরও বাড়বে। নতুন নতুন দেশে কাজের সুযোগ পাবে বাংলাদেশের কর্মীরা। আমরা কর্মী নিয়োগের জন্য নতুন বাজারের সন্ধান করছি।
এদিকে অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর সকালের খবরকে বলেন, লিবিয়াসহ কয়েকটি প্রধান বাজার বন্ধ থাকার পরও জনশক্তি রফতানি বৃদ্ধি সুসংবাদ। নানা কারণে বাংলাদেশ এখন বিশ্ববাজারে আলোচিত। তারপরও জনশক্তি বাড়ছে। তবে এই ইতিবাচক ধারা যাতে ধরে রাখা যায় সরকারকে সে চেষ্টা করতে হবে। সেই বন্ধ বাজারগুলো কীভাবে খোলা যায় সে ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।