গোলাম সামদানী: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নিজস্ব আর্মড ইউনিট গঠন করা হচ্ছে। দুদককে যুগোপযোগী ও আধুনিকায়নের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আর্মড ইউনিট গঠন করতে আইনগত দিক নিয়ে কাজ শুরু করছে কমিশন। ইউনিটটি গঠন করা হলে কর্মকর্তাদের অস্ত্র দেওয়া হবে। আসামি গ্রেফতারকালে দুদক কর্মকর্তারা আক্রান্ত হলে আত্মরক্ষায় প্রয়োজনে এ অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন। দুদক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
আর্মড ইউনিট গঠনের প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল সকালের খবরকে গতকাল বলেন, প্রথমত দুদকের অফিস নিরাপত্তা, আসামি গ্রেফতার করতে গেলে পুলিশ নিয়ে যেতে হয়, আবার আসামিকে কোর্টে নিয়ে যেতে এবং আনতে পুলিশ প্রয়োজন হয়। এসব দিক বিবেচনা করে নিজস্ব আর্মড ইউনিট গঠনের জন্য কাজ করছে দুদক। দুদক সচিব বলেন, বর্তমান কমিশন দুদককে যুগোপযোগী ও আধুনিক প্রতিষ্ঠানে উন্নীতকরণে কাজ করছে। এ ধারাবাহিকতায় আর্মড ইউনিট গঠনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কমিশন অনুমোদনের পর এটি কার্যকর করতে সরকারের অনুমোদন লাগবে।
দুদক সূত্র জানায়, দুদককে যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করার পাশাপাশি দুদক কর্মকর্তাদের আসামি ধরা ও আসামিদের আদালতে আনা-নেওয়ার সময় নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে এই ইউনিট গঠন করা হচ্ছে। ইউনিটটি গঠন করা হলে অভিযোগের অনুসন্ধান ও মামলার তদন্তে নিয়োজিত কর্মকর্তারাই এ অস্ত্র পাবেন। অস্ত্রগুলোর লাইসেন্স থাকবে দুদকের নামে। দুদক নিজস্ব বিধানের আওতায় প্রযোজ্য কর্মকর্তাদের নামে অস্ত্র ইস্যু করবে। অস্ত্র থাকবে সংশ্লিষ্ট
কর্মকর্তার জিম্মায়।
দুদক সূত্র জানায়, দুদক আইনের ২০ ধারার (৩) উপধারা (২) বিধান অনুযায়ী কমিশন থেকে অনুসন্ধান ও তদন্তের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থানার একজন ওসির সমান ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক, সহকারী পরিচালক, উপ-পরিচালক এবং পরিচালকরা অনুসন্ধান ও তদন্তের দায়িত্ব পান। একই ধারার ৪ উপধারা (২) ও (৩)-এর বিধান অনুযায়ী দুদক কমিশনারও অনুসন্ধান এবং তদন্ত করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে কমিশনার এবং কমিশনের কাছ থেকে অনুসন্ধান-তদন্তের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থানার ওসির সমান ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা পুলিশ প্রবিধানের ৮৮ প্রবিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালনকালে লাইসেন্স ছাড়াই অস্ত্র বহন ও ব্যবহার করতে পারেন। একইভাবে দুদক কর্মকর্তারাও সরকারি দায়িত্ব পালনকালে অস্ত্র বহন ও ব্যবহার করতে পারবেন। এ ছাড়া ১৮৭৮ সালের আর্মড অ্যাক্টে বেসামরিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিদের অস্ত্র বহন ও ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে কমিশন দুদক কর্মকর্তাদের অস্ত্র দেওয়ার আইনগত ভিত্তি নিয়ে কাজ করছে।
জবি শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল হবে বাংলাবাজার ও কেরানীগঞ্জে
নিজস্ব প্রতিবেদক: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল বাংলাবাজার ও কেরানীগঞ্জে নিজস্ব জমিতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল সচিবালয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সদস্যদের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক হয়।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, রাজধানীর পুরান কেন্দ্রীয় কারাগারের জায়গা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নয়। এ ক্ষেত্রে কিছু করার নেই। কেরানীগঞ্জে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ২৫ বিঘা জমি কেনা আছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্রদের জন্য ১০তলা একটি আবাসিক হলের ভবন
নির্মাণ করা হবে। এ ভবনে এক হাজার ছাত্র থাকার ব্যবস্থা করা যাবে। এছাড়া ইতোমধ্যে বাংলাবাজারে ছাত্রীদের জন্য ১৭ তলার একটি হল নির্মাণের কাজ চলছে। আগামী ২০২০ সালের মধ্যে এর নির্মাণ কাজ শেষ হবে। সেখানে এক হাজার ছাত্রীর থাকার ব্যবস্থা হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য যে পরিমাণ জায়গা প্রয়োজন, সেই পরিমাণ জায়গা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই। একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, ছাত্র-ছাত্রীদের হল, শিক্ষকদের আবাসিক ভবন, ল্যাবরেটরি, লাইব্রেরি নির্মাণের মতো জায়গা বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল অথবা ঝিলমিল প্রকল্পে একটি বড় জায়গার সন্ধান করছি। এ জন্য ২৭৬ কোটি টাকার একটি প্রস্তাব প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। সিদ্ধান্ত পেলে ও জায়গা মিললে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় স্থানান্তর করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। তার আগে ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসন সমস্যা মেটানোর জন্য কেরানীগঞ্জ ও বাংলাবাজারে পৃথক দুটি হল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবার আবাসন সঙ্কট নিরসনে সমন্বিতভাবে কাজ করা হবে।
বৈঠকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, হলের দাবিতে প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।
কারিগরিতে ভর্তির পরিসংখ্যান প্রতিবেদন প্রকাশ : পরে বিকেলে বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোতে (ব্যানবেইস) কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে প্রকাশিত কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির পরিসংখ্যান বিষয়ক প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করেন শিক্ষামন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ১৩ দশমিক ১১ ভাগ শিক্ষার্থী কারিগরিতে ভর্তি হচ্ছে। এ পর্যায়ে ২০০৮ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ৮ বছরে ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে যেখানে শিক্ষার্থী ভর্তির হার বেড়েছে ৫ দশমিক ৮১ ভাগ, সেখানে কারিগরিতে এ হার বেড়েছে ১৩ দশমিক ৮৪ ভাগ। আর মাদরাসায় এ হার বেড়েছে ৪ দশমিক ২৪ ভাগ।
অনুষ্ঠানে কারিগরির ২১টি বিষয়ের বই অ্যান্ড্রয়েড বেইসড আই-বুক করতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়।
ডিজিটাল ক্লাসরুম সলিউশন প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন : এর আগে সকালে রাজধানীর বাংলামোটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে ডিজিটাল ক্লাসরুম সলিউশন (স্মার্ট বোর্ড) প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষকদের নতুন উদ্ভাবিত বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষের পাঠদানকে আকর্ষণীয় করার আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী। ৫১টি স্কুলের শিক্ষকদের এ কর্মশালায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যাক্সেস এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক ড. মাহমুদুল হক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এবং রহিমআফরোজ লিমিটেডের উপদেষ্টা সাবেক সচিব ড. মাহবুবুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।