নারী পোশাককর্মীদের বৃহত্তম ডরমিটরি চালু হচ্ছে

অবশেষে চালু হতে যাচ্ছে নারী পোশাক শ্রমিকদের জন্য বহু প্রতীক্ষিত ডরমিটরি। নির্মাণকাজ শুরুর দীর্ঘ সাড়ে চার বছর পর আগামী সেপ্টেম্বর মাসেই ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ডরমিটরি ভবনটির বরাদ্দ মনোনীত কারখানাগুলোকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। পাঁচটি ভবনের এই ডরমিটরি কমপ্লেক্সে একসঙ্গে দুই হাজার নারী শ্রমিক আবাসন সুবিধা পাবে। প্রয়োজনীয় সাজসজ্জা এবং আসবাব সংযোজনের পর নভেম্বর মাসে শ্রমিকদের বসবাস উপযোগী করে খুলে দেওয়া হবে বলে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে।

চট্টগ্রামের নারী শ্রমিকদের আবাসন সংকট নিরসনে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এবং বিজিএমইএ যৌথভাবে এই ডরমিটরি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। নগরের সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায় সিডিএর নিজস্ব সাড়ে ৩৬ কাঠা জায়গাজুড়ে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৪৪ কক্ষবিশিষ্ট পাঁচটি ছয়তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এসব কক্ষের প্রতিটিতে আটজন করে মোট এক হাজার ৯৫২ জন শ্রমিক থাকতে পারবে। ডরমিটরির প্রতিটি ভবনের নিচতলায় রাখা হয়েছে বিশ্রাম কক্ষ, টেলিভিশন কক্ষ ও অতিথিদের অপেক্ষা করার কক্ষ। এটি নারী শ্রমিকদের জন্য নেওয়া বাংলাদেশে প্রথম আবাসন প্রকল্প।

যদিও ইতিমধ্যে চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে চট্টগ্রাম ইপিজেডের অপ-সিড কো. (বিডি) লিমিটেড নারী শ্রমিকদের আবাসনে একটি ভবন নির্মাণ করেছে। অপ-সিড জাপানি মালিকানাধীন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একমাত্র এলইডি কারখানা। ৭৫০ জন নারী শ্রমিকের থাকার উপযোগী ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৮ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম ইপিজেডের ৭ নং সেক্টর-সংলগ্ন মধ্যম হালিশহরের দামপাড়ায় অবস্থিত ৫৭ হাজার ৬০০ বর্গফুটের আট তলাবিশিষ্ট আধুনিক ভবন নির্মাণ করেছে অপ-সিড।

বিজিএমইএ সূত্র জানায়, সদস্যভুক্ত ১৮টি পোশাক কারখানা ইতিমধ্যে এই ডরমিটরির সব কক্ষ সাফকবলায় কিনে নিয়েছে। বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিমধ্যে সিডিএর সঙ্গে যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করে নিয়েছে। বরাদ্দপ্রাপ্তরা হলো জিনস ২০০০ লিমিটেড, এনএইচটি ফ্যাশন লিমিটেড, প্রিয়াম গার্মেন্টস লিমিটেড, রিলায়েন্স ডেনিম ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, সেলিম অ্যান্ড ব্রাদার্স লিমিটেড, কটন টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল লিমিটেড, ক্লিফটন কটন মিলস লিমিটেড, রাউজান সোয়েটার লিমিটেড, আজম নিটিং লিমিটেড, কাট্টলী টেক্সটাইল লিমিটেড, মার্স স্পোর্টসওয়্যার লিমিটেড, ডেলটা ফ্যাশন লিমিটেড, পেনিনসুলা গার্মেন্টস লিমিটেড, আরটি ক্ল্যাসিক লিমিটেড, স্পোর্টসওয়্যার লিমিটেড, আরএসবি ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড এবং কাট্টলী টেক্সটাইল লিমিটেড (প্রস্তাবিত) প্রভৃতি। এর মধ্যে প্যাসিফিক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান জিনস ২০০০ লিমিটেড ও এনএইচটি ফ্যাশন লিমিটেডের শ্রমিকদের জন্যই নেওয়া হয়েছে ১৫১টি কক্ষ। যা মোট কক্ষের প্রায় ৬২ শতাংশ। এ প্রসঙ্গে প্যাসিফিক জিনস লিমিটেডের পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, ‘শুনেছি কোরবানির ঈদের আগেই ডরমিটরি আমাদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে। আশা করছি নভেম্বর থেকে আমাদের নারী শ্রমিকরা ডরমিটরিতে থাকার সুযোগ পাবে।’ ডরমিটরিটি বিজিএমইএভুক্ত ১৮টি প্রতিষ্ঠান নেওয়ার কারণে কিভাবে পরিচালনা করা হবে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি নাছির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘১৮টি প্রতিষ্ঠানের ১৮ জন প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি কমিটি এই ডরমিটরি পরিচালনা করবে এবং তা বিজিএমইএ মনিটরিং করবে।’

নারী শ্রমিকদের আবাসনের জন্য এই ডরমিটরিকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প দাবি করে নাছির উদ্দিন চৌধুরী আরো বলেন, ‘সিডিএর সঙ্গে আমাদের এই প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠান তারাও পিপিপি মডেলে এগিয়ে আসতে পারে।’