‘গাছবন্ধু’ আবু বকরের গল্প

আলহাজ আবু বকর গাজী। ৪০ বছর ধরে প্রকৃতির সঙ্গে তার সখ্য। সেজন্য তাকে গাছবন্ধু হিসেবেই ডাকেন সবাই। এই প্রকৃতিপ্রেমিক সাতক্ষীরায় সাত বিঘা জায়গার ওপর গড়ে তুলেছেন ‘গাজী নার্সারি’। পুরো জেলায় গাছের চারার যোগান দেয়া হয় তার এই নার্সারি থেকে। স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন সরকারি-বেসরকারি নানা খেতাব ও পুরস্কার। গতকাল কথা হয় হাজী আবু বকর গাজীর সঙ্গে। তিনি জানান, ১৯৭৭ সালে তীব্র অভাব অনটনের মধ্যে তিনি সিদ্ধান্ত নেন চারা গাছের ব্যবসা করার। ছোট ছোট বনজ ও ফলদ বৃক্ষের চারা কুড়িয়ে তা বড় করেন। এরপর এলাকাবাসীর কাছে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করতে থাকেন। তার নার্সারির চারা মরে না যাওয়ায় তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। বাড়তে থাকে ব্যবসা। ১৯৮৮ সালের ঝড়ে দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপকহারে গাছ-গাছালি সাবাড় হয়ে যায়। এরপর থেকে ব্যাপকহারে মানুষ গাছ লাগাতে শুরু করে। একটি গাছ মারা পড়লে তিনটি গাছ লাগানোর মনমানসিকতা তৈরি হয়। এছাড়া সরকারও জাতীয় প্রচার মাধ্যমে গাছ লাগাতে সব শ্রেণি পেশার মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। যা চলমান।
এরপর থেকে আর গাছ নিয়ে ভাবনা করতে হয়নি। নার্সারিতে বেচা বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় বৃক্ষের প্রসার ঘটাতে তিনি বাড়াতে থাকেন মানুষের চাহিদানুযায়ী চারা গাছের সংখ্যাও। বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারার সঙ্গে বর্তমানে তিনি বিদেশি হাইব্রিড জাতের চারাও বিক্রি করেন। অপেক্ষাকৃত কম দামে আশানুরূপ গাছের চারা পাওয়ার চূড়ান্ত নিশ্চয়তা থাকায় দেশের দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এখন ছুটে আসেন গাজী নার্সারিতে। বর্তমানে দেশি বিদেশি হরেক প্রজাতির ২৫৬ প্রকার গাছের চারা আছে তার নার্সারিতে। দেশের বহু মানুষ এসব গাছের নামও জানেন না। প্রতিদিন তার নার্সারিতে গড়ে ১০ হাজার টাকার গাছের চারা বিক্রি হয়। এলাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের বৃক্ষপ্রেমীরাই তার চারা গাছের ক্রেতা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, গাছ দেখা ও গাছ চিনতে এলাকার স্কুল কলেজের ছেলে মেয়েরাও তার নার্সারিতে আসে। বিশেষ করে কৃষি বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা গাছের সঙ্গে পরিচিত হতে ভিড় করে। হাজী আবু বকর গাজী জানান, সন্তানের মতো করে পরম স্নেহে তিনি তার নার্সারির চারাগুলোকে বড় করে তোলেন। প্রথমে লাভের আশায় এসব করলেও এখন কিছুটা সামাজিক দায়িত্ব নিয়েই করেন নার্সারির ব্যবসা। তার মতে গাছ না থাকলে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটবে। মানুষের স্বাভাবিক জীবনধারা টিকিয়ে রাখাসহ বেঁচে থাকতে হলে বেশি বেশি গাছ লাগাতে হবে। তাই ‘গাছ লাগান-পরিবেশ বাঁচান,। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, মিষ্টভাষী এই মানুষটি চারা গাছ বিক্রি করে শুধু আর্থিক সাফল্যই আসেনি। ভালো মানের চারা উৎপাদন, বিক্রি ও সংগ্রহে থাকায় পেয়েছে সরকারি-বেসরকারি নানা খেতাব ও পুরস্কার। চলতি বছরেও তিনি জেলার শ্রেষ্ঠ নার্সারি মালিক হিসাবে জেলা প্রশাসনের হাত থেকে পুরস্কারসহ সম্মাননা পেয়েছেন।
হাজী আবু বকর গাজী ১৯৭৭ সালে বর্গা নিয়ে ২৫ কাঠা জমির ওপর নার্সারি গড়ে তোলেন। বর্তমানে যার আয়তন বেড়ে সাত বিঘায় পরিণত হয়েছে। সাত বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা নার্সারির মালিক তিনি। নার্সারি করে ভূসম্পত্তির মালিক হওয়া ছাড়াও তিনি হজব্রত পালন করেন। সংসার জীবনেও তিনি দারুণ সুখী মানুষ। সদালাপী নার্সারি মালিক আবু বক্কর তিন মেয়ে ও দুই ছেলের জনক। সন্তানদেরও তিনি গড়ে তুলেছেন সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে।