এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইয়ে শক্তিধর ইরানকে ৩-০ গোলে হারিয়ে শুভ সূচনা করেছে বাংলাদেশ। শনিবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে এই জয় পায় গোলাম রাব্বানী ছোটনের শিষ্যরা। অনূর্ধ্ব-১৬ পর্যায়ে ইরানের বিপক্ষে এটিই বাংলাদেশের প্রথম জয়। তবে অনূর্ধ্ব-১৪ পর্যায়ে ইরানকে হারানোর অতীত অভিজ্ঞতা ছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। এদিন সেই জয়ের প্রেরণা নিয়ে আবারো ইরান বধ করেছে কৃষ্ণা-মৌসুমিরা।
ঘরের মাটিতে অন্যতম ফেভারিট দল বাংলাদেশ। তবে ইরান গত আসরের চ্যাম্পিয়ন। যাদের কাছে এর আগের আসরে ২-১ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। এবারের আসরেও বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান। নিজেদের প্রথম ম্যাচটাকেই একরকম ফাইনাল ধরে নিয়ে শনিবার মাঠে নামে বাংলাদেশের মেয়েরা। শক্তিধর ইরানকে ভয় না করে নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটাই খেলবে মৌসুমি-সানজিদারা, ম্যাচের আগেরদিন এমনটাই প্রতিশ্রুতিই দেয়া হয়েছিল দলের পক্ষ থেকে। মাঠে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেই খেলেছে বাংলাদেশ।
প্রথমার্ধ বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে ছিল স্বাগতিক মেয়েরাই। তবে মুখে যাই বলুক না কেন, কিছুটা নার্ভাসনেস কিন্তু ছিলই ছোটনের শিষ্যদের। অল্প বয়সী এই মেয়েরা অসংখ্যবার গোলমুখে গিয়ে খেই হারিয়েছে শুধু আত্মবিশ্বাসের অভাবে। ম্যাচের ২ মিনিটে সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেছেন ফরোয়ার্ড স্বপ্না। ডান প্রান্ত দিয়ে আগোয়ান গোলরক্ষককে পেছনে ফেলে বল নিয়ে ঢুকেও পড়েছিলেন। কিন্তু এতটাই নার্ভাস ছিলেন, ফাঁকা পোস্টে বলটা ঠেলে না দিয়ে মেরে দিলেন বাইরে।
৭ মিনিটে ডি বক্সের মাথায় ফ্রি-কিক পায় বাংলাদেশ। মারিয়া মান্ডার শট প্রতিপক্ষের রক্ষণ দেয়ালে লেগে ফেরত এলে আবারো শট নেন মারিয়া। কিন্তু বল বারে লেগে চলে যায় বাইরে। গোলবঞ্চিত হয় বাংলাদেশ। শুরুর সেই হতাশা থাকল প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তেও। ৪৫ মিনিটে আবারো গোলরক্ষককে একা পেয়ে সুযোগ হাতছাড়া করেছেন স্বপ্না, তাই হতাশা নিয়েই বিরতিতে যাওয়া বাংলাদেশের।
বিরতির পরও একাধিক সুযোগ নষ্ট, তাই মিলছিল না কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা। ৪৮ মিনিটে কর্ণার থেকে ডি বক্সে জটলায় পেয়ে শট নেন মারিয়া মান্ডা। কিন্তু বল ফিস্ট করে দলকে এ যাত্রা রক্ষা করেন ইরানের গোলরক্ষক। ৫০ মিনিটে আবারো ব্যর্থ হন স্বপ্না। এবারো বক্স থেকে নেয়া তার শট চলে যায় বার ঘেঁষে।
অসংখ্য সুযোগ মিস করার পর ৬৩ মিনিটে মিলল গোলের দেখা। প্রায় মাঝ মাঠ থেকে ফ্রি-কিক নেন নার্গিস। তার শটে বক্সে বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হয় ইরানের রক্ষণভাগ। বক্সে বা পায়ে শট নেন মারিয়া। গোলরক্ষক বল ফিরিয়ে দিলে দর্শনীয় শটে ইরানের জাল কাঁপান মারজিয়া (১-০)।
গোল পেয়ে আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে স্বাগতিক মেয়েরা। দীর্ঘ খড়া ঘুচে যাওয়ার পর তিন মিনিটের ব্যবধানে তাই দেখা মিলল আরো এক গোলের। ৬৬ মিনিটে কৃষ্ণার ক্রসে বক্সে বল পান সানজিদা। তিনি বল দেন সতীর্থের উদ্দেশ্যে। চলতি বলে পা ছুইয়ে উঁচু শটে লক্ষ্যভেদ করেন মৌসুমি (২-০)। ম্যাচে বাংলাদেশের জয় মূলত লেখা হয়ে গেছে ওখানেই।
ইরানের মেয়েরা চেষ্টা করেছে, কিন্ত লাভ হয়নি। উল্টো ৮৫ মিনিটে দারুণ এক গোল করেছে ছোটনের শিষ্যরা। বাঁ প্রান্ত থেকে বদলি মিডফিল্ডার মনিকার বা পায়ের উঁচু ক্রস ছোট বক্সে পেয়ে দর্শনীয় হেডে গোল করেন তহুরা (৩-০)। এরপরই শুরু বাংলাদেশের জয়-উৎসব। রেফারি শেষ বাঁশি সেখানে ছিল কেবলই আনুষ্ঠানিকতা।
আগামীকাল (সোমবার) সন্ধ্যা ছয়টায় নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ সিঙ্গাপুর।