ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর বলেছেন, ‘কি করিলে ভাল হয় কর বিবেচনা/স্বদেশের হিতাহিত কর আলোচনা/মনে মনে স্থিরভাবে কর প্রণিধান/যাহাতে দেশের হয় কুশল বিধান।’
অপার সম্ভাবনাময় পার্বত্য জেলার বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকার হাজার হাজার একর জায়গা এবং অনাবাদি পড়ে থাকা টিলায় পরিকল্পিতভাবে ব্যাপকহারে পাম চাষ দ্বারা দেশের ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণসহ জাতীয় অর্থনীতিতে সমৃদ্ধি আনয়ন করা সম্ভব, স্বদেশের কল্যাণে সেই চিন্তাধারা আজ বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। ভাবতে ভীষণ ভালো লাগছে।
পাম তেলের আদি উত্স পশ্চিম আফ্রিকা। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে প্রথম দফা পাম বীজ মালয়েশিয়া থেকে আনা হয়। ১৯৭৯ সালে মালয়েশিয়া ও নাইজেরিয়া থেকে আনা চারা দ্বারা প্রথম পাম চাষ শুরু করা হয়। ১৯৮১ সালে কক্সবাজারে ৩২৫ একর, চট্টগ্রামে ২৭৯ একর এবং সিলেটে ১৮০ একর মিলে ৭৮৪ একর পাম চাষের আওতায় আনা হয়। এছাড়া দিনাজপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জে পাম গাছের বাগান রয়েছে। সারা বছরই পাম গাছ থেকে ফল পাওয়া যায়। বছরে চার বার বা প্রতি ৯০ দিন পর ফল সংগ্রহ করা হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের একদল সাহসী কৃষক পাম চাষের অনুকূল পরিবেশ বিবেচনায় ‘রেড গোল্ড’ নামে খ্যাত পামওয়েল নামের উদ্ভিদটি চাষাবাদ শুরু করেন। এ উদ্ভিদটির বৈজ্ঞানিক নাম এলিইস গিনিনসিস জ্যাক। পরবর্তীকালে কিভাবে পামওয়েল সুষ্ঠুভাবে সংগ্রহ করতে হবে- এ নিয়ে কৃষকরা বিপাকে পড়েন। এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মানসিকতা নিয়ে বেশ কিছু উদ্যমী উদ্যোক্তা এগিয়ে আসেন। এদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন বেশ কিছু গুণীজন। ভোজ্য তেল উত্পাদনকারী উদ্ভিদগুলোর মধ্যে পামওয়েলের ফলন পৃথিবীতে সর্বাধিক যা মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পট পরিবর্তনে বিশেষ অবদান রেখেছে। এ দেশের পার্বত্য অঞ্চলের মাটি ও জলবায়ু পাম চাষের অনুকূলে থাকায় প্রচুর পামগাছের চাষাবাদ শুরু হয়েছে। ভোজ্যতেল ছাড়াও পামফল বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সাবান, ডিটারজেন, ফ্যাটি এসিড, ফ্যাটি অ্যালকোহল, গ্লিসারেল উত্পাদনে পামফল ব্যবহার করা হয়। বিস্কুট, কেক, আইসক্রিমসহ বিভিন্ন খাবার তৈরিতে পাম তেলের ব্যবহার দিনদিন বাড়ছে। চর্বি উত্পাদনের কাঁচামাল হিসেবে পাম তেল সকলের পছন্দনীয়। পাম তেল থেকে তৈরি হয় সলিড ফ্যাট যেমন বনস্পতি যা স্বাস্থ্যের জন্য উত্তম। কারণ, পাম তেলকে হাইড্রোজিনেশন করার প্রয়োজন হয় না বলে এতে ক্ষতিকর ট্রান্সফ্যাটি এসিড থাকে না। এছাড়াও পাম গাছের কা্ল, পাতা, ফলশূন্য কাদি ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রকার দ্রব্য সামগ্রী উত্পাদন করা হয়। যেমন, বিভিন্ন প্রকার আসবাবপত্র, ফাইবার বোর্ড ও চিপবোর্ড ইত্যাদি। এছাড়া পাম ফল থেকে আরো ১০/১২টি লিংকেজ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প গড়ে উঠতে পারে। এতে জাতীয় অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। ধীরে ধীরে দেশের চাহিদা মিটিয়ে পামতেল এবং এর উপজাত দ্রব্য সামগ্রী রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হবে। বর্তমানে পার্বত্য জেলাসমূহে পাম চাষে শ্লোগান উঠেছে- “পাঁচটি চারা একটি ঘর, দেশ হবে স্বনির্ভর”।
আমার বিশ্বাস জাতীয় অর্থনীতিতে এর বিশাল ভূমিকা থাকবে। এই খাত বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানসহ জাতীয় অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।
n লেখক: এসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার, সোনালী ব্যাংক