পিরোজপুর শহরে তিনতলা বাড়ির ছাদে নানা জাতের ফল ও শাকসবজির বাগান করেছেন গৃহকর্ত্রী ফৌজিয়া খন্দকার। নেহাত শখের বশে শুরু। কিন্তু এখন গাছপাকা আম, ডালিমসহ নানা ফল পেড়ে খান। তরতাজা শাকসবজি কেটে রান্না করেন। এতে তাঁর আনন্দ আর ধরে না।
শুধু এ গৃহবধূ নন, আরও অনেকে ছাদে বাগান করছেন। এ শহরে ছাদবাগান জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
জানতে চাইলে ফৌজিয়া খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি মাত্র তিন বছর আগে শহরের থানা সড়কের বাড়ির ছাদে বাগান করা শুরু করেন। বিভিন্ন টবে মাল্টা, আম, পেয়ারা, জামরুল, ডালিম, কমলা, লেবু, স্ট্রবেরি ও কামরাঙার গাছ লাগিয়েছেন। ফলও পাচ্ছেন বেশ। এ ছাড়া লাউ, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, শসা, শিম, বরবটি, বেগুন, করলা, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, মরিচ, ডাঁটা, লালশাক, পুঁইশাক ও টমেটোর চাষ করছেন। এতে তাঁর পরিবারের ফল ও সবজির চাহিদা মিটছে। তিনি বলেন, প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা ছাদের বাগানে কাজ করেন। এতে তাঁর ভালো লাগে। আর নিজের গাছ থেকে পাকা ফল পাড়ার আনন্দের তুলনাই হয় না। সারা বছরই কোনো না কোনো সবজি হচ্ছে। লেবু হচ্ছে। যখন-তখন তুলে আনা যাচ্ছে।
শহরের সিআই পাড়ার বাসিন্দা গোলাম মাওলা একজন ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী। দিনের বেশির ভাগ সময় ব্যস্ত থাকেন। এর ফাঁকে তিনি বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেছেন বাগান। নানা ফল, ফুল ও শাকসবজির পাশাপাশি তাঁর বাগানে রয়েছে পুদিনা পাতা, কারিপাতা, পেয়ারা, ঘৃতকুমারী। গোলাম মাওলা বলেন, গত শীত মৌসুমে তাঁর এ বাগানে ৩০ কেজি টমেটো ফলে। এ ছাড়া বাগানের বেগুন ও লালশাক পরিবারের চাহিদা মিটিয়েছে।
সিআই পাড়ার আরেক বাসিন্দা আবুল বাশার তাঁর বাড়ির ছাদে প্রথমে ফুলের বাগান করেন। গত বছর তিনি ছাদে নানা জাতের ফলের বাগান গড়ে তোলেন। তিনি বলেন, এ বছর তাঁর ছাদের মাল্টা গাছে ফল ধরেছে।
শহরের মাছিমপুর মহল্লার বাসিন্দা কলেজশিক্ষক খায়রুন নাহার আট বছর ধরে গড়ে তুলেছেন গোলাপ, বেলী, নানা জাতের জবা, জুঁই, হাসনাহেনাসহ প্রায় অর্ধশত জাতের ফুল, বিভিন্ন জাতের ফল ও শাকসবজির বাগান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পিরোজপুর কার্যালয়ে শহরের ১২টি বাড়ির ছাদে বাগানের তালিকা রয়েছে। এ ছাড়া কাউখালী উপজেলায় ছয়টি, মঠবাড়িয়ায় চারটি, নাজিরপুরে চারটি ও নেছারাবাদে তিনটি বাড়ির ছাদে বাগানের তথ্যও রয়েছে। তবে এ তালিকার বাইরেও শহরের বেশ কিছু বাড়ির ছাদে বাগান রয়েছে বলে জানা গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পিরোজপুর কার্যালয়ের উপপরিচালক আবুল হোসেন তালুকদার বলেন, ‘শহরে বাগান করার মতো জায়গা থাকে না। তাই ছাদে বাগান করার ব্যাপারে আমরা বাড়ির মালিকদের উৎসাহিত করছি। ছাদে প্রচুর আলো-বাতাসের কারণে গাছ সজীব থাকে। তাঁদের বছরে একবার বাগানের মাটি পরিবর্তন করার পরামর্শ দিচ্ছি। এখন ছাদের বাগান মফস্বল শহরগুলোতেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।’