বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং সাইট আপ-ওয়ার্ক প্রকাশিত সেরা ইলাস্ট্রেটরের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে, গ্রাফিক্স ডিজাইনারের তালিকায় তৃতীয় স্থানে এবং লোগো ডিজাইনারের তালিকায় চতুর্থ স্থানে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশের গোলাম ফারুক, আর সেই নামের পাশে উজ্জ্বল হয়ে শোভা পাচ্ছে বাংলাদেশের নাম।
বর্তমান গ্লোবাল ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে আপ-ওয়ার্ক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ২০১৫ সালে প্রসিদ্ধ ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম ওডেস্ক ও ইল্যান্স দুটি একসঙ্গে সংযুক্ত করে আপ-ওয়ার্ক নামে ব্র্যান্ডিং করা হয়। এটি পরিচালিত হয় ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রানসিস্কো ও মাউন্টেনভিউ থেকে। এখানে এক কোটি ২০ লাখ রেজিস্টার্ড ফ্রিল্যান্সার কাজ করে। ৫০ লাখ রেজিস্টার্ড ক্লায়েন্ট বছরে প্রায় ৩০ লাখ জব পোস্ট করে থাকে, যা প্রায় এক বিলিয়ন ইউএস ডলারের সমান। কাজের বাজারের দিক থেকে আপ-ওয়ার্ক বর্তমান বিশ্বেও সবচেয়ে বড় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট।
গোলাম ফারুক ১৯৯৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে ড্রয়িং ও পেইন্টিংয়ে মাস্টার্স করেন। ছাত্রজীবন থেকেই কম্পিউটার গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ শুরু করেন তিনি। ১৯৯৪ সালে প্রি-প্রিন্টিং হাউস কালার স্ক্যান থেকে কম্পিউটার গ্রাফিক্স ও অফসেট প্রিন্টিং টেকনিক সম্পর্কে অভিজ্ঞতা লাভ করেন। তারপর ১৯৯৬ সালে যোগ দেন বিজ্ঞাপন এজেন্সি গ্রে গ্লোবাল গ্রুপে। দীর্ঘ ১০ বছর সেখানে কাজ করেন তিনি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ব্র্যান্ড নিয়ে তাঁর কাজের সফলতার কারণে ২০০৪ সালে সেই কম্পানির আরেকটি সিস্টার কনসার্ন জি-থ্রি কমিউনিকেশনের হেড অব ক্রিয়েটিভ হিসেবে তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর একজন পার্টনারের সঙ্গে শুরু করেন পেপার রাইম অ্যাডভার্টাইজিং, যেখানে তিনিই ছিলেন ক্রিয়েটিভ হেড। বিবিডিও বাংলাদেশের ক্রিয়েটিভ হেড হিসেবেও তিনি এক বছর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালে তিনি ওডেস্কে (বর্তমান আপ-ওয়ার্ক) প্রথম কাজ শুরু করেন। অন্য সবার মতোই প্রথম দিকে কাজ পাওয়াটা তাঁর জন্যও বেশ কঠিন ছিল। কিন্তু যখন তিনি প্রথম কাজটি পেলেন তার ডিজিটাল পেইন্টিং দেখে ক্লায়েন্ট মুগ্ধ হয়ে গেল। কাজ আসতে শুরু করল। তখন তিনি আরো বেশি মনোযোগ দিলেন কাজের মানের ব্যাপারে ও সঠিক সময়ে ক্লায়েন্টের কাছে তা পৌঁছে দিতে। গোলাম ফারুক উপলব্ধি করেন, ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে সাফল্য পেতে যা জরুরি তা হলো প্রথমত ক্লায়েন্টের ব্রিফটি ভালো করে বুঝে নেওয়া, সেই কাজটির চ্যালেঞ্জের জন্য নিজেকে যোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করা। কাজটি পেলে তার মান ও ক্রিয়েটিভ উপস্থাপনা তাকে পরবর্তী কাজটি এনে দেবে। তাই প্রথমত টাকা উপার্জনের চিন্তা মাথায় না এনে ভালো কাজের চিন্তাটাকে প্রাধান্য দিতে হবে। কাজ ভালো হলে টাকা এমনিতেই আসবে। তাঁর এই উপলব্ধিটি যে সঠিক তা তাঁর সফলতাই প্রমাণ করে। তাই তরুণদের যারা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চায় তাদেরও উচিত এগুলো মাথায় নিয়ে কাজে নেমে পড়া। পেইন্টিং করতে ভালো লাগে বলে আপ-ওয়ার্কে ডিজিটাল পেইন্টিংয়ের প্রচুর কাজ করেন তিনি। তিনি এ কথাও মনে করিয়ে দেন, যে কাজটিতে যে পারদর্শী বা যার যে কাজটি করতে বেশি ভালো লাগে তার উচিত সেই ধরনের কাজে মনোযোগ দেওয়া।
বর্তমানে গোলাম ফারুক ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে মাল্টিমিডিয়া অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি ডিপার্টমেন্টে শিক্ষকতা করছেন।