স্বল্প খরচে অল্প দিনেই এমন প্রত্যাশিত পরিবর্তন। দু’বছর আগের স্কুলগুলোর পরিবেশ আর এখনকার পরিবেশের বিস্তর ফারাক। কুলাউড়া উপজেলার ১৯৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৮৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখন বিরাজ করছে চমৎকার শিশু-শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ। স্কুলগুলোর পুরনো এক রঙের দালানগুলোকে দৃষ্টিনন্দন করতে এখন নানা জাতের রঙের সমারোহে করা হয়েছে বর্ণিল। আর স্কুলের ভেতর, বাইরের দেয়াল ও সীমানা প্রাচীরে রং তুলির আঁচড়ে রয়েছে নানা শৈল্পিক কারুকাজ। স্কুলগুলোতে মানদাতার আমলের সেই অবকাঠামোর বাইরের অংশে এখন আনা হয়েছে আমূল পরিবর্তন। রঙ তুলির আঁচড়ে দেয়া হয়েছে মনোমুগ্ধকর নবসাজ। তাই অবহেলায় পড়ে থাকা স্কুলের পুরাতন বিল্ডিংগুলো এখন হয়ে উঠেছে নতুন। আর এ কারণেই এই উপজেলার প্রাথমিক স্কুলগুলোর নতুন নাম হয়েছে ‘রঙিন স্কুল’। জানা গেছে, ওখানকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রতি শিশুমনের আকর্ষণ ও উৎসাহ বাড়াতেই নেয়া হয়েছে এই অভিনব উদ্যোগ। এমন ব্যতিক্রমী আয়োজনে এখন ব্যাপক সাড়া দিচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীরাও। শিশুরা আগ্রহ নিয়ে স্কুলগামী হওয়ায় গ্রাম এলাকার হতদরিদ্র মানুষগুলোও তাদের ভবিষৎ প্রজন্ম নিয়ে দেখছে সম্ভাবনার স্বপ্ন। শিক্ষার্থীরা এখন বিদ্যালয়ের প্রতি আকৃষ্ট তা প্রতিদিনের পাঠদান কার্যক্রমে তাদের অংশগ্রহণ দেখেই আঁচ করা যাচ্ছে। উপজেলার প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এখন দূর থেকে আকৃষ্ট করছে যে কাউকে। স্কুলের ভেতর ও বাইরের দেওয়াল ছাড়াও স্কুলের সীমানা প্রাচীরগুলোতেও রং তুলির আঁচড়ে আঁকা হয়েছে বিশ্ব কবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ নানা কবির ছবি, রঙধনু, জাতীয় নানা ফুল, ফল, গাছ ও পাখির ছবি। এমন দৃশ্যে দূর থেকেই বুঝা যাচ্ছে এটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্কুলের ক্যাম্পাসেই নতুন করে তৈরি করা হয়েছে শহীদ মিনার আর ফুলবাগান। শিশু শ্রেণীর পাঠদানের কক্ষটি সাজানো হয়েছে নানা ধরনের খেলনা আর নানা শিক্ষা উপকরণে। পুতুলের গলে প্লে কার্ডের মত করে বড় অক্ষরে আমি বড় হয়ে ডাক্তার হব, আমি বিজ্ঞানী হব, শিক্ষক, সাংবাদিক, খোলোয়াড়, পাইলটসহ শিশুমনে জাগা নানা স্বপ্নের কথা লিখে তাতে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তুমি বড় হয়ে কি হতে চাও এমন প্রশ্নে শিশুরা পুতুলের কাছে গিয়ে তার মনের কথা জানান দিচ্ছে। উপজেলার কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরজমিনে ঘুরে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। শিক্ষক, অভিভাবক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিঠির সদস্যরা জানান, শিশু শিক্ষার্থীর আনন্দ দিতেই নতুন এই আয়োজন। রঙিন স্কুলের নেপথ্যের স্বপ্নদ্রষ্টা ও পরিকল্পনাকারী কুলাউড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শরীফ উল ইসলাম বলেন, এমন যাদুময়ী পরিকল্পনার অন্তরালে এই উদ্দেশ্যই ছিল যাতে শিক্ষার্থীরা এমন অবয়বে আনন্দ আবেশে আপন করে নেয় স্কুলটিকে। আর এ কারণেই আমার স্বপ্ন আমার স্কুল এমন মন্ত্রে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বীবিত করতেই আয়োজন এই ‘রঙিন’ স্কুলের।