বাণিজ্যিকভাবে আমড়া চাষাবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন উপকূলীয় জেলা পিরোজপুরের হাজারো পরিবার। আকারে বড়, পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু হওয়ায় দেশ-বিদেশে বাড়ছে পিরোজপুরের আমড়ার চাহিদা। জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে নাজিরপুর, কাউখালী এবং নেছারাবাদের (স্বরূপকাঠি) পতিত জায়গা সরকারি খাস জমি লিজ নিয়ে, সড়ক ও পথের দুই ধারে এবং বসতবাড়িতে নিজস্ব উদ্যোগে আমড়ার বাগান করা হচ্ছে। এ বছর বাজার দর বেশি থাকায় আমড়া বিক্রি করে চাষিরা ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছেন। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এরই মধ্যে পিরোজপুরের আমড়া বিদেশেও পাঠানো হচ্ছে। এ বছর আমড়া বিক্রি করে বাগান মালিকরা প্রায় ১০ কোটি টাকা উপার্জন করবেন বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। আমড়ার ব্যবসাকে কেন্দ্র করে কাউখালী এবং স্বরূপকাঠিতে গড়ে উঠেছে শতাধিক আমড়ার আড়ত। এখান থেকে বছরে ৪ মাস অর্থাৎ আষাঢ় থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ, যশোর, সিলেট, চট্টগ্রাম, রংপুর, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটি কোটি টাকার আমড়া সরবরাহ করা হয়। শুধু তা-ই নয়, দেশের গ-ি ছাড়িয়ে ভারত, নেপাল, মালয়েশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশেও রফতানি হচ্ছে পিরোজপুরের আমড়া। বর্তমানে এক বস্তা আমড়া বিক্রি হচ্ছে প্রকার ভেদে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত।
জানা যায়, আশির দশকে উপকূলীয় জেলাগুলোয় বেকার যুবকরা আমড়া চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন। লাভজনক হওয়ায় দিন দিন বাড়তে থাকে আমড়া চাষ। পিরোজপুরের নাজিরপুর, কাউখালী এবং নেছারাবাদ উপজেলার এমন কোনো পরিবার নেই, যাদের বাড়িতে দুই-একটি করে আমড়া গাছ নেই।
আমড়া বেপারীরা শ্রাবণ এবং ভাদ্র মাসে বাগান মালিকদের কাছ থেকে গড়ে ৮০০ টাকা বস্তায় আমড়া কেনেন। এ আমড়া কাউখালী ও স্বরূপকাঠি আড়তে এনে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। সেখান থেকে আমড়া পাঠানো হয় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়। কাউখালী ও স্বরূপকাঠির আড়তদার মীর শাহজাহান, মোস্তফা শেখ, আবদুল লতিফ খসরু জানান, ভ্যানভাড়া, লঞ্চঘাটের টোল, লঞ্চভাড়া এবং অন্য খরচসহ ঢাকা ও চাঁদপুর মোকামে এক বস্তা আমড়া পাঠাতে ২৫০ থেকে ২৭৫ টাকা খরচ হয়। খরচ বাদে প্রতি বস্তা আমড়ায় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা লাভ হয়। স্থানীয়রা জানান, এ বছর এত বেশি আমড়ার ফলন হয়েছে, দেশ-বিদেশে সরবরাহের পরও পর্যাপ্ত পরিমাণ মজুদ থাকছে। কিন্তু হিমাগারের অভাবে সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। এতে আমড়া চাষিরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, আমড়ায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ বি সি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ ইত্যাদি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে। খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়ায় রয়েছে ১ দশমিক ১ গ্রাম প্রোটিন, ১৫ গ্রাম শ্বেতসার, ০ দশমিক ১ গ্রাম স্নেহ, ০ দশমিক ২৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন এ, ০ দশমিক ০৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি, ৯২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ৫৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৩ দশমিক ৯ মিলিগ্রাম লৌহ এবং ৮০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন। এছাড়া প্রতিটি আমড়ায় ৬৬ কিলোগ্রাম খাদ্যশক্তি রয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৬০০ হেক্টর বাগানে এ বছর আমড়ার ফলন হয়েছে ৫ হাজার টন। এ আমড়া স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে বাগান মালিকরা প্রায় ১০ কোটি টাকা উপার্জন করবেন। জেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অরুণ রায় জানিয়েছেন, চারা রোপণের ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে আমড়ার ফলন ধরে। একনাগাড়ে ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত ফলন দেয়। লাভজনক এ মৌসুমি ফলের গাছে রোগবালাই খুবই কম। কিছু কিছু গাছে বৈশাখের শুরুতে নতুন গজানো পাতায় লেদা পোকার আক্রমণ হয়। কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মীরা ঘুরে ঘুরে বাগানে গিয়ে চাষিদের বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ছিটানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।