আলোকিত প্রতিবন্ধী জেসমিন

প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়, আশীর্বাদÑ এর স্বাক্ষর রেখেছেন যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোল এলাকার প্রতিবন্ধী নারী জেসমিন। হাতের ওপর ভর দিয়ে হেঁটে জেসমিন গ্রামের বৈঠকখানায় তিন বেলা পড়াচ্ছেন শিশু-কিশোরদের। তার কাছ থেকে এ পর্যন্ত শিক্ষা পেয়েছে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী। তাদের অনেকেই ডাক্তার, প্রকৌশলীসহ ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। নিজের মেধা, মনন ও মমতা দিয়ে পড়িয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের হৃদয় স্পর্শ করেছেন প্রতিবন্ধী জেসমিন। তিনি আজ সমাজের কাছে প্রতিবন্ধী নন, আলোকিত নারী। বেনাপোল রয়েল ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী আসফিয়া আক্তার তন্নি বলেন, জেসমিন আপার কাছে পড়েই ভালো রেজাল্ট করেছি। ভর্তি হতে পেরেছি ভালো প্রতিষ্ঠানে। স্থানীয় অভিভাবকরা জানান, জেসমিন সমাজের বোঝা নয়, আশীর্বাদÑ গ্রামের শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি তাদের সন্তানদের গড়ে তুলছেন শিক্ষিত করে। শিক্ষার্থী সুরাইয়া ইয়াসমিন সাথী ও বিথি বলেন, জেসমিন আপা আমাদের মায়ের মতো আদর করে পড়ান। তার কাছে পড়তে ভালো লাগায় মনোযোগ দিয়ে পড়েন তারা। পরীক্ষার ফলও ভালো হয়।
যশোরের শার্শা উপজেলার গোগার ইছাপুর পল্লীতে জন্ম নেয়া আবদুল মজিদের প্রতিবন্ধী মেয়ে জেসমিন খাতুনের শরীরের নিচের অংশ বিকলাঙ্গ। দুইটি পা ছাড়াই জীর্ণ দেহে হাতের ওপর ভর দিয়ে মাদরাসায় লেখাপড়া করেছেন। দাখিল পাস করে রেখেছেন কৃতিত্বেরস্বাক্ষর। অভাবের সংসারে প্রতিবন্ধী নারী জেসমিন বাড়ির সামনে ছোট একটি ঘরে গ্রামের শিক্ষার্থীদের পড়ান। মাসে ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে দেন তারা। এ দিয়েই চলছে তার সুখের জীবন। তার কাছে পড়ে পরীক্ষায় ভালো ফল করায় বাড়তে থাকে সুনাম ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা। ৯ বছর আগে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন জেসমিন। তবে তার কোলে আসেনি সন্তান। এতে কোনো অনুশোচনা নেই তার। শিশুদের মায়ের আদরে পড়িয়ে পান সুখ-তৃপ্তি। তিনি বলেন, ছেলেমেয়েদের নিজের মনে করেই লেখাপড়া করান। এতেই পান সুখ, শান্তি ও তৃপ্তি। তবে প্রতিবন্ধী কোটায় সরকারি সুযোগ-সুবিধার দাবি জানান তিনি। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুর রব বলেন, জেসমিন শার্শার গর্ব। প্রতিবন্ধী হয়েও নিজ উদ্যোগে গ্রামে ছড়াচ্ছেন শিক্ষার আলো। তিনি সমাজের অহংকার। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী জেসমিনকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন তিনি।