নারকেল, সুপারি আর সয়াবিনের পর অর্থকরী ফসলের জন্য লক্ষ্মীপুরকে নতুনভাবে খ্যাতি এনে দিচ্ছে পান। অল্প পুঁজি, নিয়মিত শ্রম ও পরিচর্যার ফলে অধিক আয় সম্ভব বলে পানকে প্রধান কৃষি ফসল হিসেবেও বেছে নিয়েছেন জেলার বেশ কয়েকজন কৃষক। অধিক লাভের আশায় দিন দিন বেড়ে চলছে পান চাষাবাদ। চলতি মৌসুমে বাম্পার ফলন হয়েছে। পানের ভরা মৌসুমেও ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষিরা। এ বছর পানকে ঘিরে শতকোটি টাকা লেনদেনের সম্ভাবনার আশা করছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় প্রায় ৫শ’ হেক্টর জমিতে প্রায় আড়াই হাজার পানের বরজ রয়েছে। এর মধ্যে রায়পুর উপজেলায়ই প্রায় ৪শ’ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ করা হয়। বছরজুড়ে পানের আবাদ ও ফলন হলেও আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন ও কার্তিক মাসে পানের বেশি ফলন হয়। বিশেষ করে বর্ষাকাল পানের ভরা মৌসুম। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে একবার আবাদকৃত বরজ থেকে ৯-১০ বছর পর্যন্ত পান তোলা যায়। তবে নিয়মিত পরিচর্যা করতে হয়।
এ মৌসুমে প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় ১৪ হাজার বিড়া (৭১টি পানে ১ বিড়া) পান উৎপাদন হয়েছে। বর্তমানে প্রতি বিড়া পান ৩০ থেকে ৫০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। তবে দুই থেকে তিন মাস পর এ পানের দাম প্রতি বিড়া ৭০ থেকে ১০০ টাকা পাইকারি বিক্রি হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা ও চাষিরা।
রায়পুর উপজেলার উত্তর চর আবাবিল, দক্ষিণ চর আবাবিল, উদমারা, উত্তর চরবংশী ও দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নে পান সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়। সপ্তাহে দু’দিন রায়পুরের নতুন বাজার, উদমারা সর্দার স্টেশন, হায়দরগঞ্জ বাজার, ক্যাম্পের হাট পানের পাইকার হাট বসে। এখানকার পান লক্ষ্মীপুর ছাড়াও ফেনী, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে।
রায়পুর উপজেলার হায়দরগঞ্জ এলাকার পান চাষি নুরুল আমীন জানান, তার এক একর জমিতে পানের বরজ রয়েছে। গত চার বছরে এ বরজ তৈরি ও আবাদ করতে তার সাড়ে ৫ লাখ টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। তিনি এ পর্যন্ত দশ লাখ টাকার বেশি পান বিক্রি করেছেন। এ পান চাষাবাদের মাধ্যমেই তিনি তার পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা পেয়েছেন। পুঁজির তুলনায় লাভ বেশি বলে তিনি পান চাষ করছেন।
একই এলাকার তাপস মজুমদার জানান, তিনি ৫০ শতাংশ জমিতে ৬০ হাজার টাকা খরচ করে পানের চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে প্রায় ৪০ হাজার টাকার পান বিক্রি করেছেন। এ বছর পানে পোকামাকড় ও রোগ বালাই তেমন হয়নি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বর্তমানে পানের খুব ভালো ফলন হয়েছে। এখন পানের ভরপুর মৌসুমেও ভালো দাম পাচ্ছেন। দুই থেকে তিন মাস পর পানের বিড়া বর্তমান বাজার দরের চেয়ে দ্বিগুণ মূল্যে বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক গোলাম মোস্তফা জানান, পানের বরজে পোকামাকড় দমনসহ যাবতীয় পরিচর্যায় কৃষি উপ-সহকারীরা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের সহযোগিতা করছেন। এ মৌসুমে পানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমানে পানের ভরা মৌসুমেও চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন। এ পানকে ঘিরে লক্ষ্মীপুরে বছরে শতকোটি টাকার লেনদেন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।