সবজিতে সচ্ছল শতাধিক যুবক

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহরের ভেতরে পতিত জমিতে উৎপাদিত সবজি কৃষকের কাছ থেকে পাইকারি দামে ক্রয় করে সেগুলো রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় বিক্রি করে সচ্ছল হয়েছেন শতাধিক বেকার যুবক।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পূর্বাচল উপশহরের মধ্যে উপজেলার দুইটি ইউনিয়নের ৩৫টি গ্রামের ৪ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হয় ৯০ দশকের দিকে। এর থেকে এসব এলাকায় বসবাসরত লোকজন তারা তাদের জমিজমা ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যেতে শুরু করে। যেসব লোকজন এ পূর্বাচল উপশহরে প্লট পেয়েছেন এবং আর্থিকভাবে সচ্ছল, তারা এ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র জমি কিনে বাড়ি তৈরি করে চলে গেছেন। আর যারা প্লট পেয়েছে কিন্তু আর্থিকভাবে অসচ্ছল, তারা অন্যত্র যেতে না পেরে এখানে কোনোভাবে জীবিকার তাগিদে রয়ে গেছেন। আবার অনেক লোক জমির পরিমাণ কম, এমনকি টাকার অভাবে প্লট বিক্রি করে দিয়েছেন, তারাও এখানে পরিবারের লোকজন নিয়ে কোনোরকম জীবিকা নির্বাহ করছেন। ২০০০ সাল থেকে উপশহরের অধিগ্রহণকৃত জমিতে প্লট তৈরি করার জন্য উঁচু জমি সমান ও নিচু জমি বালু দিয়ে ভরাট করার কাজ শুরু করা হয়। এদিকে এ উপশহরের ভেতরের গ্রাম গোবিন্দপুর, কামতা, হারারবাড়ী, পরশি, কুমারটেক, বাতান, মাঝিপাড়া, সুলপিনা, আলমপুরা, ইছাপুরা, বাড়িয়াছনি, গোয়ালপাড়া, কালনি, জিন্দা, ধামচি, ভোলান, হিরনাল, গুতিয়াবো, আগারপাড়া, বৈলদা, তিন ওলপ, বির হাটাবো, বাগলা, তীরমারা, আমদিয়া, রাতুরা, পলখান, পাঞ্জারা, বেলুন, গলানে বিস্তীর্ণ পতিত জমিতে সবজি চাষ করছেন লোকজন। আর এসব সবজি পাইকারি দামে কিনে নিয়ে সেগুলো অন্যত্র বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন শতাধিক বেকার যুবক। তারা সবজি সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে কিনে নিয়ে রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় বিক্রি করে থাকেন। প্রতিদিন সকালে এসব যুবক কৃষকের জমি থেকে পাইকারি দামে কাঁকরোল, চিচিঙ্গা, করলা, বরবটি, ধুন্দল, শসা কিনে নিয়ে যান। সেগুলো আবার বিকালে তারা রাজধানীর কারওয়ানবাজার, যাত্রাবাড়ী, খিলক্ষেত, টঙ্গী, গাজীপুর, বেড়াইদসহ আশপাশের এলাকায় খুচরা দামে বিক্রি করেন। এ ব্যাপারে কথা হয় শিমুলিয়া এলাকার যুবক রিপন মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, আমি এক সময় বেকার ছিলাম। অনেক চেষ্টা করেও কোনো কাজ পাইনি। এজন্য উপশহরের ভেতর থেকে পাইকারি দামে সবজি কিনে ঢাকা শহরের বিভিন্ন বাজারে সেগুলো বিক্রি করি। প্রতি কেজি সবজিতে আমার ৫ থেকে ১০ টাকা লাভ হয়। এসব বিক্রি করে আমি উপশহরের পাশে কিছু জমি কিনেছি। আমার মতো উপশহরের ভেতরে শতাধিক যুবক আজ পাইকারি দামে সবজি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেনÑ যারা একসময় বেকার ছিলেন, সংসার চালাতে কষ্ট হতো। তিনি আরও বলেন, পূর্বাচল উপশহরের ভেতরে উৎপাদিত সবজির গুণগত মান ভালো। আর এখানকার সবজিতে কীটনাশক দিতে হয় না। এজন্য এর চাহিদাও ব্যাপক। এ ব্যাপারে দাউদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর বলেন, পূর্বাচল উপশহর হওয়ায় অনেক আবাদি জমি কমে গেছে। তারপর এ শহরের ভেতরে অনেক কৃষক আজ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। এমনকি সেই সবজি আবার এলাকার বেকার যুবকরা কৃষকের কাছ থেকে কিনে অন্যত্র বিক্রি করছে। এতে এ এলাকার বেকার সমস্যা অনেকটা লাঘব হয়েছে।