তৈরি পোশাক রফতানিতে ইউরোপের অংশ বেড়েছে

বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানিতে গত অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ কিছুটা কমেছে। তবে এ সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অংশ বেড়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের পোশাকের মোট রফতানির প্রায় ২১ শতাংশ গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষে এ হার এখন ২০ শতাংশ। একসময়ে ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত পণ্য দেশটিতে রফতানি হয়েছে। অন্যদিকে ইইউর অংশ আগের বছরের ৬০ দশমিক ২৮ থেকে বেড়ে সমাপ্ত অর্থবছরে ৬১ দশমিক ০৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

রফতানি বিশ্লেষকরা বলছেন, ইইউ বাজারে পোশাকসহ সব পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধার কারণে জোটের ২৮ দেশে রফতানি বাড়ছে। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা নেই। মূলত এ কারণে ধারাবাহিকভাবে ইইউর অংশ বাড়ছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সমকালকে বলেন, ইইউতে পোশাক রফতানিতে শুধু যে শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করছে বাংলাদেশ, তা-ই নয়। বরং কাঁচামাল সংগ্রহে উৎসবিধির শর্তও শিথিল করে দ্বিস্তর থেকে এক স্তরের নামিয়ে আনা হয়। তিনি বলেন, ইইউর উৎসবিধি শিথিলের আগে দেশে উৎপাদিত কাপড় ব্যবহারের শর্ত ছিল, তখন নিট খাত (গেঞ্জি জাতীয় পোশাক) শুল্কমুক্ত সুবিধা কাজে লাগিয়েছে। কারণ, নিটের ৯০ শতাংশ কাঁচামাল দেশীয় উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়। তবে ২০১৩ সাল থেকে সেই শর্ত প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। ফলে আমদানি করা কাপড়ে তৈরি পোশাক পণ্যও ইইউতে রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। এতে ওভেনের সুবিধাও বেড়েছে। রফতানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইএবির সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী সমকালকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে রফতানিতে প্রতিযোগী দেশের তুলনায় বাংলাদেশের সক্ষমতা কমছে। যুক্তরাষ্ট্রকে টার্গেট করে যেসব দেশ রফতানি করছে সেগুলো পোশাক খাতে বিভিন্ন প্রণোদনা বাড়াচ্ছে। এ কারণে সেখানে অন্য দেশের রফতানি যে হারে বেড়েছে বাংলাদেশের সে হারে বাড়েনি।

ইপিবি ও বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, মোট অংশ কমলেও আগের অর্থবছরের তুলনায় গত বছরে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি বেড়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা হয়েছে ৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে রফতানি হয়েছে ৫৬২ কোটি ৪৯ লাখ মার্কিন ডলারের পোশাক। এর মধ্যে ওভেন থেকেই এসেছে ৪২৩ কোটি ডলার। বাকি ১৪০ কোটি ডলার এসেছে নিট থেকে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ পরিমাণ ছিল ৫২৮ কোটি ৮১ লাখ ডলার। একক রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রধান রফতানি বাজার।

অন্যদিকে ইইউতে রফতানি ২০১৪-১৫ বছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ১১ শতাংশ, তা গত অর্থবছরে বেড়ে হয়েছে ১১ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আগের অর্থবছরের এক হাজার ৫৩৭ কোটি ডলার থেকে বেড়ে আলোচ্য বছরে পোশাক রফতানি হয়েছে এক হাজার ৭১৫ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ে নিটপণ্য রফতানির হয়েছে ৯৪২ কোটি ডলার। ওভেন থেকে এসেছে ৭৭৩ কোটি ডলার ।

একক দেশ হিসেবে দ্বিতীয় প্রধান বাজার জার্মানিতে গত অর্থবছরে রফতানি বেড়েছে ৭ শতাংশ। রফতানি হয়েছে ৪৬৫ কোটি ৩১ লাখ ডলারের পোশাক। ইইউর উল্লেখযোগ্য বাজারের মধ্যে যুক্তরাজ্যে রফতানি বেড়েছে সবচেয়ে বেশি ২১ শতাংশ। এ ছাড়া স্পেনে রফতানি বেড়েছে ১৪ শতাংশ, বেলজিয়ামে ৮ শতাংশ, সুইডেনে ৬ শতাংশ, ফ্রান্সে ৬ শতাংশ ও নেদারল্যান্ডসে ৫ শতাংশ। ইইউ ও আমেরিকার বাইরে বড় বাজার হিসেবে কানাডার রফতানি বেড়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ। রফতানি হয়েছে ১০০ কোটি ডলারের পোশাক। তবে মোট পোশাক রফতানিতে কানাডার অংশ ৩ দশমিক ৬৪ থেকে ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমে এসেছে।