এবার দৃষ্টিনন্দন হচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান

স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পের তৃতীয় ও শেষ পর্যায়ের কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। উদ্যানের ভেতরে সুউচ্চ গ্গ্নাস টাওয়ার কেন্দ্র করে পরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যায়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সৌন্দর্যবর্ধনে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুবিধার্থে উদ্যানের সুউচ্চ তবে অপ্রয়োজনীয় বেশ কিছু গাছ কাটা পড়তে পারে। গ্গ্নাস টাওয়ারের চারপাশে নতুন করে ঘাস রোপণ করে বৃত্ত গড়ে দেওয়া হবে। এ ছাড়া এ পর্যায়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সঙ্গে একীভূত হবে শিশুপার্ক। নতুন রাইড বসিয়ে পার্কটি দর্শনার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলার পাশাপাশি পার্কের নিচে তৈরি হবে পার্কিং। পার্ক ও উদ্যান মিলিয়ে নির্মিত হবে পাঁচটি ফুড কোর্ট। দর্শনার্থীদের জন্য বসার জন্য বানানো হবে বেঞ্চ। পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নিরাপত্তাও জোরদার করা হবে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রণীত এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে গণপূর্ত অধিদপ্তর। শিশুপার্ক ও পার্কিং নির্মাণের দায়িত্ব ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এ হান্নান সমকালকে বলেন, গণপূর্ত অধিদপ্তর এরই মধ্যে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছে। বর্তমানে এটি প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। মাস্টার প্ল্যানে সংযোজন ও বিয়োজন করা হতে পারে।

তিনি আরও জানান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সৌন্দর্য বৃদ্ধির বিষয়টি অগ্রাধিকার পাচ্ছে। গ্গ্নাস টাওয়ারের দৃষ্টিসীমায় যেন বিঘ্ন না ঘটে সে কথা মাথায় রেখে স্থাপনা

নির্মাণ করা হবে। এ কারণে অপ্রয়োজনীয় বড় গাছও কেটে ফেলা হতে পারে। সে সঙ্গে শিশুপার্কের এমন কোনো রাইডও স্থাপন করা হবে না, যা গ্গ্নাস টাওয়ারকে বাধাগ্রস্ত করে। নকশাটি চূড়ান্ত হলে ডিপিপি তৈরির কাজ চূড়ান্ত হবে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনের সামনে দিয়ে শিশু পার্কের নতুন প্রবেশপথ তৈরি করা হবে। এর ফলে শিশুপার্ক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সঙ্গে একীভূত হবে। এ প্রবেশপথের দু’পাশে কৃত্রিম জলাশয় ও ঝরনা তৈরি করা হবে। এ ছাড়া ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ এবং ১৬ ডিসেম্বরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থান দুটি চিহ্নিত করে দুটি স্থাপনা নির্মাণ করা হবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, শিশুপার্কের বেশিরভাগ রাইড পুরনো হয়ে গেছে। এগুলো বদলে নতুন রাইড আনার পরিকল্পনা হচ্ছে। এ ছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ায় শিশু পার্কে আসা বাচ্চারাও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ধারণা নিতে পারবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, শিশুপার্ক বন্ধ করে নতুন রাইড স্থাপন করা হবে না। পর্যায়ক্রমে করা হবে। ফলে শিশুরা পার্ক থেকে বঞ্চিত হবে না। ওই কর্মকর্তা জানান, বর্তমান রাইডগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই ঝুঁকিপূর্ণ।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার জন্য স্থায়ী মঞ্চও নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া একুশে বইমেলার জন্যও স্থান নির্ধারণ করা হবে। শাহবাগ মোড়ে অবস্থিত ফুলের দোকানগুলোর জন্যও থাকবে আলাদা স্থান। নিজস্ব সীমানার অনুযায়ী সংস্কার করা হবে রমনা কালীমন্দিরও। এ পর্যায়ে সোহরাওয়ার্দী ও রমনা উদ্যানের মধ্যকার সংযোগ সেতুটি ভেঙে ফেলা হতে পারে। একই সঙ্গে বাংলা একাডেমির সঙ্গে উদ্যানের সংযোগের জন্য পাতালপথ নির্মাণ করারও প্রস্তাবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান মুন্সি সমকালকে বলেন, প্রায় দুই দশক ধরে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে। তৃতীয় পর্যায়ের কাজের মধ্য দিয়ে প্রকল্পটি শেষ হবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নান্দনিকতাকে মাথায় রেখে এবারের নকশা তৈরি করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও ডিপিপি পাস হওয়ার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে।