সোলার ইরিগেশনে কৃষিতে দ্বিগুণ লাভ

ধান, পাট, সবজিসহ সব ধরনের ফসল উৎপাদনে সেচ জরুরি। আর এ সেচ ব্যবস্থাকে সহজ করে দিয়েছে সোলার ইরিগেশন পাম্প বা সৌরবিদ্যুৎ চালিত সেচপাম্প। সোলার ইরিগেশন পাম্প মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় চাষিদের মুখে ফুটিয়েছে সুখের হাসি। জ্বালানি খরচ না থাকায় চাষিরা এ পাম্প স্থাপন করে সেচ দিয়ে ফসল উৎপাদন করে দ্বিগুণ লাভ পাচ্ছেন। ফলে এ জেলায় দেখা দিয়েছে সবুজ বিপ্লবের অপার সম্ভাবনা।
সরেজমিন দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠে সম্প্রসারিত হচ্ছে সোলার ইরিগেশন পাম্প। স্বল্প খরচে ঝামেলামুক্তভাবে চাষিরা তাদের কৃষি জমিতে এ পাম্পের সেচ সুবিধা ভোগ করায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এ প্রযুক্তির চাহিদা। ফলে এ জেলায় দেখা দিয়েছে সবুজ বিপ্লবের অপার সম্ভাবনা। শুধু জেলার গাংনী উপজেলায় ২০ হর্স পাওয়ারের ২৫টি ও সাড়ে ৭ হর্স পাওয়ারের ১০টি সোলার ইরিগেশন পাম্প চালু রয়েছে। প্রতিটি প্রকল্পের অনুকূলে ৮০ থেকে ১০০ একর জমি চাষের আওতায় নেয়া হয়েছে। প্রতিটি ২০ হর্স পাওয়ার সোলার সেচ পাম্প নির্মাণে ৫৬ লাখ টাকা ও সাড়ে ৭ হর্স পাওয়ারে ৩৫ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে চাষিদের। প্রতিটি সোলার সিস্টেমে সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। পাম্পগুলোয় প্রতিদিন প্রায় ৭ কোটি ২০ লাখ লিটার পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার ইউনিট বিদ্যুতের সাশ্রয় হচ্ছে।
গাংনীর ধলা গ্রামের চাষি জামান জানান, প্রতিবার সেচ দিতে বিঘাপ্রতি ৫ থেকে ৬ লিটার ডিজেল কিনতে হতো। ৬ লিটার ডিজেলের বাজার মূল্য প্রায় ৪০০ টাকা। কিন্তু এখন সোলার ইরিগেশন পাম্পের কারণে মাত্র ২০০ টাকায় এক বিঘা জমিতে সেচ দিতে পারছেন তিনি। একই কথা জানান নওয়াপাড়া গ্রামের চাষি আকতার আলী। তিনি আরও জানান, সেচের জন্য এখন আর বিদ্যুৎ ও ডিজেলের আশায় বসে থাকতে হয় না। শুধু রোদেলা দিন হলেই মাঠ ভেজাতে পারি। মাত্র ২০ মিনিটেই ১ বিঘা জমিতে সেচ দিতে পারছি। শুধু জামান কিংবা আকতার নন, অধিকাংশ চাষিই এখন সোলার ইরিগেশন পাম্পের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। আকতার জানান, শুধু মেহেরপুরেই নয়, বরগুনা জেলার বেসরকারি সংস্থা রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (আরডিএফ) এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (ইডকল) আর্থিক সহায়তায় জেলার বিভিন্ন স্থানে সোলার ইরিগেশন পাম্প স্থাপন করা হচ্ছে। এখন চাষিদের বিদ্যুতের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে না। কিংবা ছুটতে হয় না ডিজেল চালিত পাম্প মালিকদের কাছে। স্বল্প খরচে সব ধরনের ফসলে সেচ সুবিধা পাচ্ছেন চাষিরা। এগুলো ঝামেলা ছাড়াই ২০ বছর টানা সার্ভিস দেবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, কৃষি উৎপাদনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন নতুন তথ্যপ্রযুক্তির সমন্বিত ব্যবহার কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাবে। সেকেলে আর মান্ধাতা আমলের কৃষি উৎপাদন পদ্ধতির বদলে আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। সোলার ইরিগেশন পাম্প আমাদের কৃষিক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে নিতে সাহায্য করছে। চাষাবাদে সেচ দিতে এখন আর কৃষকের ডিজেল ও বিদ্যুতের দিকে চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকতে হচ্ছে না।