টুপি তৈরিতে ব্যস্ত নারীরা

ঈদ সামনে রেখে টুপি পল্লীতে নারীদের কাটছে ব্যস্ত সময়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নারীরা টুপি তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকছেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের মাঝিনা, হরিনা, ইছাখালী, ছাতিয়ান, হরিনা নদীরপাড়, পাড়াগাঁও, নাওড়া, পূর্বগ্রাম, বড়ালু, পশ্চিমগাঁও, পূর্ব চনপাড়া, ভাওলিয়াপাড়া, কেওঢালা, খামারপাড়া, তালাশকুর, নগরপাড়াসহ ১৬টি গ্রামের প্রায় ২ হাজার নারী কারিগর প্রতিনিয়ত টুপি তৈরি করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি তারা নিপুর সূচিকর্মের আল্পনা আঁকছেন ওড়নায় এবং পাঞ্জাবিতে। ঈদ সামনে রেখে কায়েতপাড়া ইউনিয়নের এ গ্রামগুলো এখন এক কর্মমুখর জনপদ।
জানা গেছে, নব্বইয়ের দশকে স্থানীয় ইছাখালী এলাকার টুপির মহাজন রহমতউল্লাহ ঢাকা চকবাজারের একটি প্রতিষ্ঠানের উৎসাহে টুপি তৈরির কাজ শুরু করেন। প্রথমে স্থানীয় এলাকায় ২০ থেকে ২৫ জন দরিদ্র নারীকে ডিজাইন অনুযায়ী বিশেষ ধরনের টুপি তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়ে উৎপাদন শুরু করান। আস্তে আস্তে আশপাশের গ্রামগুলোয় ছড়িয়ে পড়ে টুপি তৈরির কাজ। কেউ শখের বশে, কেউবা প্রয়োজনে আঁকড়ে ধরেন এটাকে। নেশা আর পেশা মিলিয়ে বর্তমানে পেশাদার কারিগর রয়েছে প্রায় ২ হাজার।
নগরপাড়া গ্রামের টুপি কারিগর রাহাতুর বেগমের স্বামী নজরুল ইসলাম একজন দিনমজুর। স্বামীর একার আয়ে সংসারের অভাব-অনটন কাটে না। এ অবস্থায় ২০১০ সালে রাহাতুর বেগম ও তার মেয়ে লিজা আক্তার টুপি তৈরি শুরু করেন। এতে তার সংসারে সচ্ছলতা এনেছে। হরিনা গ্রামের হাসান আলীর মেয়ে আমেনা আক্তার জানান, তিনি স্থানীয় মুড়াপাড়া ডিগ্রি কলেজে এইচএসসিতে অধ্যায়নরত। টুপি তৈরি করে তার হাতে বাড়তি যে টাকা আসছে, তা দিয়ে শখের পোশাক ও প্রসাধনী ছাড়াও বিভিন্ন কাজ করতে পারছেন সহজেই। মাঝিনা নদীরপাড় গ্রামের শিমলা, আয়েশা, জুথি, হাসিনা, সাবেরা, ফাতেমা, নীলিমা, স্বর্ণা, পূর্বগ্রাম দক্ষিণপাড়া এলাকার মাহফুজা আক্তার, লতা, তুলিসহ অনেকে টুপি তৈরির অর্থ দিয়ে নিজেদের পড়াশোনার ব্যয় মেটাচ্ছেন বলে জানান।
বড়ালু এলাকার হানিফ মিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টুপির সবচেয়ে বড় বাজার রয়েছে চকবাজারে। এছাড়া বায়তুল মোকাররমে রয়েছে আরেকটি বাজার। ঢাকার ফুটপাতগুলোয়ও পসরা সাজিয়ে বসেন টুপি বিক্রেতারা। এসব মার্কেটে যায় রূপগঞ্জের টুপি। তিনি আরও বলেন, আগে টুপির ব্যবসা ভালো ছিল। এখন মেশিনে কাপড়ের টুপি তৈরি হওয়ায় সুতার টুপির কদর কমে গেছে। তবে যারা চেনেন, তারা হাতের টুপিকেই বেশি মূল্যায়ন করেন। হাতের টুপির সবচেয়ে বেশি ক্রেতা শৌখিন মানুষরা। কারিগররা বলেন, বাহারি নামের টুপি তৈরি করেন তারা। এর মধ্যে তারকা টুপি, হাফলং টুপি, বিস্কুট টুপি, মাকর টুপি, গিট্টু টুপি তৈরি হয় বেশি। একটি গিট্টু টুপি তৈরিতে খরচ পড়ে ৩০ থেকে ৩২ টাকা। আর এ টুপি বিক্রি হয় চকবাজারে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়।